বিদ্যুৎ যদি রোধ ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে, তবে তাকে বলে সুপারকন্ডাকটিভিটি। বাংলায় বলা হয় অতিপরিবাহিতা। এটিও পরম শূন্য তাপমাত্রা কাছাকাছি দেখা যায়। বলা বাহুল্য, সুপারকন্ডাক্টিভিটি আর সুপারফ্লুইডিটি এক নয়
কোনো পদার্থ কি ঘর্ষণহীনভাবে চলতে পারে? ফ্লুইড বা প্রবাহীপদার্থ প্রবাহিত হবে, অথচ ঘর্ষণ হবে না, সেটা কি আদৌ সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। পদার্থের নানারকম বিচিত্র অবস্থা রয়েছে। তেমনই একটি অবস্থা হলো সুপারফ্লুইড। বাংলায় অতিপ্রবাহী। পদার্থের এই বিশেষ ধর্মকে বলে সুপারফ্লুইডিটি বা অতিপ্রবাহ। (প্রচলিতভাবে অবশ্য একে বলা হয় অতিতারল্য। তবে তরল বা লিকুইড আর প্রবাহী বা ফ্লুইড ঠিক সমার্থক নয়। বরং তরলকে একধরনের প্রবাহী বলা যায়।) সহজ করে বললে, যে তরল ঘর্ষণহীনভাবে প্রবাহিত হয়, তাকে সুপারফ্লুইড বলে।
প্রবাহী পদার্থকে যদি পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পদার্থটি সুপারফ্লুইডের বৈশিষ্ট্য প্রদশর্ন করে। সুপারফ্লুইড পদার্থের সান্দ্রতা শূন্য। সান্দ্রতা কী? মূলত, প্রবাহীর অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণের ফলে প্রবাহে বাধা দেওয়ার প্রবণতাকে বলা হয় সান্দ্রতা। অর্থাৎ সুপারফ্লুইড বা অতিপ্রবাহী প্রবাহিত হলে কোনো ঘর্ষণ হয় না। প্রবাহে বাধাও সৃষ্টি হয় না। বলা যায়, মসৃণভাবে প্রবাহিত হয়। অতিপ্রবাহী যেহেতু ঘর্ষণহীনভাবে চলাচল করতে পারে, তাই এটি প্রবাহিত হলে গতিশক্তি হারায় না।
১৯৩৭ সালে রাশিয়ান পদার্থবিদ পিয়োতর কাপিৎসা অতিপ্রবাহী আবিষ্কার করেন। একইসময়ে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পদার্থবিদ জন ফ্র্যাঙ্ক অ্যালেন ও কানাডিয়ান পদার্থবিদ ডন মাইসেনার যুগ্মভাবে অতিপ্রবাহী আবিষ্কার করেন। তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে গেলে এই সুপারফ্লুইডিটি ধর্ম দেখা যায়। এর ফলে পদার্থের চাপ অনেক বেড়ে যায়। হিলিয়ামের আইসোটোপের অতিপ্রবাহী ধর্ম রয়েছে। এর প্রমাণও করেছেন বিজ্ঞানীরা। হিলিয়ামের দুটি আইসোটোপ—হিলিয়াম-৩ ও হিলিয়াম-৪ পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি (প্রায় ২.১৮ কেলভিনের কম তাপমাত্রায়) অতিপ্রবাহী ধর্ম প্রদর্শন করে। সুপারফ্লুইড হিলিয়াম-৩ কন্টেইনারের দেয়াল বেয়ে মাধ্যাকর্ষণ বলের বিপরীতে ওপরে ওঠে ও কন্টেইনারের থেকে বেরিয়ে যায়।
সুপারফ্লুইডকে কেউ হয়তো বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। পদার্থের পঞ্চম অবস্থা বলা হয় এই বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটকে। এর কারণ, পদার্থের সাধারণ তিনটি অবস্থা হলো, কঠিন, তরল ও বায়বীয়। আর চতুর্থ অবস্থাটির নাম প্লাজমা।
পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় পদার্থের পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে একটি পরমাণুর মতো আচরণ করে। একে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বলে। বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ও সুপারফ্লুইড—দুটোর মধ্যে অনেকখানি মিল আছে। অর্থাৎ সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে এক নয়। আসলে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট হলো পদার্থের অনুত্তেজিত অবস্থা। আর সুপারফ্লুইড পদার্থের উত্তেজিত অবস্থা। আদর্শ বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটগুলোর অতিপ্রবাহী ধর্ম দেখা যায় না।
অতিপ্রবাহী যেহেতু ঘর্ষণহীনভাবে চলাচল করতে পারে, তাই এটি প্রবাহিত হলে গতিশক্তি হারায় না
আরেকটি শব্দ আছে, নামের মিল থাকায় যেটিকেও অনেক সময় সুপারফ্লুইডের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন অনেকে। সুপারকন্ডাক্টিভিটি। আসলে, বিদ্যুৎ যদি রোধ ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে, তবে তাকে বলে সুপারকন্ডাকটিভিটি। বাংলায় বলা হয় অতিপরিবাহিতা। এটিও পরম শূন্য তাপমাত্রা কাছাকাছি দেখা যায়। বলা বাহুল্য, সুপারকন্ডাক্টিভিটি আর সুপারফ্লুইডিটি এক নয়।
সুপারফ্লুইড নিয়ে বর্তমানে অনেক গবেষণা চলছে। নিউট্রন তারাতেও সুপারফ্লুইড পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। ভবিষ্যতে হয়তো ভারী গ্যাসের সুপারফ্লুইডও আবিষ্কৃত হবে। বিজ্ঞানী ও আগ্রহীদের জন্য দারুণ এক বিষয় হবে সেটা।
লেখক: শিক্ষার্থী, পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যশোর
সূত্র: উইকিপিডিয়া, সায়েন্স ডাইরেক্ট, সায়েন্স নোটস