৩১৫০ সাল। সম্পূর্ণ নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে পৃথিবী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে মহাকাশের গভীরে অভিযান চালিয়েছে মানুষ। হঠাৎ একটা অদ্ভুত সংকেত পান একদল গবেষক। সংকেতটা আসে দূরবর্তী এক গ্যালাক্সি থেকে, নাম ‘অ্যান্ড্রোমিডা মেসেঞ্জার’।
সংকেতটি ডিকোড করতে বিজ্ঞানীদের অনেকদিন ব্যয় হলো। অবশেষে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এটি একটি উন্নত পরাশক্তির যোগাযোগ। তারা মানবজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে। সংকেত ডিকোড করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন, ভিনগ্রহীরা একটা উন্নত গ্রহে নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। মানবজাতিকে সে গ্রহে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। গ্রহটির নাম ‘জেনেসিস-৯’।
এই মহাকাশযাত্রার জন্য নির্বাচিত হলেন ক্যাপ্টেন অ্যালেক্সা কার্টার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডক্টর হেনরি, একজন জীববিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী লিলি। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আরও ১৫০ বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদলের মহাকাশযানের নাম ‘ইনফিনিটি এক্সপ্লোরার’। এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি নভোযান। এ অভিযানেও ডক্টর হেনরি তাঁর প্রিয় কফি মেশিন নিতে ভোলেননি।
যাত্রার প্রথম অংশ ছিল নির্বিঘ্ন। কারণ নভোচারীরা ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ছাড়িয়ে অ্যান্ড্রোমিডার দিকে রওনা হয়েছেন। মহাকাশযানের গতি যে প্রায় আলোর বেগের সমান! যাত্রাপথে তাঁরা হঠাৎ একটি ব্ল্যাকহোলের মুখোমুখি হলেন। ব্ল্যাকহোলের টান সামলে মহাকাশযান রক্ষা করলেন ক্যাপ্টেন অ্যালেক্সা ও তাঁর দল। এমন সময় বিজ্ঞানীদের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। ব্ল্যাকহোলের সিংগুলারিটি থেকে তাঁরা চাইলে বিপুল শক্তি সংগ্রহ করতে পারেন। এতে তাঁদের নভোযানের গতি আরও বেড়ে যাবে।
গ্রহের অধিবাসীরা জানালেন, তাঁদের গ্রহটি হাজার হাজার বছরের পুরোনো। গ্রহটিও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ উন্নত।
অতঃপর পৃথিবীর নভোযানটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাল। সেখানকার পরিবেশ পৃথিবীর মতো নয়। যেন অনেক বেশি রঙিন। ভিনগ্রহীদের সঙ্গে আড্ডা ও মজায় মেতে উঠলেন বিজ্ঞানীরা। একদিন ডক্টর হেনরি এক ভিনগ্রহীর বাগানে হাঁটছিলেন। বিশাল আকারের ফলের মতো একটা বস্তু দেখতে পেলেন। ভেবেছিলেন, হয়তো মহাজাগতিক কোনো সুস্বাদু খাবার। কিন্তু পরে জানা গেল, ওটা আসলে একটা খেলনা বস্তু। অনেকটা পৃথিবীর ফুটবলের মতো।
জেনেসিস-৯ গ্রহটি রহস্যময়। এখানে আকাশের রং বেগুনি। গাছপালা সব সবুজের পরিবর্তে রূপালি রঙের। গ্রহের অধিবাসিরা দেখতে অদ্ভুত ধরনের, তবে নিরিবিলি।
গ্রহের অধিবাসীরা জানালেন, তাঁদের গ্রহটি হাজার হাজার বছরের পুরোনো। গ্রহটিও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ উন্নত। মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহের প্রাণী খুঁজে বের করে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এই গ্রহে। সবাইকে নিয়ে একটা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভিনগ্রহীরা।
ক্যাপ্টেন অ্যালেক্সা ও তাঁর দল জেনেসিস-৯ গ্রহের অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে কাজ শুরু করলেন। মহাবিশ্বের শক্তি ব্যবহার করে নিজেদের অমর করার উপায় শিখলেন। বিজ্ঞানীরা এ সত্য মেনে নিলেন। কারণ, মানবজাতির প্রকৃত লক্ষ্য শুধু টিকে থাকা নয়, মহাবিশ্বের সঙ্গে একাত্ম হওয়াও বটে।
জেনেসিস-৯ থেকে থেকে নানা বিষয় শিখে এবং উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের নিয়ে আসা জ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজাতির উন্নতিতে যেন নতুন সূর্যোদয় হিসেবে আবির্ভূত হলো। মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। নতুন সূর্যোদয় শুধু মানবজাতির নতুন যুগের সূচনা করল না, বরং মহাবিশ্বের এক নতুন পরিসরের দ্বার উন্মোচিত হলো।