পর্যায় সারণির ১১২তম মৌলের নাম কোপার্নিসিয়াম। এর প্রতীক Cn। পারমাণবিক সংখ্যা ১১২। এদের শুধু গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়, প্রকৃতিতে এখনও এর দেখা মেলেনি। আসলে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় মাত্র ৯২টি মৌল—হাইড্রোজেন থেকে ইউরেনিয়াম— বাকি সব কটিই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিমভাবে।
কোপার্নিসিয়াম প্রথম তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৬ ফ্রেব্রুয়ারি। সেটি করেছিলেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। জার্মানির ডামস্ট্যাট শহরের জিএসআই হেলমঞ্জ সেন্টার ফর হেভি আয়ন রিসার্চ গবেষণাগারে কাজটি শুরু করেন তাঁরা। এ সময় জিংক-৭০ বা দস্তা এবং লেড-২০৮ বা সিসার মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেবার কোপার্নিসিয়ামের মাত্র একটি পরমাণু তৈরি করা সম্ভব হয়।
২০০০ সালের মে মাসেও একইভাবে কোপার্নিসিয়াম-২৭৭-এর আরও কিছু পরমাণু সংশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছিল। মৌলটি আবিষ্কারের আগেই পর্যায় সারণিতে এর ইকা-মার্কারি বা আনআনবিয়াম নাম অস্থায়ীভাবে ঠিক করে রাখা হয়েছিল। কোপার্নিসিয়াম নামকরণ করা হয় আরও অনেক পরে।
২০০৯ সালের দিকে জার্মানির জিএসআই দলকে একটা স্থায়ী নাম নির্ধারণের পরামর্শ দেয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি (আইইউপ্যাক)। সে বছর ১৬ জুলাই ছিল পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাসের ৫৩৭তম জন্মদিন। তাঁর সম্মানে নতুন মৌলটির নাম কোপার্নিসিয়াম রাখার প্রস্তাব দেয় জার্মান দল। এর প্রতীক প্রস্তাব করা হয় Cp। কিন্তু এককালে অন্য একটি মৌলের নাম রাখা হয়েছিল ক্যাসিওপিয়াম (বর্তমানে এটি লুটেটিয়াম নামে পরিচিত), যার প্রতীক ছিল Cp। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে কোপার্নিসিয়ামের প্রতীক Cn দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এখন পর্যন্ত কোপার্নিসিয়ামের ৭টি আইসোটোপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত জানা সব কটি আইসোটোপই অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয়। সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ কোপার্নিসিয়াম-২৮৫। এর অর্ধায়ু মাত্র ৩০ সেকেন্ড।
পর্যায় সারণির এই পর্যায়ের মৌলগুলো খুব ভারী। সে কারণে এদের বলা হয় সুপারহেভি এলিমেন্ট বা অতিভারী মৌল। ফলে এদের আচার-আচরণও অতি অদ্ভুত। এর অন্যতম উদাহরণ কোপার্নিসিয়াম। পর্যায় সারণিতে এর অবস্থান অনুসারে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়, কোপার্নিসিয়াম হবে শক্ত ধাতব মৌল। কিন্তু গণনা থেকে দেখা গেছে, এটি উদ্বায়ী তরল পদার্থ। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, এটি আসলে আচরণ করে নিস্ক্রিয় গ্যাসের (নোবেল গ্যাস) মতো। রিলেটিভিস্টিক ইফেক্টের কারণে এমনটি হয়। কোপার্নিসিয়ামের নিউক্লিয়াস এত বেশি ভারী যে এর চারপাশের ইলেকট্রনগুলোকে নিউক্লিয়াসের অনেক কাছে টেনে আনে। এতে ইলেকট্রনগুলো আলোর কাছাকাছি গতিতে চলাচল করে। ফলে এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় কোপার্নিসিয়ামের আচরণে।