ডাইনোসরখেকো কুমির

শিল্পীর কল্পনায় ডাইনোসর খেকো কুমিরছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার আউটব্যাক অঞ্চল। প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বছর আগে কোনো এক দুপুর বেলা। আকাশ থেকে আগুন ঝড়াচ্ছে তপ্ত সূর্য। পেটে খিদেও মোচড় দিচ্ছিলো বুড়ো কুমিরটার। প্রতিদিন যা খেয়ে অভ্যস্ত তার কোনকিছুই নেই চারপাশে। হঠাৎ দূরে দেখা গেল ডাইনোসরের একটা বাচ্চা খেলতে খেলতে নাগালের মধ্য চলে এসেছে। খিদে পেটে অত কিছু চিন্তা করার সময় নেই। তড়িৎ গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো কুমিরটা ডাইনোসরের উপর। কিছুক্ষণের মাঝেই ডাইনোসরটির ঠাঁই হলো কুমিরের পেটে। কিন্তু তরতাজা এই খাবার হজম করার সৌভাগ্য হয়নি। তার আগেই নিজেই পৃথিবীকে চির বিদায় জানায় কুমিরটি।

ঘটনাটি ঠিক এমন ঘটেছিলো কিনা, তা এতকাল পরে জানার সুযোগ নেই। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাগৈতিহাসিক কালের এমন ঘটনার প্রমাণ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওসায়েন্স রিসার্চ সেন্টারের একদল গবেষক।

২০১০ সালে ভূতাত্ত্বিক শিলার গঠনে ডাইনোসরের হাড়ের সন্ধান করছিল দলটি। অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলে এর আগে ডাইনোসরের হাড় খুঁজে পেয়েছিলেন জীবাশ্মবিদরা। সেকারণেই আরও জীবাশ্মের সন্ধান করছিলেন। পেয়েও যান নতুন জীবাশ্ম। কিন্তু এ ধরণের জীবাশ্ম এর আগে দেখেননি তাঁরা।

প্রাগৈতিহাসিক কুমিরের পেটের মাঝে পাওয়া যায় আরেকটি প্রাণীর জীবাশ্ম। গবেষণার পর জানা গেল, পেটের প্রাণীটি ছিলো ছোট্ট একটি ডাইনোসর। উদ্ভিদ-ভোজী এই ডাইনোসরগুলো অরনিথোপড নামে পরিচিত। হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো আঙুলযুক্ত ছিল এদের পা। তবে, আকারে আকৃতিতে বর্তমানের মুরগির সাথেই এদের মিল বেশি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ান এজ অফ ডাইনোসরস মিউজিয়ামের পরিচালক ও জীবাশ্মবিদ ম্যাট হোয়াইট এই অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেন। ডাইনোসরসহ কুমিরের জীবাশ্ম তো বটেই, অস্ট্রেলিয়াতে এ ধরণের ডাইনোসর এই প্রথম পাওয়া গেল বলে জানান তিনি।

গবেষকেরা ডাইনোসর খেকো কুমিরের এই প্রজাতিটির নাম দেন, কনফ্রাক্টোসুকাস সোরাকটোনস (Confractosuchus sauroktonos)। সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়, ডাইনোসর খেকো কুমির।

কনফ্রাক্টোসুকাস সোরাকটোনস মূলত মিঠা পানির কুমির। আবিষ্কৃত নমুনাটির দৈর্ঘ্য আট ফুটেরও বেশি। তবে গবেষকদের মতে, এটি আরও বড় হতে পারে। কারণ, জীবাশ্ম শিলায় প্রায় সম্পূর্ণ মাথার খুলি সহ প্রাণীটিকে পাওয়া গেলেও অনুপস্থিত ছিলো লেজসহ আরও কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অদ্ভুতভাবে এর পেটের ভিতরে অন্যান্য জিনিস সংরক্ষিত ছিলো। এ থেকে তাঁরা ধারণা করেন, কুমিরটি ডাইনোসরটি খাওয়ার কিছু পরেই মারা যায়। কারণটি অবশ্য এখনও অজানা।

সেসময় কুমির খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে ছিল না। তাই কুমিরের খাদ্য তালিকায় ছিলো না অরনিথোপড। অন্তত এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যত প্রমাণ পেয়েছেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাণীদের, সেখান থেকে এমনটাই জানা যায়। তবে একই সাথে গবেষক দলটি মনে করেন, কনফ্রাক্টোসুকাস সোরাকটোনস প্রজাতির কুমিরেরা খাবারের ব্যাপারে খুব বেশি বাছবিচার করত না। সামনে যা পেত, উদর পূর্তি করতে তাই খেয়ে নিত।

অস্ট্রেলিয়ান এজ অফ ডাইনোসরস মিউজিয়ামের পরিচালক ও জীবাশ্মবিদ ম্যাট হোয়াইট এই অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেন। ডাইনোসরসহ কুমিরের জীবাশ্ম তো বটেই, অস্ট্রেলিয়াতে এ ধরণের ডাইনোসর এই প্রথম পাওয়া গেল বলে জানান তিনি।

লক্ষ লক্ষ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ডাইনোসর, কুমির, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিরা একসাথে কীভাবে বাস করত সে সম্পর্কে নতুন এক ধারণা পাওয়া যাবে এই আবিষ্কার থেকে। এমনটাই মনে করছেন গবেষক দলটি। চলতি বছরের জুনে তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে (Gondwana Research)।

বর্তমানে কুমির ও ডাইনোসরের জীবাশ্মটি অস্ট্রেলিয়ান এজ অফ ডাইনোসরস মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে। যাবেন নাকি একবার দেখতে?

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: গ্রাঞ্জ, অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং, সায়েন্স ডিরেক্ট