বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কি সত্যিই বিমান হারিয়ে যায়

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এক রহস্যের নাম। কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেলে তৈরি এক জগৎ। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও মানুষের কল্পনা ও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এর অনেক রহস্যের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা থাকলেও কিছু এখনো অজানা, ব্যাখ্যাতীত। সে জন্যই এই জায়গা নিয়ে মানুষের আগ্রহের সীমা নেই। কিন্তু আসলেই কি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যময়? চলুন, বিজ্ঞানের আলোয় যাচাই করে দেখা যাক।

আলোচিত এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত একটি ত্রিভুজাকার অঞ্চল। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ ও পুয়ের্তো রিকো মিলে হলো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এর পরিধি প্রায় পাঁচ লাখ বর্গমাইল।

এই নিখোঁজ হওয়া বিমানগুলো কোথায় গেল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ইউএস কোস্টগার্ড, ডিসকভারি চ্যানেল ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

১৯৫০ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপির রিপোর্টার এডওয়ার্ড জোন্স প্রথমবার লেখেন, কিছু বিশেষ এলাকায় বার বার বিমান নিখোঁজ হচ্ছে। তখনো এই অঞ্চলের নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হয়নি। পরে ১৯৬৪ সালে ভিনসেন্ট গ্যাডিস একটি প্রবন্ধে এই অঞ্চলের নাম লেখেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। তাঁর সেই আলোচিত প্রবন্ধটির নাম ছিল ‘দ্য ডেন্টাল বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’। এরপর থেকে এই রহস্যময় অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিতি পায়।

আরও পড়ুন

কিন্তু আসলেই কি এই অঞ্চলে বিমান হারিয়ে যেত? এর উত্তরে অস্বীকার করার কিছু নেই। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসাস পিকারিং ১৮০০ সালে বারবাডোজ থেকে ডেলাওয়ারের যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই জাহাজে ৯০ জন নাবিক ছিল। ১৯১৮ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর ইউএসএস সাইক্লোপস বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ৩০৬ জন নাবিকসহ নিখোঁজ হয়ে যায়। এসএস মেরিন সালফার কুইন নামে একটি জাহাজও ১৯৫৩ সালে নিখোঁজ হয়। সেই জাহাজে ছিল ৩৯ জন নাবিক। জাহাজটি ৫২৫ ফুট দীর্ঘ ছিল।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এখনো এক রহস্যের নাম

১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর, পাঁচটি টর্পেডো বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নৌঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আকাশে উড়ছিল। হঠাৎ এগুলোর সঙ্গে রহস্যজনকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর আর সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান দুটি বিমানও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে নিখোঁজ হয়।

বর্তমানে বারমুডা এক শান্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর সমুদ্রপথ। এখন আর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আগের মতো ‘মৃত্যুর ত্রিভুজ’ নয়। এটি নিরাপদ, নিয়ন্ত্রিত ও পর্যটনবান্ধব অঞ্চল।

এই নিখোঁজ হওয়া বিমানগুলো কোথায় গেল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ইউএস কোস্টগার্ড, ডিসকভারি চ্যানেল ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দুর্ঘটনার পেছনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং ভুল নেভিগেশন দায়ী। এর পেছনে কোনো রহস্য নেই। তাছাড়া এই অঞ্চলের মতো আশপাশের অঞ্চলেও বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। বর্তমানে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ ও বিমান চলাচল করছে। বেশিরভাগই নিরাপদে পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে। আধুনিক প্রযুক্তি, রাডার, অটোমেটেড নেভিগেশন ও স্যাটেলাইট মনিটরিং সিস্টেম দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

বর্তমানে বারমুডা এক শান্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর সমুদ্রপথ। এখন আর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আগের মতো ‘মৃত্যুর ত্রিভুজ’ নয়। এটি নিরাপদ, নিয়ন্ত্রিত ও পর্যটনবান্ধব অঞ্চল। পুরোনো রহস্য নিয়ে রোমাঞ্চ থাকলেও বাস্তবতা অনেকটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যে রহস্য দানা বেঁধেছে, তা অনেকটা মিডিয়া ও লেখকদের সৃষ্টি। অনেকেই তিলকে তাল বানিয়েছে। এই অঞ্চলে যে পরিমাণ বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে, আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করলে তা স্বাভাবিক। কিন্তু মিডিয়া এই ঘটনা লিখতে গিয়ে অতিরঞ্জন করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আর রহস্য নয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল-জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর, ঢাকা

আরও পড়ুন