স্বাধীনতা পদক পেলেন সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবক মোবারক আহমদ খান

বিজ্ঞানী মোবারক আহ্‌মদ খান প্রাকৃতিক উপাদান থেকে আবিষ্কার করেছেন পরিবেশবান্ধব নানা ব্যবহারিক পণ্যফাইল ছবি: কবির হোসেন

চলতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান। এটি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। গত ১৫ মার্চ, শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মোবারক আহমদ খান দীর্ঘদিন পাট নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা থাকাকালেই সেলুলোজ থেকে বায়োপলিমার উদ্ভাবনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তিনি। পরে তা থেকে উদ্ভাবন করেন পচনশীল পলিমার ব্যাগ। এটি একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের উপযুক্ত বিকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাগের নাম দেন ‘সোনালী ব্যাগ’। এই সোনালী ব্যাগ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারে পরীক্ষা চালানো হয়। তাতেও মেলে ইতিবাচক ফলাফল। আর বিশ্ব পর্যায়ে এই বিজ্ঞানী পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘জুটম্যান’ নামে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা থাকাকালেই সেলুলোজ থেকে বায়োপলিমার উদ্ভাবনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তিনি। পরে তা থেকে উদ্ভাবন করেন পচনশীল পলিমার ব্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে পলিমার ও তেজস্ক্রিয় রসায়নে পিএইচডি করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। কর্মজীবনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। এখনো এই দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সোনালী ব্যাগের পাশাপাশি জুটিন নামের ঢেউটিন, পাটের তৈরি হেলমেট ও টাইলস ইত্যাদি তৈরি করেছেন।

এসব অবদান ও গবেষণার জন্য কৃতি এই বিজ্ঞানীকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক দেয় ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালে জাতীয় পাট পুরস্কার ও পরের বছর ফেডারেশন অব এশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর স্বপ্ন, পাটের সেলুলোজ থেকে ন্যানো ক্রিস্টাল ও ন্যানো ফাইবার নিয়ে গবেষণা করা। বাংলাদেশে পাটের সম্ভাবনা অনন্ত বলেই তাঁর বিশ্বাস।

আরও পড়ুন
সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’
ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৭ সাল থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালে মোবারক আহমদ খান ছাড়াও আরও ৯ জন এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। কাজী আব্দুল সাত্তার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এ স্বীকৃতি পেয়েছেন। একই ক্ষেত্রে মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক এবং শহীদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন। পাশাপাশি চিকিৎসায় এ সম্মাননা পেয়েছেন হরিশংকর দাশ, সংস্কৃতিতে পেয়েছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ক্রীড়ায় পেয়েছেন ফিরোজা খাতুন এবং সমাজসেবা/জনসেবায় পেয়েছেন অরন্য চিরান, অধ্যাপক মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী এবং এস এম আব্রাহাম লিংকন।

প্রতি বছর ২৬ মার্চ মনোনীতদের হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্তরা পাবেন ৫ লাখ টাকা, আঠারো ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র।