ডেঙ্গু নিয়ে যা জানা জরুরি

সম্প্রতি ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী ১ হাজার ৪৪৭ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯৬ গুণ বেশি। ডেঙ্গু শব্দটির উৎপত্তি, এডিস মশা, ডেঙ্গু ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ ইত্যাদি জেনে নেওয়া যাক

ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম নির্ভরযোগ্য বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ সালে, যখন এই রোগের কারণে সৃষ্ট মহামারির কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা। ১৯০৬ সালে এডিস মশা যে ডেঙ্গুর বাহক, তা নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা

ডেঙ্গু জ্বর হলো মশাবাহিত ডেঙ্গুর জীবাণু দ্বারা সংঘটিত একটি রোগ। এই রোগের প্রথম ধারণা মেলে জিন বংশের (২৬৫-৪২০ সাল) এক চীনা মেডিকেল বিশ্বকোষে।

ডেঙ্গু শব্দের উৎপত্তি নিয়ে সংশয় আছে। স্প্যানিশ ‘কা-ডিঙ্গা-পেপো’, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ শূল বেদনাসহ খিঁচুনির উৎস হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁটাচলার ভঙ্গি দেখতে অনেকটা ডান্ডি বা নৌকার মতো লাগত বলে সেখানে এর নাম ছিল ডান্ডি ফিভার। তবে ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম নির্ভরযোগ্য বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ সালে, যখন এই রোগের কারণে সৃষ্ট মহামারির কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা। ১৯০৬ সালে এডিস মশা যে ডেঙ্গুর বাহক, তা নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। জন বার্টন ক্লেল্যান্ড ও জোসেফ ফ্রাঙ্কলিন সিলারের গবেষণা এই রোগের আদ্যোপান্ত উন্মোচন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

ট্রপিক্যাল-সাবট্রপিক্যাল অঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশি। ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, তাইওয়ান, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ, কিউবা ও কেইম্যান দ্বীপ বাদে ক্যারিবিয়ান দেশগুলো, আফ্রিকা, চিলি, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা বাদে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা হলো এই রোগের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।

১৯৭০ সালের পর এটি শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রায় ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে অনূর্ধ্ব–১৫ বছর বয়সে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে। এর মধ্যে প্রায় ৯৬ মিলিয়ন অসুস্থ হয়, ৫ লাখ লোক হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং প্রতিবছর এর কারণে সাড়ে ১২ থেকে ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ট্রপিক্যাল রোগ হিসেবে ম্যালেরিয়ার পরই ডেঙ্গুর স্থান। ১৯৬০ থেকে ২০১০-এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশে ২০০১-০২ সালে প্রথমবার বিস্তৃতভাবে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমণের উচ্চ হার লক্ষ করা যায় বর্ষাকালে শহর ও উপশহর এলাকার জনগোষ্ঠীতে।

ডেঙ্গুর জীবাণুর চারটি ভাগ বা সেরোটাইপ শনাক্ত হয়েছে। এগুলোর প্রতিটি রোগের পূর্ণ চিত্র তৈরিতে সক্ষম। এগুলোর নাম হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪

ডেঙ্গু ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

এটি এক সূত্রকবিশিষ্ট একধরনের আরএনএ ভাইরাস, যা ফ্ল্যাভিভাইরিডি ও ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত। ওয়েস্টারন নাইল ও ইয়েলো ফিভার অসুখ দুটির ভাইরাসের সঙ্গে এই ভাইরাসের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ভাইরাসের জিনোম বা জিন পদার্থে আছে প্রায় ১১ হাজারের মতো নিউক্লিওটাইডস বেস। এর কোডে থাকে তিন প্রকারের অণু—সি, এম এবং ই। প্রোটিন-ই বা এনভেলপ প্রোটিনের সাহায্যে জীবাণুটি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকোষে আটকে থাকার সুযোগ পায়।

ডেঙ্গুর জীবাণুর চারটি ভাগ বা সেরোটাইপ শনাক্ত হয়েছে। এগুলোর প্রতিটি রোগের পূর্ণ চিত্র তৈরিতে সক্ষম। এগুলোর নাম হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪। কোনো ব্যক্তি যে ধরনের বা টাইপের ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, রোগ থেকে সেরে ওঠার পর সেই ব্যক্তি সেই টাইপের ভাইরাসের বিরুদ্ধে জীবনব্যাপী ও অন্যান্য টাইপের বিরুদ্ধে কেবল সাময়িক রোগপ্রতিরোধী শক্তি লাভ করবে। তাই একবার এক টাইপের ডেঙ্গুর জীবাণু দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে তার অন্যবার বা পরেরবার অন্য টাইপ দ্বারা আবারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য ডেঙ্গু জ্বর জীবদ্দশায় বারবার হতে পারে, তবে ভিন্ন ভিন্ন টাইপ দ্বারা। তবে একসঙ্গে একাধিক টাইপে বা দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা থাকে অনেক বেশি।

এডিস মশা নিয়ে কিছু কথা

কয়েক প্রজাতির স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক, যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি প্রধান। এই স্ত্রী মশা যখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করে, তখন ডেঙ্গুর জীবাণু ওই মশার দেহে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে লালাগ্রন্থিতে অবস্থান নেয়। পরে এই মশা যখন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন সেই ব্যক্তির ত্বকের মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু তার দেহে প্রবেশ করে।

এডিস মশার শরীরে ডোরাকাটা দাগ থাকে বলে এর অন্য নাম ‘টাইগার মশা’। এই মশা চার-পাঁচ দিনের স্বচ্ছ জমানো জলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটায় এবং কৃত্রিম জলাধারে ডিম পাড়তে, মানুষের কাছে থাকতে ও রক্ত পান করতে বেশি পছন্দ করে।

এডিস মশা কামড়ায় মূলত দিনের বেলায়, সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা ও সূর্যাস্তের ঘণ্টাখানেক আগে। একই মশা ইয়েলো ফিভার, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক।

ডেঙ্গু জ্বরের ক্লিনিক্যাল কোর্স

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাধারণত চার থেকে সাত দিনের মধ্যে (সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন) রোগের উপসর্গ দেখা যায়। এই কালপর্বকে বলা হয় ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’। উপসর্গগুলো ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর জীবাণুতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা থাকে উপসর্গবিহীন কিংবা থাকে সাধারণ জ্বরের মতো সামান্য উপসর্গ নিয়ে।

প্রথম সাত দিনে পিসিআর, ভাইরাল অ্যান্টিজেন ডিটেকশন প্রায় নির্ভুলভাবে রোগ শনাক্ত করতে পারে। জ্বরের পাঁচ-সাত দিন পর থেকে আইজি অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয় এবং উপসর্গসহ সেরোলজি টেস্টে এই অ্যান্টিবডির শনাক্তকরণ রোগনিরূপক বলে গণ্য করা হয়

রোগের ধারাবাহিকতা

প্রথম ১-৫ দিন: হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর দেখা দেয়, যা প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে কাঁপুনি, তীব্র মাথাব্যথা, অক্ষিকোটরের পেছনে ব্যথা হয়। হাড়ের জোড়ায় বা গিঁটে ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথার কারণে এই রোগের আরেক নাম ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ বা ব্রেক বোন ফিভার। ১৭৮০ সালে পদার্থবিদ বেঞ্জামিন রাশ এই শব্দ প্রথম প্রয়োগ করেন। অন্যান্য উপসর্গ হলো ক্লান্তি, বমিভাব, বমি। উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি অথবা অসুখের চার-সাত দিনের মধ্যে হামের মতো র‍্যাশ দেখা যায়।

৫-৭ দিন: রক্তক্ষরী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়) দেখা দিতে পারে ৫ থেকে ৭ দিনের মাথায়। এ সময় নাক, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এটাকে চারটি উপপর্বে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।

ক. গ্রেড-১: কোনো রক্তপাতের চিহ্ন নেই, কেবল পজিটিভ টুর্নিকোয়েট টেস্ট (রক্তচাপ মাপার যন্ত্র দিয়ে প্রেশার বাড়ালে ত্বকে রক্ত জমতে দেখা যায়)।

খ. গ্রেড-২: নাক, মাড়ি, দাঁত, মলের সঙ্গে রক্তপাত।

গ. গ্রেড-৩: নাড়ি দুর্বল ও হৃৎস্পন্দন দ্রুত। রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম। পালস প্রেশার লো।

ঘ. গ্রেড-৪: রক্তচাপ ও নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। রোগী শকে চলে যায়।

উল্লেখ্য, গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-কে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডিএইচএফ এবং গ্রেড-৩ ও গ্রেড-৪ ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের আওতাভুক্ত।

ডেঙ্গু জ্বরের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা

প্রথম সাত দিনে পিসিআর, ভাইরাল অ্যান্টিজেন ডিটেকশন প্রায় নির্ভুলভাবে রোগ শনাক্ত করতে পারে। জ্বরের পাঁচ-সাত দিন পর থেকে আইজি অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয় এবং উপসর্গসহ সেরোলজি টেস্টে এই অ্যান্টিবডির শনাক্তকরণ রোগনিরূপক বলে গণ্য করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা হলো রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া। রক্তে অণুচক্রিকার স্বাভাবিক মান প্রতি মিলিলিটার ১,৫০০০০ থেকে ২,৫০০০০। ডেঙ্গু জ্বরে তা দ্রুত কমে যায়। তা যদি প্রতি মিলিলিটারের ২০,০০০-এ থাকে, তবে রোগী মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকিতে পড়ে। কিন্তু রোগীর অবস্থার উন্নতি হতে থাকলে দু-চার দিনের মধ্যে অণুচক্রিকার সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যেতে থাকে।

রক্তে হিমাটোক্রিটের বাড়তি মানও খারাপ। রক্তের প্লাজমা রক্তনালি ভেদ করে বাইরে টিস্যুতে নিঃসরিত হওয়ার কারণে এটা ঘটে। এ ছাড়া রক্তের শ্বেতকণিকা কমে যাওয়া, অ্যালবুমিন মান কমে যাওয়ার মতো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। ক্যাপিলারি লিকেজের কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে বেশির ভাগ সাধারণ ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। প্রায় ৮৫ শতাংশ ডেঙ্গু জ্বর থাকে সাধারণ মাত্রার, বাড়িতে যার চিকিৎসা করানো সম্ভব। যেমন জ্বর লাঘবে প্যারাসিটামল গ্রহণ করতে হবে। অ্যাসপিরিন বা এ-জাতীয় ওষুধ কখনোই জ্বর নিবারণে ব্যবহার করা যাবে না। এতে রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়ে। পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে, বেশি বেশি তরল খাবার ও পানীয় পান করতে হবে।

তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষত জ্বর সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পরে যদি রোগী বেশি অসুস্থতা অনুভব করে, তবে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। মারাত্মক রূপ ধারণ করলে প্রয়োজনে রক্ত বা প্লাজমা সঞ্চালন করতে হয়। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েডের কোনো ভূমিকা নেই। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে বিশেষভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রতিরোধই সমাধান

কয়েকটি দেশে ট্রায়াল হিসেবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো স্বীকৃত টিকা বাজারে আসেনি। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে কার্যকর আদর্শ টিকা তৈরির চেষ্টায় আছেন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা।

যেহেতু এখনো কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো অ্যান্টিভাইরালও কার্যকর নয়, তাই বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো ট্রপিক্যাল অঞ্চলে বসবাসরত বা ভ্রমণরত ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীকে এডিস মশার কামড় থেকে সুরক্ষা দেওয়া। এ ব্যাপারে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতামূলক পদক্ষেপ বেশি জরুরি। যেমন:

ক. মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার রোধ করা। ফুলের টব, ডাবের খোসা, ক্যান, গাড়ির টায়ার, এয়ারকুলার, গর্ত, ছাদ ইত্যাদিতে আটকে থাকা পানি যেন জমে না থাকে, সেদিকে নজর রাখা।

খ. মশক প্রজননের স্থানে কীটনাশক ও ঘরে মশা তাড়ানোর রিপেলেন্টসের ব্যবহার।

গ. ঘরের বাইরে বের হলে মশার কামড় এড়াতে হাত-পা ঢেকে থাকার মতো পোশাক পরিধান করা। শিশুকে হালকা রঙের ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরানো।

ঘ. দিনের বেলায়ও মশারি খাটিয়ে ঘুমানো।

ঙ. পরিবারের কেউ একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মশারির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে অসুস্থ ব্যক্তিকে মশা কামড়ে আবার সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয় বা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে না। তবে ডেঙ্গু রক্তসম্বন্ধীয় সামগ্রী ও অঙ্গদানের মাধ্যমেও পরিবাহিত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের পরিণতি

বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বর উপসর্গহীন থাকে বা শরীরে ব্যথা হলেও জ্বর কয়েক দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যু ১ শতাংশ। কিন্তু ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে ৫ শতাংশের মতো হতে পারে। শিশু ও অল্প বয়সীদের মধ্যে এ রোগের প্রাবল্য বেশি। ডায়াবেটিস ও অ্যাজমার মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভোগা ব্যক্তির জন্য ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগ জটিলতা থেকে চুল পড়ে যাওয়া, মস্তিষ্কের অসুখ, ডিপ্রেশন কিংবা ট্রান্সভার্স মাইলাইটিস ও গিয়েন-বারির মতো স্নায়ুরোগ হওয়ার ঝুঁকি দেখা গেছে।

লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল