১৯২৪ সাল ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসে বাঙালি জাতির এক গৌরবের বছর। শতবর্ষ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কালজয়ী প্রবন্ধ, বোস–আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব (অনেকে এটিকে বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন বা পরিসংখ্যানও বলে থাকেন) প্রকাশিত হয়। এ লেখাতে মূলত সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কথা বলব। প্রথমেই বসুর জীবনের প্রথম দিকের কিছু কথা সংক্ষেপে বলছি।
১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি কলকাতার ঈশ্বর লেনের বাড়িতে জন্মেছিলেন এই পদার্থবিদ। বাড়িটি এখনো ওই অবস্থায় রয়েছে। বসু পড়াশোনা করেছেন কলকাতার হিন্দু স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রধান বিষয় ছিল মিশ্র গণিত, যা কালক্রমে তাঁকে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ হতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শিক্ষক হিসেবে যাঁদের পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য পি সি রায়। সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন মেঘনাদ সাহা।
সত্যেন বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন ১৯১৫ সালে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে যোগ দেন গবেষণা ফেলো হিসেবে। সেখানে কাজ করার সময় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার ক্রমবর্ধমান শাখাগুলোয় অভিজ্ঞতা লাভ করেন। সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের সব রেকর্ড ভাঙা ছাত্রটিকেও বেগ পেতে হচ্ছিল শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসু
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে, তার মধ্যে পদার্থবিদ্যা ছিল অন্যতম। ১৯২০ সালের শেষ দিকে বিভাগের জন্য শিক্ষক খোঁজা শুরু হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওয়াল্টার অ্যালেন জেনকিন্স ও স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য) উচ্চমানের প্রার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেননি। তখন অবিভক্ত ভারতের সবচেয়ে পুরোনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকতেন সবাই। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই আবেদন করলেন মাত্র একটি রিডার পদের বিপরীতে। বাছাই করে দুই প্রার্থীকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হলো—সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা। দুজনই অত্যন্ত শক্তিশালী প্রার্থী। বাছাই কমিটি দ্বিধায় পড়ল, কাকে রেখে কাকে নেবে। জেনকিন্স ও হার্টগ সাহেব চিন্তাভাবনা করে ঠিক করলেন, দুটো পদ থাকলে ওই দুজনকেই নেওয়া যেত। উপচার্য হার্টগ বাছাই কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর প্রতিবেদনে লিখলেন, ‘রিডার পদটির জন্য সব দিক বিবেচনা করে বসুকেই নেওয়া হোক।’ ফলে বাদ পড়লেন বিজ্ঞানের ইতিহাসে বাঙালির আরেক গর্ব মেঘনাদ সাহা।
তরুণ সহকর্মীদের নিয়ে নতুন বিভাগ গড়ে তোলার কাজে লেগে পড়লেন সত্যেন বসু। মিশ্র গণিতের একসময়ের ছাত্র, তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা যাঁর আসল বিষয়, তিনি হাত দিলেন শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাগার তৈরির কাজে। তখনকার দিনে এক্স-রের সাহায্যে পদার্থের গঠন ও অবস্থান জানার কাজে একটি মানসম্মত এক্স–রে টিউব জরুরি হয়ে পড়ে।
১৯২১ সালে ঢাকায় এলেন বসু। ফুলার রোডের একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হলো। বাসা থেকে কার্জন হলে যাওয়া আসা করতেন পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে। তাঁর যোগ দেওয়ার পরপরই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এলেন এস এন মিত্র, এস আর খাস্তগীর, দক্ষিণ ভারতের শ্রীনিবাস কৃষ্ণণ—যিনি রমন বর্ণালির তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তরুণ সহকর্মীদের নিয়ে নতুন বিভাগ গড়ে তোলার কাজে লেগে পড়লেন সত্যেন বসু। মিশ্র গণিতের একসময়ের ছাত্র, তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা যাঁর আসল বিষয়, তিনি হাত দিলেন শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাগার তৈরির কাজে। তখনকার দিনে এক্স-রের সাহায্যে পদার্থের গঠন ও অবস্থান জানার কাজে একটি মানসম্মত এক্স–রে টিউব জরুরি হয়ে পড়ে। হাটখোলা রোডের এক দোকান থেকে বসু নিজে ঝালাইকরের কাছে গিয়ে এক্স–রে টিউব (এটাকে ভ্যাকুয়াম টিউবও বলা হয়) বানালেন। তারপর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করে এক্স–রে বিচ্ছুরণের উপযোগী একটি পরীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে ফেললেন। স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাগারে যন্ত্রটি ব্যবহার করলেন তিনি। সবার মধ্যে সে কী উত্তেজনা! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানের অফিসে দীর্ঘদিন যন্ত্রটি একটি কাচের বাক্সে রাখা ছিল। একসময় বিজ্ঞান জাদুঘর ওটা নিয়ে গেছে। সেখানে ওটা রক্ষিত আছে সত্যেন বসু কর্ণারে।
সত্যেন বসুর ছাত্রদের মধ্যে ঢাকায় কেউ বেঁচে নেই। তাঁদের মধ্যে ইন্নাস আলী ও আবদুল মতিন চৌধুরী অনেক আগে মারা গেছেন। তাঁরা দুজনই আমার শিক্ষক ছিলেন। মতিন চৌধুরী তাঁর শিক্ষক বসু সম্পর্কে অনেক উঁচু ধারণা পোষণ করেছেন আজীবন। তিনি বলতেন, রাত–দিন খেটে সত্যেন বসু প্রায় শূন্য থেকে পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রায় সবটাই তৈরি করেছিলেন নিজ হাতে। পরিবারকেও যথেষ্ট সময় দিতে পারেননি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে বিভাগের শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম), উচ্চমানের পাঠ্যবই সংগ্রহ, ফলিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার গবেষণা পত্রিকা সংগ্রহ করাসহ অনেক কিছু করেছেন তিনি। একসময় ঢাকা হলের (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) প্রাধ্যক্ষও হয়েছিলেন কয়েক বছরের জন্য। আজীবন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার বিশ্বসেরা গবেষক হয়েও পাশাপাশি তিনি প্রশাসনে কাজ করেছেন। মতিন চৌধুরী আরও বলেছিলেন, একবার উপাচার্য হার্টগ সাহেবের সঙ্গে দেখা করে বসু বলেন, ‘আমার জীবন আমি গবেষণায় কাটাতে চাই। আমাকে প্রশাসনের কোনো দায়িত্ব দেবেন না দয়া করে।’
বোস–আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক ছিল পদার্থবিদ্যার স্বর্ণযুগ। আজকের পদার্থবিদ্যা যে শক্ত মূল ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার ভিত্তির অনেকটাই তৈরি হয়েছিল সে সময়। ১৮৯৭ সালে জে জে টমসনের ইলেকট্রন আবিষ্কার বিজ্ঞানের জগতে বিশাল সুযোগ এনে দেয়। এর কয়েক বছর পর কৃষ্ণবস্তুর একটি অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোয়ান্টাম তত্ত্বের ধারণা দিলেন জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। এর পরেই ১৯০৫ সালে আইনস্টাইনের ফোটনের ধারণা (আলোক বস্তুকণা) ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব পদার্থবিদ্যার অনেক পুরোনো ধ্যানধারণাকে বদলে দিল। পদার্থবিদ্যার জগতে একের পর এক বৈপ্লবিক আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি করতে থাকল। এই তোলপাড়ের মধ্যে বড় ধরনের একটা বন্ধ্যত্বও দেখা দিল। এত দিন পদার্থবিদ্যার তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চিরায়ত বলবিদ্যা ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের পারমাণবিক আবিষ্কারগুলো এই চিরায়ত বলবিদ্যার সাহায্যে কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। এত দিন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হচ্ছিল, কিন্তু নতুন এই বলবিদ্যা তখনো পদার্থবিদ্যার পারমাণবিক বস্তুকণার ধর্ম ও কার্যপ্রণালি এককভাবে ব্যাখ্যা করার মতো আস্থায় পৌঁছায়নি।
এরই মধ্যে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণার ধর্মাবলির ব্যাখ্যায় অনেকটাই এগিয়েছে প্ল্যাঙ্কের তত্ত্ব। কিন্তু কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণসহ নানাবিধ বিকিরণের বর্ণালির সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো কোনো গাণিতিক পদ্ধতি তখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। চিরায়ত বলবিদ্যা ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের একধরনের জগাখিচুড়ি দিয়ে তখন প্ল্যাঙ্কের সূত্রের আংশিক ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন অনেকে। তবে চিরায়ত বলবিদ্যা ও তার সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার এই সংকর বানিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। সমস্যাটি নিয়ে আইনস্টাইনও তখন চিন্তা করছিলেন। কিন্তু তিনিও কোনো সমাধানে আসতে পারছিলেন না।
তখন ঢাকা শহরের এক কোনায়, কার্জন হলে বসে সত্যেন বসু পদার্থবিদ্যার অস্বস্তিকর বন্ধ্যত্বের ওপর কাজ করছিলেন। সাধারণ পরিসংখ্যান তাঁর ভালোভাবেই জানা ছিল। চিরায়ত বলবিদ্যার সাহায্যে চিরায়ত বস্তুর গতিধর্ম শ্রেণিকক্ষে পড়াতেন আর চিন্তা করতেন, সম্পূর্ণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাহায্যে কীভাবে পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণার গতিবিদ্যা ও তার ধর্মাবলির একটি কাঠামো দাঁড় করাবেন। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় (যা পরীক্ষালব্ধ জগতেও স্বীকৃত) পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণাকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: যেসব বস্তুকণার ঘূর্ণন (স্পিন) নেই, যেগুলোর ঘূর্ণন আছে এবং যেগুলোর আপেক্ষিক মান ১/২, ২/৩, ২/৫ (অর্থাৎ ভগ্নাংশ)। বসু তাঁর তত্ত্বে নতুন এক বস্তুকণার কথা চিন্তা করলেন। তা হলো, কণাটির ঘূর্ণন থাকবে, কিন্তু তার আপেক্ষিক মান হবে ০, ১, ২, ৩ এবং যথারীতি পূর্ণসংখ্যা। ফোটন (আলোক কণা) ছিল বসুর চিন্তাচেতনার মূল জায়গা। এমনই একধরনের নতুন বস্তুকণাকে তিনি তাঁর তত্ত্বে ব্যবহার করলেন। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সম্পূর্ণ কোয়ান্টাম চিন্তাচেতনা দিয়ে প্ল্যাঙ্কের নতুন ফর্মুলা (সূত্র) আবিষ্কার করলেন।
শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও ধারণা থেকে প্ল্যাঙ্কের সূত্রের এক নতুন উদ্ভাবন ঘটালেন ঢাকার সত্যেন বোস। প্রায় দুই যুগ ধরে যে অস্বস্তি ও বন্ধ্যত্ব চলে আসছিল পদার্থবিদ্যার সংখ্যাতত্ত্ব ও তার প্রয়োগের মধ্যে, সেটা থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা এক অবিস্মরীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করল। আইনস্টাইনসহ জগতের পদার্থবিদ্যার রথি-মহারথীরা বোসের কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের ফলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন
এখানেও কথা থেকে যায়। প্রথমে তিনি নিজের প্রবন্ধটি পাঠিয়েছিলেন ব্রিটিশ জার্নাল ফিলসফিক্যাল ম্যাগাজিন-এ। কিন্তু সম্পাদক প্রবন্ধটিকে প্রকাশযোগ্য মনে করেননি। ভগ্ন মনে বসু তাঁর প্রবন্ধটি পাঠালেন আইনস্টাইনের কাছে। জার্মান জার্নাল সাইটশ্রিফট ফুয়র ফিজিক (Zeitscphysik)–এ প্রকাশ করার জন্য। আইনস্টাইন প্রবন্ধটি পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে এটি প্রকাশ করার জন্য জোরালো সুপারিশ করলেন। যথাসময়ে আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে সাইটশ্রিফট ফুয়র ফিজিক জার্নালে প্রবন্ধটি পাঠালেন ১৯২৪ সালে। এর নাম দিলেন, ‘প্ল্যাঙ্কের সূত্র ও আলোক কণিকার সঠিক অনুমান’। প্রবন্ধটি কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন না করে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করলেন তিনি। উল্লেখ্য, প্রবন্ধটির একমাত্র লেখক ছিলেন সত্যেন বোস, তবে আইনস্টাইনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে প্রবন্ধটি প্রকাশের পর সারা জগতে তার পরিচিতি হলো বোস–আইনস্টাইন কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্ব হিসেবে।
শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও ধারণা থেকে প্ল্যাঙ্কের সূত্রের এক নতুন উদ্ভাবন ঘটালেন ঢাকার সত্যেন বোস। প্রায় দুই যুগ ধরে যে অস্বস্তি ও বন্ধ্যত্ব চলে আসছিল পদার্থবিদ্যার সংখ্যাতত্ত্ব ও তার প্রয়োগের মধ্যে, সেটা থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা এক অবিস্মরীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করল। আইনস্টাইনসহ জগতের পদার্থবিদ্যার রথি-মহারথীরা বোসের কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের ফলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। পদার্থবিদ্যা চিরায়ত ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জগাখিচুড়ি থেকে রক্ষা পেল।
বোস–আইনস্টাইন কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন পরবর্তী ইতিহাস
১৯২৪ সালের যুগান্তকারী এক প্রবন্ধ পদার্থবিদ্যার জগতে বড় একটি আলোর ঝলকানিরূপে দেখা দিল। বিভিন্ন জায়গায় বসুর নাম যুক্ত হতে থাকল। কয়েকটি নাম আমি উল্লেখ করছি: বোসন কণা—বসু উদ্ভাবিত নতুন বস্তুকণা, যার ঘূর্ণন মান শূন্য অথবা পূর্ণ সংখ্যা। উচ্চ ক্ষমতার পদার্থবিদ্যার মৌলিক কণা গ্লুয়ন, জেড–বোসন, ডব্লিউ–বোসন, হিগস বোসন…ইত্যাদি। মোদ্দাকথা বোসন পদার্থবিদ্যার সব শাখায় বিস্তার করে আছে। আমার মতে, পদার্থবিদ্যায় বসুর নামের সঙ্গে সরাসরি যত নাম যুক্ত হয়েছে, নিউটন ও আইনস্টাইন ছাড়া আর কারও নামে অত নামাবলি যুক্ত হয়নি।
মাছে–ভাতে আটপৌরে এক বাঙালি, ঢাকার সত্যেন বসু ১৯২৪ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যার জগতে সাড়া ফেলেছেন। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে। পরে, ১৯৪৫ সালে সত্যেন বসু তাঁর প্রিয় কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে চলে যান। আসলে তাঁকে চলে যেতে হয়। সেই অভাব আমরা অনুভব করি, আজও।