ডিম সেদ্ধ করলে শক্ত হয়ে যায় কেন

আদর্শ খাদ্যের তালিকায় মুরগির ডিমের অবস্থান একদম প্রথম সারিতে

ডিম আগে, নাকি মুরগি আগে—তা নিয়ে বির্তক আছে। কিন্তু খাবার হিসেবে ডিম যে আদর্শ, এ নিয়ে কোনো বির্তক নেই। আদর্শ খাদ্যের তালিকায় মুরগির ডিমের অবস্থান একদম প্রথম সারিতে। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনে সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকে একে সুপারফুডও বলেন। ভারতের টিভি চ্যানলগুলোতে প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনের কারণে একটা কথা বেশ জনপ্রিয়: ‘সানডে অর মানডে, রোজ খাও আন্ডে।’

অনেকেই ডিম সেদ্ধ করে খেতে পছন্দ করেন। কাঁচাও খান কেউ কেউ। হাফ বয়েল, ফুল বয়েল, অমলেট, মামলেট ইত্যাদি কতভাবেই তো ডিম খাওয়া যায়। সবারই জানা আছে, ডিমে তাপ দিলে (ভাজা বা সেদ্ধ) করলে তা শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু কেন হয়?

আরও পড়ুন
সাদা অংশের মূল উপাদান প্রায় ৯০ ভাগ পানি ও ১০ ভাগের মতো প্রোটিন। এই প্রোটিনগুলোর নাম অ্যালবুমিন, মিউকোপ্রোটিন এবং গ্লোবুলিন।
খোসাসহ ধরলে ডিমের তিনটি অংশ। খোসা, ভেতরের সাদা অংশ ও কুসুম।

খোসাসহ ধরলে ডিমের তিনটি অংশ। খোসা, ভেতরের সাদা অংশ ও কুসুম। ডিমের শক্ত খোসা ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে গঠিত। সে কারণেই বেশির ভাগ ডিমের খোসা দেখতে সাদা। খোসার ভেতরে থাকে দুটি আলাদা অংশ। তরলের মতো থলথলে সাদা অংশ এবং কুসুম। কুসুমটাকেও প্রায় তরলের মতো থলথলে বলা যায়। এই দুটি অংশের মাঝখানে একটা পর্দা থাকে। দুটি অংশ আলাদা থাকে পর্দার কারণে। তবে পর্দার দুই পাশের কণাগুলো এপাশে বা ওপাশে যেতে পারে মুক্তভাবে। সাদা অংশের মূল উপাদান প্রায় ৯০ ভাগ পানি ও ১০ ভাগের মতো প্রোটিন। এই প্রোটিনগুলোর নাম অ্যালবুমিন, মিউকোপ্রোটিন এবং গ্লোবুলিন। এ অংশে লিপিড বা ফ্যাট থাকে না বললেই চলে। গোটা ডিমের ৫৬ ভাগ প্রোটিন থাকে এই সাদা অংশে। অন্যদিকে হলুদ কুসুমের মধ্যে রয়েছে লিপিড, ভিটামিন (চর্বিদ্রব্য, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে), খনিজ পদার্থ ও অন্যান্য প্রোটিন। কারণ ভ্রূণের বেড়ে ওঠার জন্য এগুলো দরকারি।

আরও পড়ুন
ডিমের সাদা অংশের প্রোটিনগুলোর কাঠামো গ্লোবুলার। একে তুলনা করা যায় টেলিফোন বা হেডফোনের প্যাঁচানো তারের সঙ্গে।

ডিমকে উত্তপ্ত করলে শক্ত হয়ে যায় মূলত এই তরলগুলোর কারণে। তাপে ডিমের ভেতরের এই তরলগুলোতে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ এই পরিবর্তন দেখা যায় ডিমের প্রোটিনগুলোতে। প্রোটিন আসলে অ্যামিনো এসিডের সমাহার। অর্থাৎ অনেকগুলো অ্যামিনো এসিড শেকলের মতো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা প্রোটিন গঠন করে। ডিমের সাদা অংশের প্রোটিনগুলোর কাঠামো গ্লোবুলার। একে তুলনা করা যায় টেলিফোন বা হেডফোনের প্যাঁচানো তারের সঙ্গে। ডিমে তাপ দিলে প্রথমেই এই শেকলগুলোর বন্ধন বা প্যাঁচ খুলে যায়। তারপরই অন্য প্রোটিনগুলোর সঙ্গে নতুন শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। তাতে পরস্পরের মধ্যে আরও জটিল প্যাঁচ তৈরি হয়। হেডফোনের তার যেমন নিজের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, অনেকটা সেরকম। এতে কুসুম এবং ডিমের সাদা অংশ জেলের মতো নমনীয় কিন্তু কঠিন একটা পদার্থে পরিণত হয়। ঠান্ডা হওয়ার পর এসব বন্ধন আরও শক্ত হয়ে যায়। ফলে ডিম সিদ্ধ করলে ওরকম শক্ত হয়।