অবাধ্য রোবটের বনে অভিযান

কখনো ভেবেছেন, প্রকৃতিতে প্রাণীরা কত বিচিত্র উপায়ে বসবাস করে? হাঁসের বাচ্চা ডিম ফুটে বেরিয়েই শিখে নেয়, কীভাবে পানিতে ভাসতে হয়। একটি ছোট্ট পাখি মায়ের ডানা ঝাপটানো দেখে আকাশে উড়তে শেখে। শিকার ধরা থেকে শুরু করে কীভাবে অন্য শিকারী প্রাণীদের থেকে বাঁচতে হয়, প্রতিটি ধাপই তারা ধাপে ধাপে শিখে নেয়। এবার কল্পনা করুন, একটি রোবট বনের পাখিদের আকাশে উড়তে শেখাচ্ছে, শেখাচ্ছে কীভাবে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে বনে বসবাস করতে হয়। কেমন হবে সেটা? এমনই এক দুনিয়ার গল্প নিয়ে দ্য ওয়াইল্ড রোবট। আমাদের কল্পনা যেখানে থেমে যায়, এই অ্যানিমেটেড মুভি ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছে।

গল্পটার শুরু ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে। যখন মানুষের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গী রোবট। ইচ্ছেমতো কাজ অনুযায়ী রোবট অর্ডার করা যায়। এমনই এক সময়ে, রোজাম ইউনিট ৭১৩৪ মডেলের একটি অত্যাধুনিক রোবট পণ্যবাহী জাহাজে করে নতুন গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু এক ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি থেকে রোজ নামের একটি রোবট ভেসে এসে পড়ে এক জনমানবশূন্য, বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ দ্বীপে।

এটা কেবল একটি রোবটের বন্য পরিবেশে টিকে থাকার গল্প নয়, বরং প্রকৃতিতে বসবাস করা প্রাণীদের আবেগ ও প্রকৃতির কিছু অমোঘ সত্যের কাহিনি। যা ছোট থেকে বড় সবার মনে জায়গা করে নেবে।

এসেই বিপদ। খুঁজে পাচ্ছে না কে তাকে অর্ডার করেছে। উপকূলের কাঁকড়া, ভোঁদড়কে জিজ্ঞাসা করে, কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি? সে কারো কথা বোঝে না, আবার অন্যরাও ওর কথা বোঝে না। কী এক বিপদ! এদিকে সবখানে সাড়া পড়ে গেছে যে বনে ঢুকে পড়েছে বড় একটা বিপদ। সব পশুপাখি আতঙ্কে আছে। রোজ যেহেতু সাহায্যকারী রোবট, সেহেতু তার প্রোগ্রামিং অনুযায়ী সে দ্বীপে টিকে থাকার চেষ্টা শুরু করে। তার এআই ও ডেটা প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে দ্বীপের পশুপাখিদের আচরণ, ভাষা এবং চলাফেরার ধরন পর্যবেক্ষণ করে সে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ডাক ও শারীরিক ভাষা ডিকোড করতে শিখে নেয় নিজে নিজে, এমনকি এদের সঙ্গে একধরনের যোগাযোগও করতে পারে। কিন্তু এভাবে তো আর দিন চলে না। তাকে তো ফিরতে হবে নিজ ঠিকানায়।

আরও পড়ুন

একনজরে

মুভির নাম: দ্য ওয়াইল্ড রোবট

পরিচালক: ক্রিস স্যান্ডার্স

ধরন: অ্যানিমেটেড মুভি

প্রকাশকাল: ২০২৪

ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.২

ছোট থেকে বড় সবার মনে জায়গা করে নেবে। অ্যানিমেশন মুভি ভেবে এটাকে তাচ্ছিল্য করার কিছু নেই, কেননা এ মুভি পরিচালনা করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ক্রিস স্যান্ডার্স।

রোজ কি থাকবে সেই পশুপাখিদের সঙ্গে, নাকি ফিরে যাবে নিজ ঠিকানায়? কেননা তার খোঁজে বারবার বনে আসছে অন্য রোবটেরা। এ নিয়েই মুভিটির গল্প। এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো, রোবট ভালো-মন্দ যা-ই করুক, সেটি কি তাকে দেওয়া নির্দেশের বাইরে কাজ করতে পারে? সেটা কি নিরাপদ বা নৈতিক? উল্টো দিকে, একটা রোবট যদি নির্দেশের বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করে, তার ওপর হামলা করা, তাকে থামাতে চেষ্টা করা কতটা নৈতিক? সব মিলে সহজ-সরল, কিন্তু রোমাঞ্চকর গল্প এবং বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন নিয়ে অসাধারণ একটি মুভি দ্য ওয়াইল্ড রোবট

এটা কেবল একটি রোবটের বন্য পরিবেশে টিকে থাকার গল্প নয়, বরং প্রকৃতিতে বসবাস করা প্রাণীদের আবেগ ও প্রকৃতির কিছু অমোঘ সত্যের কাহিনি। যা ছোট থেকে বড় সবার মনে জায়গা করে নেবে। অ্যানিমেশন মুভি ভেবে এটাকে তাচ্ছিল্য করার কিছু নেই, কেননা এ মুভি পরিচালনা করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ক্রিস স্যান্ডার্স। যাঁরা টুকটাক অ্যানিমেটেড মুভি দেখেন, তাঁরা লিলো অ্যান্ড স্টিচ (২০০২), হাউ টু ট্রেন ইওর ড্রাগন (২০১০), টি ক্রডস (২০১৩)-এর মতো মুভিগুলো হয়তো দেখেছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই ক্রিস স্যান্ডার্সের কাজের সঙ্গে পরিচিত। তাঁর প্রতিটি মুভির প্রতিটি চরিত্রই দর্শকদের আকৃষ্ট করে রাখে পুরোটা সময় জুড়ে। তবে কোন সময়ের ঘটনা এটি—সে বিষয়টা মুভিতে অস্পষ্ট। এরকম কিছু বিষয় বাদ দিলে, মুভিটির অ্যানিমেশন মনে প্রশান্তি দেয়, ভালো লাগে দেখতে।

পিটার ব্রাউনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ মুভি অ্যানিমেশনের জগতে এক অনন্য সংযোজন। প্রতিটি ফ্রেমেই নির্মাতাদের কাজ চোখে পড়ার মতো। বন্য পরিবেশের যেসব দিক দেখানো হয়েছে, তা দেখে মনে হয়েছে হয়তো এমনি ঘটনা ঘটে গভীর বনে। অনেকের কাছে দ্য ওয়াইল্ড রোবট-এর রোজকে দেখলে মনে হবে যেন দ্য আয়রন জায়ান্ট-এর সেই দৈত্যাকার রোবটের আধুনিক রূপ।

২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া এ মুভিটির দৈর্ঘ্য ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

আরও পড়ুন