৯৯তম জন্মদিন পালন করলেন প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। ৮ মে, এই বিশেষ দিন উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে ডকুমেন্টারি মুভি ওশান উইথ ডেভিড অ্যাটেনবরো। মুভির ট্রেলারে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রায় একশ বছর কাটানোর পর আমি এখন বুঝতে পারছি, এই গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভূমি নয়, সাগর।’
তাঁর এই কথা থেকেই বোঝা যায় মুভিটি হবে তাঁর আরেকটি অনবদ্য সৃষ্টি। কেননা মুভিটি সাগর কেন্দ্রিক জীবনের অজানা, অদেখা জীবনকে নিয়ে। তবে ডকুমেন্টারিটিতে শুধু যে সাগরের অপার সৌন্দর্য দেখানো হয়েছে এমন নয়।
প্রায় একশ বছর ধরে পৃথিবীকে দেখছেন অ্যাটেনবরো। তাঁর কণ্ঠস্বর প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রকৃতির বিস্ময়কর জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা শুধু একটি প্রামাণ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারি নয়, বরং জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী একটি বার্তা। সেখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন, পৃথিবীকে নিয়ে তাঁর গভীর উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা। সাগরকে নিয়ে আমাদের একেক জনের কাছে একেক রকমের ধারণা ও ভাবনা। সেসব ছাড়িয়ে যাবে মুভিটি।
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো ৭০ বছর ধরে ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে তাঁর গম্ভীর ও প্রশান্ত কণ্ঠ দিয়ে। অনেকে তো বলেও থাকেন তাঁর বর্ণনার ধরন যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা।
এই বিশাল সাগরের কারণে আমাদের গ্রহকে নীল গ্রহও বলা হয়। সেই সাগর সম্পর্কে আমরা মহাকাশ থেকেও কম জানি। পৃথিবীর প্রায় ৭১ শতাংশ পানি, আর এই বিশাল জায়গার বেশির ভাগই আমাদের এখনও অজানা।
ওশান মুভিতে নির্মাতারা জানাতে চেয়েছেন, কীভাবে এর বিশাল সাগর ও এর সম্পদ আমরা যা-তা ভাবে ব্যবহার করছি। ফলে এটা ক্রমেই কীভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডকুমেন্টারিটি দেখলে বুঝতে পারবেন, সাগর আমাদের জন্য কতটা জরুরি, এর ধ্বংসে কী কী বিপদ ওত পেতে আছে এবং কীভাবে একে বাঁচানো যেতে পারে। বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার পর মনে হয়—আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তো শেষ। কী আর করব আমরা! ঠিক তখনি ওশান-এর মতো ডকুমেন্টারি দেখলে একে বাঁচানোর চেষ্টা আবারও মনে জাগে। কিছুটা সাহসও জাগে।
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো মুভিটিতে বলেছেন, ‘আমরা যদি সাগরকে বাঁচাই, তাহলে আমারা পৃথিবীকে বাঁচাবো।’ এটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আর যারা সাগর বিষয়ে আরও জানতে চান, তাঁদের জন্য সেরা একটি ডকুমেন্টারি মুভি হবে নিঃসন্দেহে। যারা সাগর নিয়ে আরও ডকুমেন্টারি মুভি দেখতে চান, তাঁরা দেখতে পারেন ডেভিড অ্যাটেনবরোর দ্য ব্লু প্ল্যানেট, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, আ প্লাষ্টিক ওশান সিরিজগুলো।
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো ৭০ বছর ধরে ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে তাঁর গম্ভীর ও প্রশান্ত কণ্ঠ দিয়ে। অনেকে তো বলেও থাকেন তাঁর বর্ণনার ধরন যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা। ওশান সিরিজটি দেখে যারা অ্যাটেনবরোর ভক্ত হয়েছেন তাঁরা প্লানেট আর্থ, লাইফ অন আর্থ, দ্য প্রাইভেট লাইফ অব প্ল্যান্টস মতো প্রাকৃতিক ইতিহাসনির্ভর ডকুমেন্টারি মুভিগুলো দেখতে পারেন।
একনজরে
মুভির নাম: ওশান উইথ ডেভিড অ্যাটেনবরো
পরিচালক: কলিন বাটফিল্ড, টবি নওলান, কিথ স্কোলি
ধরন: ডকুমেন্টারি
প্রকাশকাল: ২০২৫
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট
তবে অ্যাটেনবরো সবসময় একটি কথার ওপর জোর দেন—উপরের কথাগুলো ভেবে শান্তিতে থাকার কোনো কারণ নেই। যেখানে বেশি মাছ ধরা হয়েছে, সেই জায়গা কি আসলেও আগের জায়গায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে—এমন ধারণা করা একদম ভুল।
ওশান উইথ ডেভিড অ্যাটেনবরো এমন এক সময়ে মুক্তি পেয়েছে যা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, আগামী মাসেই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন (United Nations Ocean Conference)। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, এখানে দেখানো সমস্যাগুলো সম্মেলনে আরও গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হবে।
এ মুভিতে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝাতে চেয়ে অ্যাটেনবরো। সাগরের যেসব জায়গায় প্রচুর সামুদ্রিক জীবের বসবাস, সেখান থেকে যদি বেশি বেশি মাছ ধরা হয়, তাহলে সেই স্থানগুলো ধীরে ধীরে প্রাণহীন মরুভূমির মতো হয়ে যায়। জাহাজগুলো যেভাবে মাছ ধরে যেন সেখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেয়। তবে, যদি এই ধরনের কাজ থেকে কিছু নির্দিষ্ট এলাকাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়—মানে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে—তাহলে সাগর এবং তার ভেতরের জীবজন্তু আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পায়। আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে সবাই একসঙ্গে, মিলেমিশে টিকে থাকতে পারে। প্রায়শই দেখা যায়, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর ভালো ফল পাওয়া যায়। কেননা সংরক্ষিত এলাকার প্রাণীরা ধীরে ধীরে আশেপাশের অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে যায়। অনেক জায়গায় এই পদ্ধতিতেই সমুদ্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে অ্যাটেনবরো সবসময় একটি কথার ওপর জোর দেন—উপরের কথাগুলো ভেবে শান্তিতে থাকার কোনো কারণ নেই। যেখানে বেশি মাছ ধরা হয়েছে, সেই জায়গা কি আসলেও আগের জায়গায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে—এমন ধারণা করা একদম ভুল। সত্যি বলতে কী, আমরা এমন এক সীমারেখায় পৌঁছে গেছি কিনা, যেখান থেকে আর ফিরে আসা কোনো উপায় থাকবে না— তা কেউই জানি না। তাই সময় থাকতেই কাজ করতে হবে সবাইকে, যাতে সীমারেখা লঙ্ঘন না হয়।
অ্যাটেনবরো প্রকৃতির এই বিশাল আর সুন্দর জগতের সঙ্গে তাঁর নিজের জ্ঞান আর দায়িত্ববোধের একটা গভীর সম্পর্ক আমাদের জানিয়েছেন মুভিটিতে। অ্যাটেনবরো তাঁর কাজের মধ্যে এর আগেও অনেকবার সাগরতলের দৃশ্য দেখিয়েছেন। কিন্তু এই মুভিটি ফোর কে (4K) ক্যামেরার শুটিং করা হয়েছে। তাই মুভিটি বড় পর্দায় দেখলে এক অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যাবে। দর্শকদের মনে হবে, তারাও স্ক্রুবা ডাইভারদের সঙ্গে ডুব দিয়েছে গভীর অন্ধকার সাগরতলে। ছোট ছোট ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনকে যখন জুপ্ল্যাঙ্কটন খাচ্ছে—সেই দৃশ্য দেখে মনে হবে ফ্যান্টাসি সাই-ফাই মুভির দৃশ্য। ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের এই সাগর অভিযানে সঙ্গে ছিলেন অ্যাটেনবরো। মুভিটির প্রিমিয়ার দেখানো হয়েছে গত ৭ তারিখ। আর অ্যাটেনবরোর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ, ৮ মে মুভিটি সবার জন্য মুক্তি পেয়েছে।