পরমাণু নিয়ে আমরা সাধারণত ভাবি না। যা চোখে দেখা যায় না, শুধু বইয়ের পাতায় থাকে, তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে! কিন্তু একটু ভাবলেই বুঝবেন, মহাবিশ্বের সবকিছু পরমাণু দিয়ে গঠিত। আমি-আপনি-আমরা সবাই। পরমাণুর এ জগৎ বেশ আকর্ষণীয়। বিশাল নক্ষত্র থেকে আমাদের মাথার চুল—সবকিছুর ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখা যাবে খুদে এই কণাদের রাজত্ব।
পদার্থবিজ্ঞানের কল্যাণে এসব অতি খুদে পরমাণু নিয়ে আমরা অনেকটাই জেনেছি। আমাদের শরীরও গঠিত হয়েছে অগণিত পরমাণু দিয়ে। শরীরে পরমাণুর সংখ্যা এত বেশি যে তা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু ঠিক কয়টি পরমাণু মিলে তৈরি হয় একটি মানবদেহ।
শুরু করা যাক মাথার চুল থেকে। অত্যন্ত ছোট কিছু বোঝাতে প্রায়ই ‘চুল পরিমাণ’ কথাটি ব্যবহার করি আমরা। এটা দিয়ে মূলত চুলের প্রস্থ বোঝানো হয়। চুল যেহেতু খুব সরু, তাই চুলের সঙ্গেই তুলনা করা হয়। কিন্তু চুল পরমাণুর তুলনায় কিছুই না। একজন সাধারণ মানুষের চুলে প্রায় ৫ লাখ পরমাণু থাকে। পরমাণু মানে মৌলিক পদার্থের সবচেয়ে ছোট কণা। এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়—সবই এই পরমাণু দিয়ে তৈরি।
পদার্থবিজ্ঞানের কল্যাণে এসব অতি খুদে পরমাণু নিয়ে আমরা অনেকটাই জেনেছি। আমাদের শরীরও গঠিত হয়েছে অগণিত পরমাণু দিয়ে।
২০০৪ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম ০.৬ অ্যাংস্ট্রম (Å) রেজ্যুলেশনের একটি মাইক্রোস্পোক তৈরি করেন যা দিয়ে সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ১ অ্যাংস্ট্রম সমান ১ সেন্টিমিটারের ১০০ মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ বা ১০-১০ মিটার (১ মিটারকে ১০১০ বা ১-এর পরে ১০টা শূন্য দিয়ে ভাগ করলে যা হয়)। এই মাইক্রোস্কোপের নিচে চুল রাখলে ৫ লাখ গুণ বড় দেখায়। কারণ, একটি গড় পরমাণুর ব্যাস এক অ্যাংস্ট্রম। চুলের ধরন ও ঘনত্ব অনুযায়ী এটি ৩-১০ লাখ পরমাণু পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ বলা যায়, প্রায় ১০ লাখ পরমাণু একসঙ্গে জড় করলে একটা চুলের সমান পুরুত্ব পাওয়া যাবে। আর ১০ কোটি পরমাণুকে সারিবদ্ধ করে সাজালে হাতের আঙুলের নখের সমান হতে পারে।
৭০ কেজি ওজনের একজন সাধারণ মানুষের শরীরে ৭ বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন পরমাণু বা ৭ × ১০২৭টি পরমাণু থাকে। অর্থাৎ আমাদের শরীর এই পরিমাণ পরমাণু দিয়ে গঠিত। এই বিশাল সংখ্যক পরমাণুর মধ্যে অনেক ধরনের মৌল আছে। পর্যায় সারণির ১১৮টি মৌলের মধ্যে মানবদেহে রয়েছে প্রায় ৬০টি মৌল।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর জেনারেল মেডিকেল সায়েন্সেসের তথ্যমতে, আমাদের শরীরের মোট ওজনের প্রায় ৯৬ শতাংশই তৈরি হয়েছে মাত্র চারটি প্রধান উপাদান দিয়ে। অক্সিজেন ৬৫ শতাংশ, কার্বন ১৮.৫ শতাংশ, হাইড্রোজেন ৯.৫ শতাংশ এবং নাইট্রোজেন ৩.৩ শতাংশ। পাশাপাশি দেহের বাকি ৪ শতাংশ ওজনে প্রায় ডজনখানেক অন্যান্য উপাদান থাকে। এর বেশিরভাগই ধাতু। যেমন, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম, সিজিয়াম ও রূপা।
বিশাল সংখ্যক পরমাণুর মধ্যে অনেক ধরনের মৌল আছে। পর্যায় সারণির ১১৮টি মৌলের মধ্যে মানবদেহে রয়েছে প্রায় ৬০টি মৌল।
একটি মজার তথ্য দিয়ে শেষ করি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেহের পরমাণুসহ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রায় অর্ধেক পদার্থ বাইরের কোনো গ্যালাক্সি থেকে আসতে পারে। বিজ্ঞানীদের আগের ভাবনার চেয়ে এ পরিমাণ অনেক বেশি। সুপারকম্পিউটার সিমুলেশনের ওপর ভিত্তি করে এই নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।