চাঁদ এল কোথা থেকে
এ প্রশ্নের উত্তরে অন্তত দু-তিন ধরনের মত রয়েছে। পৃথিবীর জন্মলগ্নে কোনো চাঁদ ছিল না, এ প্রশ্নে দ্বিমত নেই। অনেকে মনে করেন, একসময় পৃথিবীর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের জন্ম হয়। এই ধারণার পেছনে যুক্তি হলো, পৃথিবীর কেন্দ্রের মূল অংশের পদার্থের ঘনত্ব আর চাঁদের গোলকের পদার্থের ঘনত্ব প্রায় এক। তাই কেউ মনে করেন, চাঁদ পৃথিবীরই অংশ। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে।
কারণ, চাঁদের বস্তুখণ্ডে লোহা আকরিক নেই, কিন্তু পৃথিবীর আছে। তাই চাঁদ যদি পৃথিবীর অংশ হয়, তাহলে লোহা কোথায় গেল? এ প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যায় না। অন্য একটি তত্ত্ব হলো চাঁদের জন্ম সৌরজগতের অন্য কোথাও। ঘুরতে ঘুরতে একসময় পৃথিবীর কক্ষপথে ধরা পড়ে। সেই থেকে চাঁদ আমাদের উপগ্রহ।
কিন্তু এ ধারণাও সহজে গ্রহণ করা যায় না। কারণ, বাইরের একটি এত বড় বস্তুপিণ্ডকে পৃথিবীর কক্ষপথে টেনে এনে বন্দী করা জটিল ও কঠিন একটি প্রক্রিয়া। এটা আদৌ সম্ভব কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। বরং আধুনিক একটি তত্ত্ব বেশি গ্রহণযোগ্য। এটা ‘স্প্ল্যাশ থিওরি’ নামে পরিচিত।
পৃথিবীর কেন্দ্রের মূল অংশের পদার্থের ঘনত্ব আর চাঁদের গোলকের পদার্থের ঘনত্ব প্রায় এক। তাই কেউ মনে করেন, চাঁদ পৃথিবীরই অংশ।
পৃথিবীর প্রায় জন্মলগ্নেই থিয়া নামে অভিহিত মঙ্গল গ্রহের আকারের কাছাকাছি একটি গ্রহসদৃশ বস্তুপিণ্ড পৃথিবীকে সজোরে আঘাত হানে। এর ফলে পৃথিবী ও থিয়া গলে মিলেমিশে একাকার হয়ে একটি গোলকে পরিণত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে গোলকের একটি অংশ ছিটকে পড়ে এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। এটাই আজকের চাঁদ। গোলকের বাকি অংশ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে গোলাকার পৃথিবীর রূপ লাভ করে।
ধারণা করা হয়, ১৪০ কোটি বছর আগে চাঁদের জন্ম হয়। চাঁদ ও পৃথিবীর পারস্পরিক আকর্ষণে পৃথিবী সামান্য হেলানো অবস্থায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এই স্থিতাবস্থা চাঁদ ছাড়া সম্ভব হতো না এবং সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর জলবায়ু জীবধারণের প্রতিকূল হতো।
