পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রমণ্ডলে নতুন গ্রহ পাওয়ার সম্ভাবনা
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রমণ্ডল আলফা সেন্টাউরির চারপাশে একটি গ্রহ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪ আলোকবর্ষ। গ্যালাক্সির দূরত্বের হিসেবে এটা আমাদের খুব কাছে। আলফা সেন্টাউরি আসলে একটি ট্রিপল স্টার সিস্টেম। মানে এখানে তিনটি নক্ষত্র একসঙ্গে আছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই নক্ষত্রমণ্ডল সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার জন্য এক আকর্ষণীয় লক্ষ্য ছিল।
গত বছর জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে এই সম্ভাব্য গ্রহটি ধরা পড়েছিল। কিন্তু পরে আর পাওয়া যায়নি। তাই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে আবারও পর্যবেক্ষণ করেন। এই আবিষ্কারকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে, কারণ গ্রহটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, সেটি আমাদের সূর্যের মতো। তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতাও প্রায় একইরকম।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন গ্রহটির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে আরও গবেষণা করবেন। এ কাজে ভবিষ্যতে নাসার নতুন টেলিস্কোপ 'গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ' ব্যবহার করার আশা করছেন।
তবে নতুন এই গ্রহটি গ্যাসে ভরা, আমাদের সৌরজগতের শনি বা বৃহস্পতির মতো। ঘন গ্যাসীয় মেঘে ঢাকা থাকায় এখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এর চাঁদগুলোতে হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। কারণ, সৌরজগতে বৃহস্পতির ‘ইউরোপা’ বা শনির ‘এনসেলাডাস’-এর মতো বরফে ঢাকা উপগ্রহ আছে, যেগুলোতে জীবন টিকে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেই বর্তমানে চলছে নাসার ‘ইউরোপা ক্লিপার’ ও ‘জুস’ মিশন। যদিও সৌরজগতের এসব চাঁদ সূর্য থেকে অনেক দূরে। আলফা সেন্টাউরির নতুন গ্রহটি নিজের নক্ষত্রের কাছাকাছি রয়েছে। অর্থাৎ বাসযোগ্য পরিবেশে।
নক্ষত্রগুলো থেকে প্রচুর উজ্জ্বল আলো আসার কারণে কাছাকাছি থাকা বস্তুগুলো ঢেকে যেতে পারে। এ কারণেই সম্ভবত গ্রহটি একবার খুঁজে পাওয়ার পর আবার হারিয়ে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের আগস্টে ধরা পড়েছিল জেমস ওয়েবের ক্যামেরায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন এটি আবার খুঁজতে যান, তখন আর পাননি। গতবছর সম্ভবত গ্রহটি নক্ষত্রের পেছনে ছিল। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, এটি নক্ষত্রের খুব কাছে ছিল। এরকম গ্রহ দেখার ক্ষেত্রে কিছুটা ভাগ্যের প্রয়োজন হয় বলেও মনে করেন অনুসন্ধানকারী গবেষকেরা।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন গ্রহটির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে আরও গবেষণা করবেন। এ কাজে ভবিষ্যতে নাসার নতুন টেলিস্কোপ 'গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ' ব্যবহার করার আশা করছেন। এটি ২০২৭ সালে চালু হওয়ার কথা। বর্তমানে কাজ করা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণগুলো দিয়ে ‘স্পেকট্রাল ইমেজিং’ নামে পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রহটি কী দিয়ে গঠিত, তাও জানা যাবে। এর ফলে গ্রহটি দেখতে কেমন এবং এর চাঁদগুলো কতটা বাসযোগ্য হতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।