প্রাচীন প্রস্তর যুগ। দুই বন্ধু বাজি ধরেছে। কে সবচেয়ে বড় সংখ্যা বলতে পারে, এই নিয়ে বাজি! প্রথম বন্ধু বলল, এক। এবার দ্বিতীয় বন্ধু বলল, দুই। তারপর প্রথম বন্ধু বলল, তিন। দ্বিতীয় বন্ধু চিন্তায় পড়ে গেল। এরপরে কী? অনেক চিন্তাভাবনা করেও আর কিছু বলতে পারল না। অসহায়ভাবে প্রথম বন্ধুর দিকে চেয়ে বলল, এরপর তো আর সংখ্যা নেই। ঠিক আছে, তুমিই জিতেছ। কী ধাঁধা লাগছে? ভাবছেন, এরপর তো চার হবে। বোকা বন্ধুটি তাহলে কেন বলতে পারল না! আসলে, তার কোনো ভুল নেই। কারণ, ওই সময়ে আর কোনো সংখ্যা আবিষ্কৃত হয়নি।
এই গল্পটির কোনো সত্যতা আছে নাকি পুরোটাই বানানো, তা আর এখন বোঝার উপায় নেই। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে সংখ্যা আবিষ্কার হয়েছে। সংখ্যা অসীম। এর কোনো শেষ নেই। আপনি সারা জীবন গুণেও জোড় সংখ্যার শেষ খুঁজে বের করতে পারবেন না। তেমনি সংখ্যার জগতে এমন অনেক সংখ্যা আছে, যার নামও হয়ত আপনি শোনেননি। সে রকম একটি সংখ্যা হলো আর্মস্ট্রং সংখ্যা।
ধরুন, ১৫৩। এই সংখ্যায় মোট তিনটি অঙ্ক আছে, ১, ৫ ও ৩। যেহেতু সংখ্যায় অঙ্ক আছে তিনটি, সুতরাং পাওয়ার বা সূচকের জায়গায় বসবে ৩। এই সূচক প্রতিটি অঙ্কের ওপরে বসিয়ে, সবগুলোকে যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ১৩+৫৩+৩৩ = ১+১২৫+২৭ = ১৫৩।
আর্মস্ট্রং সংখ্যার বিস্তারিত শুরু করার আগে অঙ্ক ও সংখ্যার পার্থক্যটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ০-৯ পর্যন্ত এই ১০টি চিহ্নকে বলে অঙ্ক। আর এই ১০টি চিহ্নের সাহায্যে তৈরি হয় সংখ্যা। যেমন ২৫৬ লিখতে ২, ৫ ও ৬ অর্থাৎ, তিনটি অঙ্কের সমন্বয়ে লেখা হয়েছে। অবশ্য অনেক সময় অঙ্ককে সংখ্যাকে বলা হয়। কিন্তু সংখ্যা কখনো অঙ্ক হয় না। বইয়ের ভাষায় বললে, সব অঙ্কই সংখ্যা, কিন্তু সব সংখ্যা অঙ্ক নয়।
এবার আসি আর্মস্ট্রং সংখ্যায়। যে সংখ্যার প্রতিটি অঙ্কের পাওয়ার বা সূচকের মান ওই সংখ্যার মোট অঙ্কের সমান এবং সূচকসহ সবগুলো অঙ্কের যোগফল ওই সংখ্যার সমান, তাকে আর্মস্ট্রং সংখ্যা বলে। একটু জটিল হয়ে গেল? সহজ করি বুঝিয়ে বলি। একটি সংখ্যায় যতগুলো অঙ্ক আছে, তার সাংখ্যিক মান প্রতিটি অঙ্কের ওপর পাওয়ার বা সূচক হিসেবে বসিয়ে, সবগুলো মান যোগ করলে যদি মূল সংখ্যার সমান হয়, তাহলে সেই সংখ্যাটি হবে আর্মস্ট্রং সংখ্যা। এখনো যারা বুঝতে পারেননি, তাঁদের জন্য একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, ১৫৩। এই সংখ্যায় মোট তিনটি অঙ্ক আছে, ১, ৫ ও ৩। যেহেতু সংখ্যায় অঙ্ক আছে তিনটি, সুতরাং পাওয়ার বা সূচকের জায়গায় বসবে ৩। এই সূচক প্রতিটি অঙ্কের ওপরে বসিয়ে, সবগুলোকে যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ১৩+৫৩+৩৩ = ১+১২৫+২৭ = ১৫৩।
আচ্ছা, একটি সংখ্যা দেখে কি আপনি বলে দিতে পারবেন, সংখ্যাটি আর্মস্ট্রং সংখ্যা কি না? চলুন, চেষ্টা করা যাক। ৫৪৮৮৩৪ সংখ্যাটি কি আর্মস্ট্রং সংখ্যা? এটা বোঝার জন্য প্রথমে গুনতে হবে সংখ্যায় মোট কতটি অঙ্ক আছে? এখানে মোট অঙ্ক ৬টি। সুতরাং, প্রতিটি অঙ্কের ওপরে সূচক হিসেবে বসাতে হবে ৬। যেমন ৫৬+৪৬+৮৬+৮৬+৩৬+৪৬ = ১৫৬২৫+৪০৯৬+২৬২১৪৪+২৬২১৪৪+৭২৯+৪০৯৬ = ৫৪৮৮৩৪। অর্থাৎ এটি একটি আর্মস্ট্রং সংখ্যা। এভাবে যেকোনো সংখ্যাই পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটা আসলে আর্মস্ট্রং সংখ্যা কি না।
এবার পরীক্ষা করে দেখা যাক, ১২২ আর্মস্ট্রং সংখ্যা কি না। ১৩+২৩+২৩= ১+৮+৮= ১৭। তাহলে, ১২২ আর্মস্ট্রং সংখ্যা নয়। ০ থেকে ৯৯৯ এর মধ্যে আর্মস্ট্রং সংখ্যা আছে ৬টি। ০, ১, ১৫৩, ৩৭০, ৩৭১ ও ৪০৭। চলুন, দেখা যাক আসলেই এগুলো আর্মস্ট্রং সংখ্যা কি না।
০ এর জন্য = ০০ = ০
১ এর জন্য = ১১= ১
১৫৩ এর জন্য = ১৩+৫৩+৩৩= ১+১২৫+২৭= ১৫৩
৩৭০ এর জন্য= ৩৩+৭৩+০৩= ২৭+৩৪৩+০= ৩৭০
৩৭১ এর জন্য = ৩৩+৭৩+১৩= ২৭+৩৪৩+১= ৩৭১
৪০৭ এর জন্য = ৪৩+০৩+৭৩= ৬৪+০+৩৪৩= ৪০৭
এছাড়াও আছে ৪ অঙ্কের আর্মস্ট্রং সংখ্যা। যেমন ১৬৩৪, ৮২০৮ ও ৯৪৭৪। প্রতিটি অঙ্কের সূচক দিতে হবে ৪। এরপর সূচকের মানগুলো যোগ করে মূল সংখ্যার সঙ্গে মিলে গেলেই সেটা আর্মস্ট্রং সংখ্যা।
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: জিগসএকাডেমি ডট কম