দ্য মাঙ্গা গাইড টু মলিকিউলার বায়োলজি

মাঙ্গা গাইড সিরিজের প্রথম বই ‘দ্য মাঙ্গা গাইড টু বায়োকেমিস্ট্রি’ বাজারে এসেছিল ২০২৪ সালের একুশে  বইমেলায়। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর মেলায় এসেছে ‘দ্য মাঙ্গা গাইড টু মলিকিউলার বায়োলজি’। দুটি বইয়ের লেখকই মাসাহারু তাকেমুরা। আর বই দুটি অনুবাদ করেছেন সুজয় কুমার দাশ। 

বাংলাদেশে স্নাতক পর্যায়ে বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি একসঙ্গে একই বিভাগে পড়ানো হয়। বাংলায় এই দুটি বিষয় প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান নামে পরিচিত। জীবদেহের গাঠনিক একক হলো কোষ। জীবকোষ পরিচালিত হয় বিভিন্ন অণুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। এরকম তিনটি অণু হলো: ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিন। এই তিনটি অণুর মাধ্যমে জৈবিক তথ্যের সংরক্ষণ, সঞ্চালন এবং অভিব্যক্তি ঘটে। ডিএনএ জীবকোষের বংশগত তথ্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। সেখান থেকে জিনগত তথ্যের প্রতিলিপি হিসেবে তৈরি হয় এক ধরনের আরএনএ। এই অনুলিপি অনুসারে কোষের সাইটোপ্লাজমে রাইবোজোমের সহায়তায় একটার পর একটা অ্যামিনো অ্যাসিড জোড়া লেগে তৈরি হয় প্রোটিন। ব্যাপারটা বেশ মজার।

কয়েকটা জায়গায় মূল বইয়ের কিছু তথ্যগত বিভ্রান্তিও রয়ে গেছে। যেমন ৮৬ পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে ‘প্রভাবক বিক্রিয়ার কোনো অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না’, আসলে অনেক প্রভাবকই বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। অংশ নিক বা না নিক, বিক্রিয়ার শেষে সে অপরিবর্তিত থাকবে।

গল্প-কার্টুনের ছলে মলিকিউলার বায়োলজির এরকম মজার বিষয় বোঝাতে বইয়ে এমি ও রিন নামে দুটি ক্যারেক্টার তৈরি করা হয়েছে। দুজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। অধ্যাপক মোরো এবং তাঁর সহকারী মার্কাসের সহযোগিতায় তাদের শিক্ষাগ্রহণ চলতে থাকে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির ধারণা ব্যবহার করে কাল্পনিক ‘ড্রিম মেশিনে’ চেপে তাঁরা ঝাঁপ দেয় কোষের ভেতর অদেখা জগতে। বইয়ে মোট পাঁচটি অধ্যায় আছে। কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণু থেকে শুরু করে কোষ বিভাজন হয়ে ডিএনএ অনুলিপন, ট্রান্সক্রিপশন, ট্রান্সলেশন, জেনেটিক কোডের আলোচনা করা হয়েছে। এই জটিল প্রক্রিয়ারগুলো বোঝার সুবিধার্থে মূল বইয়ের ছবিগুলোই এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের শেষ অধ্যায়ে জিন প্রকৌশলের নানাবিধ আধুনিক প্রযুক্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। যেমন রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ, পিসিআর, ক্লোনিং, জিন নকআউট ইত্যাদি। মানবসভ্যতার বেঁচে থাকা এবং বিকাশের সঙ্গে জীববিজ্ঞানের এই শাখাটি এ যুগে যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখছে, তার প্রাঞ্জল বিবরণ এই অধ্যায়ে পাওয়া যাবে। 

আরও পড়ুন

দ্য মাঙ্গা গাইড টু মলিকিউলার বায়োলজি 

লেখক: মাসাহারু তাকেমুরা

অনুবাদ: সুজয় কুমার দাশ

প্রকাশক: অন্বেষা প্রকাশন

প্রচ্ছদ: মূল কভার অনুযায়ী 

পৃষ্ঠা: ২৪০

মূল্য: ৮০০ টাকা

এই বই পড়ার আগে কেউ ‘দ্য মাঙ্গা গাইড টু বায়োকেমিস্ট্রি’ পড়লে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বইয়ের শেষে নির্ঘণ্ট রাখা হলে হয়তো কিশোর-তরুণ পাঠকের পক্ষে বৈজ্ঞানিক পরিভাষা এবং ধারণাগুলো বুঝতে আরও সুবিধা হতো। বইয়ের অনুবাদ মোটামুটি চলনসই। আগের বইয়ের মতো এখানেও অনুবাদক কিছু কিছু শব্দ ইংরেজি রেখে দিয়েছেন, যা অনুবাদ করা সম্ভব ছিলো। বইয়ের ৬৩ পৃষ্ঠায় Symbiosis অর্থে তিনি ‘সমজীবিতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এখানে ‘মিথোজীবিতা’ পরিভাষাটি বেশি প্রচলিত। সিকল সেল এনিমিয়ার আলোচনায় ‘সিকল’ শব্দের বাংলা করা হয়েছে ‘মাকু আকৃতি’। এখানে কাস্তে শব্দটা ব্যবহার করতে হতো, ‘মাকু’ শব্দটা ঠিক নেই। 

অন্বেষা প্রকাশনী বাংলা ভাষায় কমিকসনির্ভর বিজ্ঞানের বই প্রকাশের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সম্পাদনার মান উন্নত করার দিকেও তাদের নজর দেওয়া উচিত।

কয়েকটা জায়গায় মূল বইয়ের কিছু তথ্যগত বিভ্রান্তিও রয়ে গেছে। যেমন ৮৬ পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে ‘প্রভাবক বিক্রিয়ার কোনো অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না’, আসলে অনেক প্রভাবকই বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। অংশ নিক বা না নিক, বিক্রিয়ার শেষে সে অপরিবর্তিত থাকবে। একই পৃষ্ঠায় এনজাইমের নাম এক জায়গায় ‘সিন্থেজ’ লিখলেও আরেক জায়গায় ‘সিন্থেটেজ’ লেখা হয়েছে। এনজাইমবিদ্যার দৃষ্টিতে এই ভুল অত্যন্ত গুরুতর। ‘সিন্থেটেজ’ এনজাইমের কাজের জন্য এটিপি ভেঙে শক্তির দরকার পড়ে। সিন্থেজের তা প্রয়োজন হয় না। এমন আরও কিছু ভুল বইয়ে রয়েছে। তবে কিছু ভুল মূল বইয়েও রয়েছে। অনুবাদের সময় সেগুলো ঠিক করে লিখলে আরও ভালো হতো। 

অন্বেষা প্রকাশনী বাংলা ভাষায় কমিকসনির্ভর বিজ্ঞানের বই প্রকাশের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সম্পাদনার মান উন্নত করার দিকেও তাদের নজর দেওয়া উচিত। চমৎকার প্রচ্ছদ, ভালো মানের পৃষ্ঠায় অত্যন্ত জটিল বিষয়ের এমন ঝরঝরে অনুবাদ পড়তে পড়তে উল্লেখিত সম্পাদনাগত ত্রুটিগুলো চোখের পীড়া দেয়। এই সমস্যাগুলো অতিক্রম করে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা আরও সমৃদ্ধ হোক, এই প্রত্যাশায় এখানেই শেষ করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন