আগুনে পোড়া রোগীদের করণীয় বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ ঘটনায় গত ২২ জুলাই, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। আহতরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুনে পোড়া রোগীদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক মো. আবু হোসেন।

সাধারণত আগুনে পোড়াকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করি। ফার্স্ট ডিগ্রি, সেকেন্ড ডিগ্রি এবং থার্ড ডিগ্রি। এর মধ্যে ফার্স্ট ডিগ্রি এবং সেকেন্ড ডিগ্রিকে সুপারফিসিয়াল বার্ন বলে। আর থার্ড ডিগ্রিকে বলে ডিপ বার্ন।

সুপারফিসিয়াল বার্নের প্রাথমিক চিকিৎসা:

•  পরিধেয় বস্ত্র এবং জুয়েলারি খুলে ফেলতে হবে।

•  আক্রান্ত স্থান স্বাভাবিক পানি বা ঠান্ডা পানির নিচে (খুব বেশি ঠান্ডা বা বরফ নয় এমন) ১০-১৫ মিনিট অথবা ঝরনার নিচে রাখুন।

•  পোড়া স্থানে সাবান দিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করুন।

• পরিষ্কার করার পর আক্রান্ত জায়গায় সিলভার সালফাডায়াজিন জাতীয় মলম ব্যবহার করুন।

• মলম লাগানোর পর পরিষ্কার গজে (স্টেরাইল) আক্রান্ত জায়গায় ব্যান্ডেজ দিন।

• সুপারফিসিয়াল বার্নে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যথানাশক হিসাবে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন নামক ওষুধ সেবন করতে পারেন।

• বার্নে শরীর থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বা বডি ফ্লুইড কমে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রচুর তরল খাবার, জুস বা স্যালাইন পানি পান করুন।

• আক্রান্ত জায়গায় ব্লিস্টার বা ফোসকা পড়তে পারে। নিজ থেকে ফোসকা ফাটিয়ে দেবেন না।

• বাইরে আলোর সংস্পর্শে গেলে আক্রান্ত জায়গা ঢেকে যেতে হবে।

গুরুতর পোড়া বা ডিপ বার্নের ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তাদের জন্য আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি প্রয়োজন হতে পারে প্লাস্টিক সার্জারি এবং অন্যান্য বিশেষায়িত চিকিৎসা।

আরও পড়ুন
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। সোমবার রাতের চিত্র
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ডিপ বার্নের রোগীদের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর ওপর খেয়াল রাখতে হবে :

• রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে অক্সিজেন সরবরাহ করা বা নলের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করা।

• শরীরে তরলের ঘাটতি মেটাতে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া।

• জীবাণু থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য অ্যান্টিসেপ্টিক ব্যবহার করা। নিয়মিত ড্রেসিং করা, প্রয়োজনে অপারেশন করে মৃত টিস্যু অপসারণ করা।

• ক্যালরি ঘাটতি ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য রোগী মুখে খেতে না পারলে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা।

• গুরুতর পোড়ার ক্ষেত্রে স্কিন গ্রাফটিং বা ত্বক প্রতিস্থাপন এবং অন্যান্য প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

• গুরুতর পোড়ার জন্য বিভিন্ন অংশে কার্যকারিতা হ্রাস পেলে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় এবং এই চিকিৎসা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এতে সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন। রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়।

পরিশেষে আমি আহত ও নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি। আহত ও নিহতের পরিবারের সকলকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, পুলিশ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা

আরও পড়ুন