গুণের আরও সহজ কৌশল

গত পর্বে একটা শর্ত ছিল। বলেছিলাম, বৃত্তের অঙ্কদুটির গুণফল ১০-এর চেয়ে বেশি হলে গুণের সহজ কৌশলের নিয়ম খাটবে না। তাহলে সেই গুণগুলো কীভাবে করবে? সেটাই দেখাবো আজকে। যারা আগের পর্বটি (গুণের সহজ কৌশল) পড়োনি তাঁরা ওই পর্বটি পড়ে এখানে থেকে শুরু করতে পারো। তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।

আজকের পর্বে আমরা নিয়ম সামান্য পরিবর্তন করবো। গত পর্বে ৭ × ৮ করে দেখিয়েছি কীভাবে ৫৬ হয়। আজকের নতুন নিয়মটাও তাই এই গুণটি দিয়েই শিখবো।  তার আগে একটু মনে করিয়ে দেই, আগের পর্বে আমরা যে কোনো সংখ্যার সঙ্গে ১০-এর তুলনা করতাম। অর্থাৎ, ৭ থাকলে হিসাব করতাম আর কতো হলে ১০ হবে। এই ১০-কে আজকে আমরা বলবো রেফারেন্স নাম্বার। থিয়ার কথা নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আছে। আমার ভাতিজী। গণিতের নাম শুনলে যার গাঁ গরম লাগে। ও রেফারেন্স নাম্বারের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু যখন বললাম, এতে তোমার বুঝতে সুবিধা হবে, তখন খানিকটা শান্ত হলো। যাই হোক, রেফারেন্স নাম্বার ১০-কে আমরা নিচের চিত্রের মতো বামপাশে লিখে রাখবো।

আরও পড়ুন

এবার আগের পর্বের মতোই আমরা ১০ থেকে প্রথমে ৭ বিয়োগ করবো। তারপর ১০ থেকে বিয়োগ করবো ৮। তাহলে নিচের চিত্রের মতো উত্তর পাবো ৩ ও ২।

এবার কোনাকুনি ৭ থেকে ২ বিয়োগ বা ৮ থেকে ৩ বিয়োগ করলে উত্তর পাবো ৫। সমান চিহ্নের ডানপাশে ৫ বসিয়ে দেই।

ওপরে সামান্য একটা পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। সেই পরিবর্তনটা এখানে। সমান চিহ্নের ডানপাশে যে ৫ পেয়েছি তার সঙ্গে রেফারেন্স নাম্বার গুণ করতে হবে। অর্থাৎ, ৫-এর সঙ্গে ১০ গুণ করলে হবে ৫০। যেহেতু আগের থেকে ৫ আছেই, সুতরাং ৫-এর পরে একটা শূন্য বসালেই হবে ৫০। অথাব আরও সহজে এখানে ৫-এর সঙ্গে রেফারেন্স নাম্বার গুণ করে সেটাই সব সময় বসাতে হবে। আগে যা লেখা থাকবে তা বাদ। কিন্তু এখানে বলে রাখি, তুমি সব সময় ডানপাশে একটা শূন্য বসালেই হবে। কারণ ১০ দিয়ে যে কোনো সংখ্যাকে গুণ করলে গুণফলের সঙ্গে একটা শূন্যই শুধু যোগ হবে। যাহোক, লিখলাম ৫০।

এবার বৃত্তের ভেতরের অঙ্ক দুটি গুণ করো। ৩-এর সঙ্গে ২ গুণ করলে হবে ৬। এই ৬ বসিয়ে দিতে হবে ৫০-এর ঠিক নিচে। নিচের চিত্রটা দেখ।

এভাবে রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে সহজে গুণ করা যায়। থিয়া আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, চাচ্চু, আগের নিয়মটাই তো ভালো ছিল। আবার নতুন করে একটা কৌশল কেন শিখতে যাবো। এটা আমি শিখতে চাই না। তখন ওকে আগের নিয়মানুসারে ৬ × ৭ করতে বললাম। একই নিয়মে গুণটা করে আঁতকে উঠলো থিয়া। বললো, চাচ্চু দেখো উত্তর তো ৩১২। হে… হে… তোমার নিয়মটা কাজ করছে না।

থিয়াকে বললাম, এ জন্যই তো এই নতুন নিয়মটা শিখতে হবে তোমাকে। আগের পর্বে যে একটা শর্তের কথা বলে রেখেছিলাম। এই হলো সেই শর্ত। এবার কথা না বাড়িয়ে চলো ৬ × ৭ গুণটা করে দেখাই। কিন্তু থিয়ার তো স্বভাব প্রশ্ন করা। সে জিজ্ঞেস করলো, আগে আমাকে বলো তোমার এই নিয়ম কেন কাজ করবে না? থিয়াকে যে উত্তরটা দিয়েছিলাম তোমাদেরও সেটা জানিয়ে রাখি।

আমরা সব সময় যেকোনো অঙ্ককে তুলনা করেছি ১০-এর সঙ্গে। অর্থাৎ, প্রথম পর্বেও আমাদের রেফারেন্স নাম্বার ছিল ১০। বৃত্তের মধ্যে আমরা যে দুটি অঙ্ক লিখবো তার গুণফল কোনোভাবেই রেফারেন্স নাম্বার অর্থাৎ, ১০-এর বেশি হতে পারবে না। ১০-এর বেশি হলেই আর খাটবে না আগের পর্বের শর্ত। থিয়াকে বললাম, আর কোনো প্রশ্ন নয়। আগে এই নিয়মটা শিখে তারপর প্রশ্ন। থিয়া অনিচ্ছা শর্তেও রাজি হলো। প্রথমে দেখি আগের নিয়মে সমস্যা কি ছিল।

ওপরের চিত্রের মতো ৬ ও ৭ বসিয়ে নিই। এরপর ১০ থেকে যথাক্রমে ৬ ও ৭ বিয়োগ করলে হবে ৪ ও ৩। নিয়মানুসারে ৬ থেকে ৩ বা ৭ থেকে ৪ বিয়োগ করলে ৩ পাবো। নিচের চিত্রের মতো সমান চিহ্নের ডানপাশে বিয়োগফল ৩ বসিয়ে দিই।

এবার ৪-এর সঙ্গে ৩ গুণ করলে পাবো ১২। সমান চিহ্নের ডানপাশে আছে ৩। আগের নিয়ম অনুসারে ৩-এর পাশে ১২ বসিয়ে দিলে উত্তর হবে ৩১২। নিশ্চই বুঝতে পারছো ৬-এর সঙ্গে ৭ গুণ করলে ৩১২ হবে না। তারমানে উত্তর ভুল হয়েছে। তাহলে উপায়? সেজন্যই দরকার রেফারেন্স নাম্বার। আজকের পর্বের শুরুতেই রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ৭ ও ৮ গুণ করে দেখিয়েছি। ঠিক সেভাবে এখন ৬ ও ৭ গুণ করতে হবে।

শুরুতে রেফারেন্স নাম্বার ১০ লেখা আছে। আগের মতোই ১০ থেকে ৬ ও ৭ বিয়োগকরে যথাক্রমে ৪ ও ৩ বৃত্তে বসিয়ে দেই। এবার ৬ থেকে ৩ বা ৭ থেকে ৪ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হবে ৩। এই ৩-এর সঙ্গে রেফারেন্স নাম্বার ১০ গুণ করলে পাবো ৩০। সমান চিহ্নের ডানপাশে বসিয়ে দেই ৩০। এবার বৃত্তের মধ্যে যে অঙ্কদুটি আছে তার গুণ ফল ১২। এই ১২ বসিয়ে দিতে হবে ৩০-এর নিচে (ওপরের চিত্রের মতো)। তাহলে উত্তর পেয়ে যাবো ৪২।

তুমি যদি ৬ × ৬, ৪ × ৭ বা ৪ × ৮ করতে চাও তাহলে এ নিয়মে ফলো করতে হবে। কারণ, এগুলোর বৃত্তের মধ্যের অঙ্কদুটির গুণফল ১০-এর চেয়ে বেশি হয়।

এবার তুমি নিজে বাসায় এভাবে গুণ করার চেষ্টা করো। তাহলে তুমিও পারবে মুখে মুখে গুণ করতে। আগামী পর্বে তোমাদের বড় গুণ করার সহজ কৌশল শিখিয়ে দেব। আজকে এই গুণগুলো করার চেষ্টা করো।

ক. ৬ × ৭ =

খ. ৭ × ৫ =

গ. ৮ × ৫ =

ঘ. ৮ × ৪ =

ঙ. ৩ × ৮ =

চ. ৬ × ৫ =  

এবার মিলিয়ে দেখতে পারো সমাধান

ক. ৪২

খ. ৩৫

গ. ৪০

ঘ. ৩২

ঙ. ২৪

চ. ৩০

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল