তেল কেন পানির মতো জমে বরফ হয় না

পানির সঙ্গে তেল মেশে নাছবি: শাটারস্টোক

শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পানি জমে বরফে পরিণত হয়, কথাটা আমাদের প্রায় সবার জানা। কিন্তু হাড়কাঁপানো শীতে বা ডিপ ফ্রিজে তেল রাখার চেষ্টা করলে কী ঘটবে? তেল কি পানির মতো জমে বরফ হবে?

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, পানি জমে বরফ হওয়ার প্রক্রিয়াটা আসলে কেমন। কোনো তরল যখন তাপ হারিয়ে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, সেই তাপমাত্রাকে আমরা বলি হিমাঙ্ক। হিমাঙ্কের নিচে নামলে পানির অণুগুলো একটা নির্দিষ্ট জ্যামিতিক বিন্যাসে সাজতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির তাত্ত্বিক জীবপদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ম্যাক্সিম ল্যাভরেন্টোভিচ দ্য কনভারসেশন-এ লিখেছেন, ‘প্রকৃতিতে আমরা যেসব জটিল নকশা দেখি—হোক সেটা উদ্ভিদ, প্রাণী, শিলা কিংবা বরফের স্ফটিক—সবই নির্ভর করে পরমাণু আর অণুর স্তরে কী ঘটছে তার ওপর। পানি যখন জমে, তখন এর অণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ষড়ভুজাকৃতির দারুণ সব স্ফটিক তৈরি করে।’

কিন্তু পানির মতো তেল এমন সুন্দর স্ফটিক তৈরি করে না। রাসায়নিক ভাষায় বললে, তেল হলো নন-পোলার পদার্থ। এরা পানি-বিদ্বেষী বা হাইড্রোফোবিক।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনের আস্ক দ্য ফিজিকস ভ্যান বিভাগে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উদ্ভিজ্জ তেলে লিপিড নামে লম্বা শিকল বা চেইন থাকে। এই অণুগুলোর আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকম হয়। এই অসামঞ্জস্যের কারণে তেলের পক্ষে সুশৃঙ্খল স্ফটিক তৈরি করা কঠিন। তাই সাধারণ অর্থে তেল পানির মতো জমে না। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, মাখন। এগুলো ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৩.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জমতে পারে। 

আরও পড়ুন

তার মানে এই নয় যে, তেলের ওপর ঠান্ডার কোনো প্রভাব নেই। তাপমাত্রা কমলে তেল জমে ক্রিস্টাল না হয়ে বরং ভীষণ ঘন বা সান্দ্র হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই অবস্থায় তেলের আচরণ অনেকটা কাচের মতো। কাচ যেমন গরম করলে গলে যায়, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো গলনাঙ্ক নেই; তেলের ব্যাপারটাও তাই। ঠান্ডা হলে এর অণুগুলোর নড়াচড়া কমে যায়, আটকে থাকে; কিন্তু কোনো সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরি করে না। তাই বলা যায়, তেল আসলে পুরোপুরি জমে না, বরং শক্ত হয়।

গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য অবশ্য তেল না জমাটাই মঙ্গলের। মোটর অয়েল প্রস্তুতকারক ভালভোলিনের মতে, ‘খুব কম তাপমাত্রায় সাধারণ ইঞ্জিন অয়েল ঘন হয়ে যায়। ফলে ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে তেল পাম্প করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন পিচ্ছিলকারক বা লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করতে দেরি হয় বলে গাড়ি স্টার্ট নেওয়ার সময় ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।’

সূত্র: আইএফএল সায়েন্স