অবসরে দেখতে পারেন যে ১০ সায়েন্স ফিকশন মুভি

অবসরে সায়েন্স ফিকশন দেখতে পছন্দ করেন? কল্পরথে চড়ে ডানা মেলতে চান বিজ্ঞানের মজার সব তত্ত্ব এবং ভিন্ন বাস্তবতায়? তাহলে এই মুভিগুলো আপনার জন্য। এর কোনোটিতে ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারেন মহাবিশ্বের দূরপ্রান্তের কোনো গ্রহে, কিংবা মহাকাশে জীবন বাঁচানোর লড়াই, সময়ের উল্টো দিকে কিংবা ভিন্ন এক মহাজাগতিক সভ্যতায়…

মুভির নাম: ইন্টারস্টেলার

পরিচালক ও লেখক: ক্রিস্টোফার নোলান

ধরন: থ্রিলার, ড্রামা, অ্যাডভেঞ্চার 

প্রকাশকাল: ২০১৪

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.৭

পুরস্কার: সেরা ভিজ্যুয়াল এফেক্টের জন্য অস্কার

ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলার কেবল সাধারণ বিজ্ঞান কল্পকাহিনী মুভি নয়, এটা একটা মাস্টারপিস। ছবিটির গল্প শুরু হয় এমন এক পৃথিবীতে, যেখানে প্রবল ধূলিঝড় ও খাদ্যের অভাব। মানবজাতিকে বাঁচানোর শেষ আশা হিসেবে কুপার নামে এক প্রাক্তন পাইলট বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়েন মহাকাশ অভিযানে। তাঁর মূল লক্ষ্য শনি গ্রহের কাছে খুঁজে পাওয়া একটি ওয়ার্মহোলের (Wormhole) মধ্য দিয়ে ছুটে যাওয়া মহাবিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে, খুঁজে বের করা নতুন কোনো বাসযোগ্য গ্রহ। মুভিতে টাইম ডাইলেশন, ব্ল্যাকহোলের মতো জটিল ও আকর্ষণীয় বৈজ্ঞানিক অনেক বিষয় দেখা যাবে। শেষ পর্যন্ত কুপার কি খুঁজে পায় নতুন কোনো গ্রহ? কী আছে ওয়ার্মহোলের ওপারে? জানতে দেখতে হবে মুভিটি। এই মুভির বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পড়ুন: ইন্টারস্টেলার মুভির নেপথ্যে

মুভির নাম: দ্য মার্শিয়ান

পরিচালক: রিডলি স্কট

লেখক: অ্যান্ডি ওয়েইয়ার

ধরন: অ্যাডভেঞ্চার ড্রামা, সারভাইভাল

প্রকাশকাল: ২০১৫

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.০

২০৩৫ সাল। মার্ক ওয়াটনি (ম্যাট ডেমন) একটি মিশনের অংশ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে যায়। হঠাৎ এক প্রচণ্ড ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে তাদের অভিযান। উড়ে আসা একটি অ্যান্টেনা আঘাত করে ওয়াটনিকে। ছিটকে পড়ে সে। দলের অন্যরা তাকে মৃত ভেবে প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত মঙ্গল গ্রহ ছেড়ে পৃথিবীর দিকে রওনা হয়। ওয়াটনি জ্ঞান ফিরে পেয়ে নিজেকে মঙ্গল গ্রহে সম্পূর্ণ একা আবিষ্কার করে। তার কাছে থাকা খাবার, পানি, অক্সিজেন সীমিত। পৃথিবীতে যোগাযোগের কোনো উপায় নেয়। আদৌ কি সে আর কখনো ফিরতে পারবে পৃথিবীতে? এই পরিস্থিতিতে মঙ্গল গ্রহে সে বাঁচবে কীভাবে? জানতে দেখতে পারেন দ্য মার্শিয়ান। দারুণ এই মুভিটির বৈজ্ঞানিক দিকগুলো যেমন উপভোগ্য, তেমনি মুভির দৃশ্যায়ন, গল্প এবং চমৎকার রসাত্মক উপস্থাপনাও দর্শকের মন যোগাবে।

মুভির নাম: গ্র্যাভিটি

পরিচালক: আলফোনসো কুয়ারোন

ধরন: সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার

প্রকাশকাল: ২০১৩

ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৩১ মিনিটের

আইএমডিবি রেটিং: ৭.৭

নভোচারী ম্যাট কোয়ালস্কির নেতৃত্বে স্পেস শাটল এক্সপ্লোরার পৃথিবীর কক্ষপথে ছুটে যায়। সেখানে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে কিছু মেরামত প্রয়োজন। এই মিশনের এক সদস্য রায়ান স্টোন। পেশায় তিনি মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এটা তাঁর প্রথম মহাকাশ অভিযান। আসলে, কালের আবর্তে নষ্ট হয়ে গেছে হাবল টেলিস্কোপের যোগাযোগ ব্যবস্থা। মিশন কন্ট্রোল থেকে কোনো তথ্যই গ্রহণ করতে পারছে না এটি। রায়ানের কাজ হলো স্যাটেলাইটটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করা। সে জন্য নভোযান থেকে বেরিয়ে কাজে নামলেন ম্যাট ও রায়ান। এ সময় হঠাৎ এক পুরাতন স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় শাটল। মূল নভোযান থেকে আলাদা হয়ে যান এই দুই নভোচারী। পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই, নেই উদ্ধারের কোনো আশা। কী করবেন তাঁরা?

মুভির নাম: অ্যারাইভাল

পরিচালক: ডেনিস ভিলেনিউভ

লেখক: এরিক হাইসেরা

ধরন: সায়েন্স ফিকশন ড্রামা

প্রকাশকাল: ২০১৬ 

ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৭.৯

পুরস্কার: একটি অস্কার

কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, পৃথিবীর ১২টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিশালাকার, ডিম্বাকৃতির ভিনগ্রহী মহাকাশযান অবতরণ করে। এই অপ্রত্যাশিত আগমনের ফলে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় ব্যাপক আতঙ্ক। প্রতিটি দেশ নিজেদের মতো করে এই ভিনগ্রহীদের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করে। মানুষ কি এই এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে? আদৌ কি সেটা সম্ভব? কিন্তু যোগাযোগ করা না গেলে কীভাবে বোঝা যাবে তাদের আগমনের উদ্দেশ্য? এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—কেন এসেছে এসব এলিয়েন পৃথিবীতে? জবাব পেতে দেখুন অ্যারাইভাল

মুভির নাম: টেনেট

পরিচালক ও লেখক: ক্রিস্টোফার নোলান

ধরন: অ্যাকশন, স্পাই, অ্যাডভেঞ্চার, ড্রামা, থ্রিলার

প্রকাশকাল: ২০২০

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৭.৩

পুরস্কার: একটি অস্কার

আমরা টাইম ট্রাভেলের কথা জানি। কোনো মেশিনের সাহায্যে ভবিষ্যতে বা অতীতে যাওয়া। কিন্তু টাইম বা সময়ের দিক কোত্থেকে আসে? আসে এনট্রপি থেকে। তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র বলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বিশৃঙ্খলার পরিমাণ বা এনট্রপি। তাহলে, এনট্রপি কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কি অতীতে যাওয়া সম্ভব? তখন কি বন্দুক থেকে গুলি বেরোবে, নাকি উল্টোভাবে ঢুকে পড়বে বন্দুকের ভেতরে? নিখাদ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, ভয়ংকর ষড়যন্ত্র ও রহস্য সমাধানের লক্ষ্যে ছুটে চলা এবং দারুণ অ্যাকশন। সব মিলিয়ে টেনেট নোলানের আরেকটি অসাধারণ একটা মুভি।

মুভির নাম: দ্য ইলেকট্রিক স্টেট

পরিচালক: অ্যান্টনি রুশো এবং জো রুশো

ধরন: অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, ড্রামা

প্রকাশকাল: ২০২৫

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৪ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৫.৯

অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে ভবিষ্যতে আমাদের কী অবস্থা হতে পারে? রোবট, মানুষ, মানবতা ও প্রযুক্তির সম্পর্ক এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মুভি। দেখে মনে হবে যেন মুভির ক্যানভাসে কেউ আর্ট করছে—চোখে শান্তি পাবেন দর্শক। মিলবে অন্যরকম এক তৃপ্তি।

মুভির নাম: ইনসেপশন

পরিচালক ও লেখক: ক্রিস্টোফার নোলান

ধরন: সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার, হাইস্ট

প্রকাশকাল: ২০১০

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ২৮ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.৮

পুরস্কার: ৪টি অস্কার

মুভিটিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনয় করেছেন একজন এক্সট্র্যাক্টরের। তাঁর কাজ স্বপ্নের গভীরে গিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ভেতর থেকে গোপন তথ্য চুরি করা। এ এক অদ্ভুত হেঁয়ালি। দেখতে দেখতে পাঠক ধাঁধায় পড়ে যাবেন। ভাববেন, আদৌ কি আমরা বাস্তবতাকে আলাদাভাবে বুঝতে পারি? কিন্তু কোনটা স্বপ্ন, আর কোনটা বাস্তব?

মুভির নাম: ওপেনহাইমার

পরিচালক ও লেখক: ক্রিস্টোফার নোলান

ধরন: হিস্টোরিক্যাল পিরিয়ড ড্রামা, জীবনী

প্রকাশকাল: ২০২৩

ব্যাপ্তি: ৩ ঘণ্টা

আইএমডিবি রেটিং: ৮.৩

পুরস্কার: ৭টি অস্কার

রবার্ট ওপেনহাইমার। পারমাণবিক বোমার জনক। পরমাণুবিজ্ঞানে যাঁর কাজ কিংবদন্তীতুল্য। মার্কিন এই বিজ্ঞানীর জীবনের বিশেষ এক সময়—পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং এর ফলাফল নিয়ে চলচ্চিত্রটি বানিয়েছেন ক্রিস্টোফার নোলান। ওপেনহাইমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিলিয়ান মার্ফি। দারুণ এই ছবি নিয়ে আরও জানতে পড়ুন: ওপেনহাইমার: আধুনিক প্রমিথিউসের কাহিনি। কিংবা নিজেই দেখে নিন দ্রুত।

মুভির নাম: ডুন: পার্ট ১ ও ২

পরিচালক: ডেনিস ভিলেন্যুভ

লেখক: ফ্রাঙ্ক হারবার্ট

ধরন: ড্রামা, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, পলিটিকাল

প্রকাশকাল: ২০২১ এবং ২০২৪

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ও ২ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.০ ও ৮.৫

পুরস্কার: অস্কার

ডেনিস ভিলেন্যুভ পরিচালিত ডুন: পার্ট ১ ও পার্ট ২ মুভি দুটি নির্মিত হয়েছে ফ্রাঙ্ক হারবার্টের কালজয়ী উপন্যাস ডুন থেকে। মুভিটি একটি সুদূর ভবিষ্যতের, যেখানে মানবজাতি আন্তঃগ্রহীয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। দেখানো হয়েছে সেখানকার ক্ষমতা, বিশ্বাস, পরিবেশ, সম্পদের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন ও রাজনীতি নানা দিক। এই সব কিছু শুরু হয় আরাকিস গ্রহে পাওয়া মহাবিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ স্পাইসকে কেন্দ্র করে। এই স্পাইস ব্যবহার করে আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণ করা যায়, এটা মানুষের আয়ুও বাড়ায়। একে কেন্দ্র করে যে গল্পের সূচনা হয়, পরতে পরতে তার বিশ্বাসঘাতকতা ও রোমাঞ্চের আখ্যান। মিস না করতে চাইলে শিগগিরই দেখে ফেলুন ডুন

১০

মুভির নাম: ব্লেড রানার ২০৪৯

পরিচালক: ডেনিস ভিলেন্যুভ

ধরন: ড্রামা, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার

প্রকাশকাল: ২০১৭

ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট

আইএমডিবি রেটিং: ৮.০

 

ডেনিস ভিলেন্যুভ পরিচালিত ব্লেড রানার ২০৪৯ একটি নিও-নয়ার সায়েন্স ফিকশন মুভি, যা ১৯৮২ সালের কাল্ট ক্লাসিক ব্লেড রানার-এর সিক্যুয়েল। এটি এমন এক ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যতের গল্প, যেখানে মানুষ ও রেপ্লিক্যান্ট বায়ো ইঞ্জিনিয়ারড কৃত্রিম মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। অসাধারণ ভিজ্যুয়াল রয়েছে মুভিটিতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ