ডামস্ট্যাটিয়াম নামটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। আজ দেখা যাক, ডামস্ট্যাটিয়াম শব্দটি কী করে আমাদের হলো?

ডামস্ট্যাটিয়ামডামস্ট্যাটিয়াম ডট ডিই

পর্যায় সারণির ১১০তম মৌলের নাম ডামস্ট্যাটিয়াম। এটি প্রথম কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় জার্মানির ডামস্ট্যাট শহরের জিএসআই হেলমঞ্জ সেন্টার ফর হেভি আয়ন রিসার্চে। ৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি একীভূত হওয়ার আগে এটি ছিল পশ্চিম জার্মানির নামকরা গবেষণাগার। এর আগেও বোরিয়াম (১০৭তম মৌল), হ্যাসিয়াম (১০৮তম), মাইটনেরিয়াম (১০৯তম) আবিষ্কৃত হয়েছিল এই গবেষণাগারে। হ্যাসিয়াম নামটিও রাখা হয়েছে এই গবেষণাগারটি জার্মানির যে প্রদেশে অবস্থিত, তার লাতিন নামানুসারে।

যা-ই হোক, ডামস্ট্যাটিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৯৪ সালের ৯ নভেম্বর। সেখানকার একদল বিজ্ঞানী একটা হেভি আয়ন অ্যাক্সিলারেটরে সীসা-২০৮ লক্ষ্য করে নিকেল-৬২ ছুড়ে মারেন। দুটোর সংঘর্ষ ঘটিয়ে এ মৌল তৈরি করেন তাঁরা। এর মাধ্যমে ডামস্ট্যাটিয়ামের মাত্র একটি পরমাণু শনাক্ত করা হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যে আরও দুটি পরমাণু তৈরি করতে সক্ষম হয় ওই বিজ্ঞানী দল।

ডামস্ট্যাটিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৯৪ সালের ৯ নভেম্বর। সেখানকার একদল বিজ্ঞানী একটা হেভি আয়ন অ্যাক্সিলারেটরে সীসা-২০৮ লক্ষ্য করে নিকেল-৬২ ছুড়ে মারেন। দুটোর সংঘর্ষ ঘটিয়ে এ মৌল তৈরি করেন তাঁরা

এর আগে দুবনার পারমাণবিক গবেষণাগারে রুশ বিজ্ঞানীরাও মৌলটি তৈরির চেষ্টা চালান। তবে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে ১৯৯৫ সালে লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবে একই চেষ্টা চালান মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তবে ওই মৌলটিই তৈরি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অনামা এবং অনাবিষ্কৃত মৌলগুলোর জন্য পর্যায় সারণির জনক দিমিত্রি মেন্ডেলিভের নামকরণ পদ্ধতি অনুসারে এ মৌলের নাম হওয়া উচিত এক-প্লাটিনাম। কারণ পর্যায় সারণিতে প্লাটিনামের ঠিক নিচেই এই মৌলের অবস্থান। ১৯৭৯ সালে আইইউপিএসি-এর সুপারিশ অনুসারে এই মৌলটির সাময়িক নাম দেওয়া হয়েছিল আন-আননিলিয়াম। এর সংকেত প্রস্তাব করা হয়েছিল Uun।

অবশ্য মৌলটির জন্য নিজেদের মতো আলাদা আলাদা নাম প্রস্তাব করে জার্মান, রুশ ও মার্কিন বিজ্ঞানী দল। মার্কিন দল মৌলটির নাম প্রস্তাব করে হ্যানিয়াম। জার্মান রসায়নবিদ অটো হানের সম্মানে এ নাম। কথিত আছে, রসিকতা করে এর নাম পুলিশিয়াম রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কারণ জার্মানির ইমার্জেন্সি ফোন নম্বর ১১০। যা-ই হোক, ফরাসি পদার্থবিদ হেনরি বেকরেলের সম্মানে মৌলটির নাম বেকরেলিয়াম প্রস্তাব করে রুশ দল।

এদিকে জার্মান বিজ্ঞানীরা এ মৌলের নাম প্রস্তাব করে ডামস্ট্যাটিয়াম (Darmstadtium)। জার্মানির গবেষণাগার যে শহরে অবস্থিত, সেই ডামস্ট্যাট (Darmstadt) শহরের নামেই দেওয়া হয় এ প্রস্তাব। নাম নিয়ে এ বিতর্কের অবসান হয় ২০০১ সালে। সে বছর মৌলটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব জার্মান বিজ্ঞানী দলকে দেয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি (আইইউপিএসি)। পাশাপাশি তাদের দেওয়া নামও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কারণ মৌলটির প্রথম আবিষ্কারক তারাই।

 ডামস্ট্যাটিয়ামের সংকেত Ds। এটি অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় মৌল। এখন পর্যন্ত ১১টি আইসোটপের খোঁজ মিলেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটপ ডামস্ট্যাটিয়াম-২৮১, যার অর্ধায়ু মাত্র ১৪ সেকেন্ড। ক্ষণস্থায়ী হওয়ার কারণে এ মৌল সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।

আরও পড়ুন