গত মার্চের ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির জীববিজ্ঞানী কাট বোলস্টাড ফিরে এসেছেন অ্যান্টার্কটিক অভিযান থেকে। এই অভিযানে তিনি এক ধরণের নতুন ক্যামেরা সিস্টেম ব্যবহার করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল রহস্যময় ‘কলোসাল স্কুইড’ খুঁজে বের করা। গভীর সমুদ্রে বাস করা এই প্রাণীটির সাঁতার কাটার কোনো ভিডিও এখন পর্যন্ত কেউ ধারণ করতে পারেনি। এই অভিযানেও তিনি প্রাণীটিকে দেখেননি।
তবে অভিযান শেষে জাহাজ থেকে নামার দিন বোলস্টাড একটি ভিডিও সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি গভীর সমুদ্রের সেফালোপড (অমেরুদণ্ডী) বিশেষজ্ঞ। অ্যান্টার্কটিক দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ থেকে ৯ মার্চ ভিডিওটি ধারণ করা হয়। এটি ধারণ করা হয়েছে সাবমারসিবল দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের শিড্ট ওশান ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক নতুন সামুদ্রিক জীব খুঁজতে গিয়ে এই ভিডিও করেছিলেন। এতে দেখা গেছে, একটি ছোট্ট সেফালোপড। গবেষকেরা এই প্রাণীটিকে শনাক্ত করতে বোলস্টাডের সহায়তা চান।
প্রথম মানুষ কলোসাল স্কুইডকে দেখতে পেয়েছে গভীর সমুদ্রে। এদের প্রকৃত আবাসস্থলে সাঁতার কাটতে দেখা গেল প্রথমবারের মতো। এদের বাহু ও টেন্টাকলে থাকে বিশেষ ধরণের চোষক ও হুকের মিশ্রণ।
এটি ছিল প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা, দেহ স্বচ্ছ, সূক্ষ্ম বাহু ও বাদামী দাগযুক্ত একটি প্রাণী। এটি মূলত একটি কলোসাল স্কুইডের বাচ্চা। ভিডিওর ব্যাপারে বোলস্টাড বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেই আমি বুঝতে পারি, এটি কোলাসল স্কুইড হতে পারে’।
এই প্রাণীটিকে প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করা হয় আজ থেকে ১০০ বছর আগে। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এটি দৈত্যাকার স্কুইডের চেয়েও বড় হয়। পৃথিবীর যেকোনো অমেরুদণ্ডী প্রাণীর চেয়ে বড় হতে পারে এটি। লম্বায় ৬-৭ মিটার পর্যন্ত (২৩ ফুট) হয়। ১৯২৫ সালে প্রথম যখন এই প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়, তখন শুধু এর দুটি বাহুর টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। তাও একটি স্পার্ম হোয়েলের পেটে। পূর্ণবয়স্ক স্কুইড সাধারণত গভীর সমুদ্রে থাকে। কখনো বড় স্কুইড ফিশিং বোটের বরশির টানে ওপরে উঠে আসে। তাও হুকে লাগানো মাছ খাওয়ার সময় এদের পাওয়া যায়। কম বয়সী স্কুইডকে জেলেদের জালে ধরা পড়তে দেখা গেছে।
এই প্রথম মানুষ কলোসাল স্কুইডকে দেখতে পেয়েছে গভীর সমুদ্রে। এদের প্রকৃত আবাসস্থলে সাঁতার কাটতে দেখা গেল প্রথমবারের মতো। এদের বাহু ও টেন্টাকলে থাকে বিশেষ ধরণের চোষক ও হুকের মিশ্রণ। এর মাধ্যমে বোলস্টাড নিশ্চিত হয়েছেন, এটি কলোসাল স্কুইড। এতদিন এই প্রাণী ধরা না পড়ার একটি কারণ হলো, বিশাল গভীর সমুদ্র এর আবাসস্থল। এছাড়া এরা হয়তো মানুষ থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে সচেতন।
স্পার্ম হোয়েল মূলত এই স্কুইড শিকার করে। এই তিমি প্রায় দুই কিলোমিটার গভীরে ডুব দিতে পারে। তাই নিজেদের রক্ষা করতে কলোসাল স্কুইডের আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চোখ। পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর চোখ বাস্কেটবলের চেয়েও বড়। কলোসাল স্কুইডের ভিডিওটি করা হয়েছে সাবাস্টিয়ান নামে একটি সাবমারসিবল দিয়ে। এটি শিড্ট ইনস্টিটিউট গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানে ব্যবহার করে। এই ডাইভটি ছিল নিপ্পন ফাউন্ডেশন-নেকটন ওশান সেনসাসের একটি অংশীদারি প্রকল্প।
আজকাল সাবমারসিবলের সহায়তায় সহজেই স্কুইডের ভিডিও দেখা যায়। শত বছর আগে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান এত সহজ ছিল না। তখন তাঁরা তিমির পেটে স্কুইড খোঁজাখুঁজি করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্টেরি বে অ্যাকুয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টিন হাফার্ড। তিনি এই আবিষ্কারের ফলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এই অভিযানে ছিলেন না। তিনি নিজেও সাবমারসিবল ব্যবহার করে গবেষণা করেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের অনুসন্ধান প্রকল্পগুলো খুব মূল্যবান। যেমন, তিনি অক্টোপাসকে পায়ে হেঁটে চলার দৃশ্য দেখেছিলেন একবার। পরে সফট রোবোটিক্স গবেষণায় এটি কাজে লেগেছে। তিনি বলেন, ‘এই বিরল প্রাণীগুলোর ভিডিও আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে। এরা কোথায় থাকে, কোথায় ডিম পাড়ে বা জীবনচক্রের কোন পর্যায়ে কী করে।’
বোলস্টাড বলেছেন, ভিডিওতে দেখা কম বয়সী স্কুইডটি ছিল প্রায় ৬০০ মিটার গভীরে। প্রাপ্তবয়স্ক স্কুইড এখান থেকে আরও অনেক গভীরে বাস করে। অনেক প্রজাতির স্কুইড নিজের শৈশব কাটায় অপেক্ষাকৃত অগভীর পানিতে। স্বচ্ছ দেহ থাকায় হয়তো এরা শিকারির চোখ ফাঁকি দিতে পারে।
এই প্রাণীটিকে প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনা করা হয় আজ থেকে ১০০ বছর আগে। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এটি দৈত্যাকার স্কুইডের চেয়েও বড় হয়। পৃথিবীর যেকোনো অমেরুদণ্ডী প্রাণীর চেয়ে বড় হতে পারে এটি।
আজকাল সাবমারসিবলের সহায়তায় সহজেই স্কুইডের ভিডিও দেখা যায়। শত বছর আগে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান এত সহজ ছিল না। তখন তাঁরা তিমির পেটে স্কুইড খোঁজাখুঁজি করতেন। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ‘ডাইভ স্ট্রিমিং’ লাইভ দেখতে পারেন।
বোলস্টাড বলেন, ‘কখন একটি প্রাপ্তবয়স্ক কলোসাল স্কুইডকে জীবন্ত অবস্থায় এদের প্রকৃত আবাসে তথা গভীর সমুদ্রে দেখব, তার জন্য আমি অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দেখাটা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হুকে আটকানো দানব না হয়ে এই স্বচ্ছ, কাচের ভাস্কর্যের মতো সুন্দর ছানাটি হয়, তাহলে সেটা আরও মুগ্ধ করার মতো হবে। এই ছোট্ট প্রাণ একদিন সত্যিকার দানবে পরিণত হবে, এটা জানাই আমাদের বিস্ময়ের জন্য যথেষ্ঠ।’