জটিল ভৌত ব্যবস্থা গবেষণায় পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল ২০২১

চলতি বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হবে আজ ৪ অক্টোবর, মঙ্গলবার। তার আগে চলুন দেখে নিই গত বছর কারা কারা পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল আর কেন…

২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। জাপানি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে, জার্মান বিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমান এবং ইতালীয় বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি। তাঁদের সবার কাজই ফিজিক্যাল কমপ্লেক্স সিস্টেম বা জটিল ভৌত ব্যবস্থা নিয়ে।

জটিল যেকোনো ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য এর এলোমেলো আচরণ। আর বিশৃঙ্খলা। বোঝা বড় কঠিন। সেগুলো বুঝে, তার ওপর ভিত্তি করে কিছু অনুমান করা তো দিল্লী বহুদূর! এই জটিল কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের-ই এবার স্বীকৃতি দিয়েছে নোবেল কমিটি।

পৃথিবীর জলবায়ু মানবজাতির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে গবেষণায় দেখিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ১৯৬০ সালে মানাবের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রথম পৃথিবীর জলবায়ুর ভৌত মডেল গড়ে তোলেন। পাশাপাশি, প্রথম মানুষ হিসেবে তিনি কাজ করেন তেজস্ক্রিয়তার ভারসাম্য ও বায়ুপুঞ্জের লম্বভাবে ওঠা-নামার মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া নিয়ে। তাঁর কাজের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে বর্তমান সব জলবায়ুর মডেল।

২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে ও জার্মানের বিজ্ঞানী ক্লাউস হেসেলমান এবং ইতালির বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি

প্রায় দশ বছর পরের কথা। ক্লাউস হেসেলমান আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটি মডেল গড়ে তোলেন। তাঁর গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্নের জবাব দিল। আবহাওয়া পরিবর্তনশীল এবং অনেক বিশৃঙ্খল একটি বিষয়। তাঁর গবেষণা বলল, তারপরেও বিজ্ঞানীদের গড়া জলবায়ুর মডেলগুলো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ঘটনা আলাদাভাবে চেনার উপায় আবিষ্কার করেন তিনি। নির্দিষ্ট ধরনের সিগন্যাল দেখে এটা বোঝা সম্ভব। একে বলা যায় আঙ্গুলের ছাপের মতো। স্পষ্ট বোঝা যায়, যেকোনো ঘটনা, যেমন কোনো বিপর্যয় বা বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড প্রাকৃতিক, নাকি কৃত্রিম। তাঁর এ পদ্ধতি ব্যবহার করে জানা গেল নিশ্চিতভাবে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী আসলে মানুষ।

১৯৮০ সাল। জর্জিও পারিসি বিশৃঙ্খল জটিল পদার্থের মাঝে লুকিয়ে থাকা গোপন প্যাটার্ন বা বিন্যাস আবিষ্কার করেন। জটিল ব্যবস্থা নিয়ে যেসব তত্ত্ব আছে, তার মধ্যে তাঁর তত্ত্বটি উল্লেখযোগ্য ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ও পুরো এলোমেলো ধরনের নানা ঘটনা ও পদার্থকে বোঝা যায়, তাদের ব্যাখ্যা করা যায়। শুধু পদার্থবিজ্ঞানেই নয়, তাঁর কাজ গণিত, জীববিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স থেকে শুরু করে কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস, ডাইনামিক সিস্টেম ইত্যাদি ফিল্ডে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। (মজার বিষয় হলো, জর্জিও পারিসি যে এবারে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন, তা আগেই অনুমান করে বিজ্ঞানচিন্তায় লিখেছেন ইশতিয়াক আকিব।)

আরও পড়ুন
২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। জাপানি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে, জার্মান বিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমান এবং ইতালীয় বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি।
মিজান স্বপন

স্যুকুরো মানাবে ও ক্লাউস হাসেলমান এই নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্যের অর্ধেক পেয়েছেন যুগ্মভাবে। বাকি অর্ধেক পেয়েছেন জর্জিও পারিসি। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

তাঁদের আবিষ্কার আমাদের বলে, জলবায়ু নিয়ে আমাদের যে জ্ঞান, তার ভিত্তি খাঁটি বৈজ্ঞানিক। প্রচুর কঠিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত। এই গবেষণাগুলো আমাদের বলে, বৈশ্বিক উষ্ণতা কোনো কাল্পনিক বিষয় না। জলবায়ুর প্রতি, পৃথিবীর প্রতি তাই আমাদের আরেকটু যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ