মস্তিষ্ক কি একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে
তরুণদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ভিডিও গেম থেকে শুরু করে হাজার রকমের ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে ওরা এখন দিনরাত ব্যস্ত। সারাক্ষণ মুঠোফোন টিপছে। অভিভাবকেরা চিন্তিত, মুঠোফোনে আকৃষ্ট হয়ে ওদের চোখ নষ্ট তো হবেই, এমনকি মাথাও নষ্ট হতে পারে। লেখাপড়ার তো বারোটা বাজবেই! কিন্তু বাস্তবে অবস্থা ততটা খারাপ নয়। এটা ঠিক যে নেশার মতো মুঠোফোনে আকৃষ্ট হলে কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু কিছু মোবাইল অ্যাপে বুদ্ধি খাটিয়ে সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থাকলে ক্ষতি নেই, বরং মস্তিষ্কের উন্নতিও হয়। বয়স্ক অভিভাবকেরা হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু নেটজেন বা ইন্টারনেট জেনারেশন মহানন্দে ফোন চালাচ্ছে। এতে তাদের মনের আনন্দ যেমন বাড়ে, তেমনি মস্তিষ্কের দ্রুত চিন্তাশক্তির সক্ষমতাও বাড়ে। কারণ, এ ধরনের অ্যাপে একসঙ্গে তিন থেকে চারটা অপশন তুলনামূলক বিচার–বিশ্লেষণ করে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন ধরা যাক, এক তরুণ মজার গেম খেলছে। গভীর বনে সে হারিয়ে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। একদিক থেকে আসছে বাঘ, অন্যদিক থেকে সিংহ, পাশের জলাভূমিতে কুমির, গাছে সাপ ফণা তুলে আছে। প্রাণ রক্ষা করবে কীভাবে? তার হাতে শিকারের জন্য বন্দুক আছে। কিন্তু কার দিকে সে গুলি ছুড়বে? এই সময় তাকে একসঙ্গে কয়েকটা বিষয় হিসাব করতে হয়। বাঘ কাছে, না সিংহ? কুমিরটা কত দূরে? গাছের ডালে আশ্রয় নিলে সে কতটা সময় পাবে প্রাণ রক্ষায়? সেখানে আবার আছে সাপ। মনে মনে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে বুদ্ধি করে আরেকটি উপাত্ত যোগ করে।
কে কত দূর আছে এবং কোন দিক বিপদমুক্ত হলে সে দ্রুত নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবে। বাঘ একটু দূরে, কিন্তু তার দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করলে যে আওয়াজ হবে, তাতে সিংহ হয়তো ভয় পেয়ে সরে যাবে। এর সুবিধাটা হলো, বাঘের দিকের অংশটা বিপদমুক্ত হলে তার নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এসব দিক বিবেচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটা করতে হয় মুহূর্তের মধ্যে। তার মানে মস্তিষ্ককে একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের উপকার হতে পারে। রুবিকস কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতাও তরুণদের চিন্তাশক্তিকে সুতীক্ষ্ণ করে। মাত্র কয়েক মিনিটে রুবিকস কিউব মেলানো যে–সে কথা নয়। একজন তরুণ চোখ বন্ধ করে রেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে রুবিকস কিউব মেলাতে পারে! এসব খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ‘মাল্টিটাস্কিং অ্যাবিলিটি’ বা একই সময়ে একাধিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার সক্ষমতা অর্জন করে। এটা তরুণদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোনো জটিল বিষয়ে চৌকস করে তোলে। একজন কলেজছাত্রের দক্ষতা যাচাই করে দেখা গেছে, এ ধরনের চর্চার ফলে তিনি অন্যদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বিষয় বেশি মনে রেখে একসঙ্গে কাজ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়লে এই উপকারটুকু হয়তো পাওয়া যাবে না। আজকাল তরুণেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় একসঙ্গে তিন থেকে চারটা কাজ করতে পারে। যেমন আলোচনায় অংশগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য মনে রাখা, একই সঙ্গে ফেসবুক চেক করা, আবার কানে কর্ডলেস ইয়ারফোনে গান শোনা। কেউ কিছু মনে করে না, কারণ এটাই এখন চল হয়ে গেছে। এটা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে।
