দুশ্চিন্তায় কি মাথার চুল পড়ে যায়
দুশ্চিন্তায় মাথায় টাক পড়ে যায় বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। অনেকে আবার পড়াকে বলেন কপাল চওড়া হওয়া। কপাল চওড়া হওয়া নাকি ধনি হওয়ার লক্ষণ। টাক মাথা নিয়ে এরকম নানা গুজব প্রচলিত আছে। সেরকম দুটি গুজব নিয়েই আজকের আলোচনা।
প্রচলিত আছে, টাক পড়া নাকি শুধু মায়ের দিক থেকেই আসে। মানে টাক পড়বে কিনা, তা নাকি নির্ভর করে আপনার নানা বা মামার টাক আছে কিনা, তার ওপর। অর্থাৎ জিনগত সমস্যা। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো প্রমাণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ত্বক বিশেষজ্ঞ জেরি শ্যাপিরো বলছেন, ‘এটা আমার শোনা সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাগুলোর একটা, এবং এটা সত্যি নয়।’
তবে এর মধ্যে একটা প্যাঁচ আছে। টাক পড়ার জন্য দায়ী একটি প্রধান জিন এক্স ক্রোমোজোমে থাকে, যা পুরুষেরা তাদের মায়ের কাছ থেকেই পায়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ চিত্রের মাত্র ছোট্ট একটা অংশ মাত্র। আসলে টাক পড়া বা অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া কোনো নির্দিষ্ট একটি জিনের কাজ নয়। এর পেছনে আছে আপনার বাবা এবং মায়ের থেকে পাওয়া অনেকগুলো জিন। সঙ্গে যোগ হয় আপনার জীবনযাত্রা, হরমোন এবং পরিবেশের প্রভাব।
সুতরাং, আপনার বাবা, দাদা, চাচা বা মামার যদি টাক পড়ার ইতিহাস থাকে, তবে আপনার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এ জন্য শুধু মায়ের পরিবারকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না।
টাক পড়া বা অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া কোনো নির্দিষ্ট একটি জিনের কাজ নয়। এর পেছনে আছে আপনার বাবা এবং মায়ের থেকে পাওয়া অনেকগুলো জিন।
আরেকটি ভুল ধারণা হলো, বেশি দুশ্চিন্তা করলে টাক পড়ে যায়। দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস আমাদের ঘুম নষ্ট করে, হজমে গণ্ডগোল পাকায় ঠিকই, কিন্তু এটা টাক পড়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে না। কারণ, চুল পড়ার জন্য সাধারণত খুব বড় ধরনের মানসিক ধাক্কার প্রয়োজন হয়। যেমন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা, পরিবারে আকস্মিক মৃত্যু বা খুব দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ক্র্যাশ ডায়েটিং করলে টাক পড়তে পারে।
আবার স্ট্রেসের কারণে আমাদের চুল পড়া স্বাভাবিক চক্রটি সাময়িকভাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারে। আমাদের চুলের তিনটি ধাপ আছে। অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন এবং টেলোজেন। আপনি যখন প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকেন, তখন অ্যানাজেন ধাপে থাকা প্রায় ৭০ শতাংশ চুল সময়ের আগেই সরাসরি ঝরে পড়ার ধাপে চলে যেতে পারে! এই অবস্থাকে বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। এতে হুট করে পুরো মাথার চুল পাতলা হয়ে যায়। তবে ভালো খবর হলো, এটি সাময়িক। এটাকে টাক পড়ার লক্ষণ বলা যায় না।
তবে এমনিতেই যদি আপনার টাক পড়ার প্রবণতা থাকে, তবে দুশ্চিন্তা সেই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের টাক পড়ার সমস্যা আছে, তাদের মধ্যে যারা বেশি স্ট্রেসে থাকেন, তাদের চুল অন্যদের চেয়ে দ্রুত পড়ে।