শরীর ঘামে কেন

ঘামের কারণে দেহে দুর্গন্ধ হয়

শারীরিক শ্রমে আমরা একটুতেই ঘেমে উঠি। আবার গরমের দিনে দেহ থেকে এমনিতেও বেরিয়ে আসে ঘাম। শরীরে একধরনের অস্বস্তি শুরু হয়। দুর্গন্ধও হয় দেহে। তারপরও শরীরের জন্যই এটা দরকারি। কারণ দেহে প্রতিদিন যে তাপ তৈরি হয়, তা ঘাম হওয়ার কারণেই আমরা সহ্য করতে পারি। ঘামের মাধ্যমেই দেহের অতিরিক্ত তাপ দেহ থেকে বেরিয়ে যায়, দেহ রাখে ঠান্ডা।

আরও ভালোভাবে বললে, মানবদেহের দুই-তৃতীয়াংশ পানি। এ পানির বড় একটি অংশ দেহকে ঠান্ডা রাখতে ঘামের মাধ্যমে বের হয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করা উচিত। দৌড়ালে বা কোনো শারীরিক কাজ করলে শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে শরীরের ঘাম। কারণ দৌড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি খাদ্য পুড়িয়ে পাওয়া যায়। তাই দেহে তৈরি হয় প্রচুর তাপ। এ তাপ কমাতে ঘাম অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

মানবদেহের দুই-তৃতীয়াংশ পানি। এ পানির বড় একটি অংশ দেহকে ঠান্ডা রাখতে ঘামের মাধ্যমে বের হয়। ক সে কাজটি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রায় দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজকারবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বা কম হলে দেহে নানান সমস্যা দেখা দেয়। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। এমনকি হতে পারে মৃত্যুও। কাজেই দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

ত্বক সে কাজটি করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনি যদি পরিশ্রম করেন, তাহলে দেহে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয়। দেহের সেই তাপ কমাতে অটোমেটিক স্প্রিংকলার সিস্টেম চালু করে দেহ। আধুনিক বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাতে সিলিং থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে পানি বেরিয়ে আসে, এটাও কিছুটা ওরকম। আসলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্ক ত্বকের ঘামগ্রন্থিগুলোতে সংকেত পাঠায়। তাতেই টিউবের মতো অতি সরু ঘামনালী থেকে পানি বেরোতে থাকে। ত্বক ভিজে ঠান্ডা হতে থাকে। এই পানিই ঘাম। ঘাম বেরিয়ে আসার জন্য আপনার সারা দেহে এরকম অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। সে অর্থে আমাদের ত্বক ঝাঁঝরি বা চালুনির মতো।

আরও পড়ুন
বিজ্ঞানীদের হিসেবে, মানবদেহে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখেরও বেশি ঘামগ্রন্থি আছে। ঘামে সাধারণত পানি ও লবণ থাকে। সবসময়ই কিছু না কিছু ঘাম বের হয়।

বিজ্ঞানীদের হিসেবে, মানবদেহে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখেরও বেশি ঘামগ্রন্থি আছে। অ্যাক্রাইন এবং এপ্রোক্রাইন নামের এসব গ্রন্থি দুভাগে বিভক্ত। সাধারণত অ্যাক্রাইন গ্রন্থি থাকে কপাল ও হাত-পায়ের তালুতে। আর এপোক্রাইন গ্রন্থি থাকে চুলের গোড়ায়। এসব গ্রন্থি দিয়েই দেহ থেকে ঘাম বের হয়।

ঘামে সাধারণত পানি ও লবণ থাকে। সবসময়ই কিছু না কিছু ঘাম বের হয়। এমনকি শীতকালেও মানুষ ঘামে। কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় সাধারণত শীতকালে শরীরে ঘাম বোঝা যায় না। এমনিতে ঘামের কোনো গন্ধ নেই। কিন্তু ঘামার পর আমাদের দেহে বসবাস করা কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া সেগুলো জুস হিসেবে খেয়ে টিকে থাকে। সেগুলো পান করে এরা যে রাসায়নিক নিঃসরণ করে, সেটাই দেহের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। ফলে দেহ থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হতে থাকে।

গরমের দিনে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তা পূরণ করতে তাই প্রচুর পানি পান করা দরকার। তা যদি না করেন, তাহলে পানিশূন্যতার আশঙ্কা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন