সৌরজগতের মোট গ্রহ আটটি। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহও বটে। কিন্তু সূর্যের কতটা কাছে? পৃথিবী থেকেই-বা বুধ গ্রহের দূরত্ব কত?
সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্ব জানার আগে এর কক্ষপথ সম্পর্কে একটু জানা দরকার। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে বুধ গ্রহের কক্ষপথ সবচেয়ে উপবৃত্তাকার। ফলে দূরত্ব একেক সময় একেক রকম হয়। গ্রহটি যদি সূর্যকে বৃত্তাকার পথে কেন্দ্র করে ঘুরত, তাহলে দূরত্ব সব সময় একই রকম হতো। উপবৃত্তাকার হওয়ার কারণে দূরত্বও ভিন্ন হয়। তবে এখানে আমরা সূর্য থেকে বুধ গ্রহের সবচেয়ে কাছের ও দূরের দূরত্ব বের করতে পারি।
বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকাকালে গ্রহটির দূরত্ব থাকে ৪৭ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৭০ লাখ কিলোমিটার। তবে গ্রহটি যখন সূর্যের সবচেয়ে দূরে থাকে, তখন এর দূরত্ব হয় ৭ কোটি কিলোমিটার। প্লুটোর কক্ষপথ আরও বেশি অদ্ভুত। তবে প্লুটো যেহেতু গ্রহ নয়, তাই আপাতত প্লুটোকে এখানে টানছি না। যাঁরা জানেন না—প্লুটো এখন বামন গ্রহ নামে পরিচিত।
ধরুন, একটা নভোযান সেকেন্ডে ২০ কিলোমিটার যেতে পারে। এই নভোযানে চড়ে সূর্য থেকে বুধে যেতে চাইলে গড়ে আপনার ৮০ দিন লাগবে।
কিন্তু ৪৭ বা ৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার আসলে কত দূর? দূরত্ব বোঝার জন্য আলোর গতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ধরুন, আপনার নভোযান ছুটতে পারে আলোর গতিতে। অর্থাৎ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। সে ক্ষেত্রে সূর্য থেকে বুধে পৌঁছাতে গড়ে সময় লাগবে মাত্র ৩ মিনিট। সূর্যের আলো বুধে পৌঁছাতেও ৩ মিনিট সময় লাগে। এদিকে, পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছাতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
কিন্তু আমরা জানি, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোর গতিতে ছোটা সম্ভব নয়। সুতরাং যেভাবে সম্ভব, সেভাবে ভেবে দেখা যাক। ধরুন, একটা নভোযান সেকেন্ডে ২০ কিলোমিটার যেতে পারে। এই নভোযানে চড়ে সূর্য থেকে বুধে যেতে চাইলে গড়ে আপনার ৮০ দিন লাগবে। আর সবচেয়ে দূরে থাকলে? সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে ৯৭ দিন।
এবার জানা যাক পৃথিবী থেকে বুধ গ্রহের দূরত্ব কতটা। পৃথিবী ও বুধ—দুটোই যেহেতু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, তাই গ্রহ দুটির মধ্যেও দূরত্বের পার্থক্য দেখা যায়। মানে বছরের একেক সময় দূরত্ব একেক রকম হয়। পৃথিবী ও বুধ গ্রহের সবচেয়ে কাছের দূরত্ব ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন কিলোমিটার। আর সবচেয়ে দূরের দূরত্ব ২২২ মিলিয়ন কিলোমিটার।
আগের মতো একইভাবে পৃথিবী থেকে বুধ গ্রহে যাওয়ার হিসেব করে দেখতে পারি এবারে। আলোর গতিতে ছুটলে বুধ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে, তখন পৌঁছাতে সময় লাগবে ৫ মিনিট। আর সবচেয়ে দূরে থাকা অবস্থায় সময় লাগবে ১২ মিনিট।
পৃথিবী থেকে বুধের উদ্দেশে ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর নভোযান পাঠিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মেরিনার ১০ নভোযান শুক্রের চারপাশে তিনবার ফ্লাইবাই সম্পন্ন করে শুক্রতে পৌঁছাতে সময় নেয় প্রায় পাঁচ মাস।
কিন্তু আপনি যদি সেকেন্ডে ২০ কিলোমিটার গতিতে ছোটা সেই নভোযানে চড়ে পৃথিবী থেকে বুধ গ্রহে পাড়ি জমাতে চান, তাহলে গড়ে সময় লাগবে ১৫৮ দিন। আর বুধ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকা অবস্থায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ১০৬ দিন। সবচেয়ে দূরে থাকা অবস্থায় সময় লাগবে ৩৮৫ দিন।
পৃথিবী থেকে বুধের উদ্দেশে ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর নভোযান পাঠিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মেরিনার ১০ নভোযান শুক্রের চারপাশে তিনবার ফ্লাইবাই সম্পন্ন করতে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কক্ষপথে চারপাশ ঘুরে আগের বিন্দুতে ফিরতে সময় নেয় মাত্র ৪ মাসে। প্রায় ১২০ দিন। সেখান থেকে ফ্লাইবাই শেষ করে বুধগ্রহে পৌঁছাতে সময় নেয় আরও প্রায় এক মাস।
২০০৪ সালে নাসা ম্যাসেঞ্জার নামে আরেকটি নভোযান পাঠিয়েছিল বুধ গ্রহের উদ্দেশে। সেবারও শুক্র গ্রহকে দুই বার ফ্লাইবাই করে বুধ গ্রহে কাছে পৌঁছায় ম্যাসেঞ্জার নামের নভোযানটি। কিন্তু সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ৩ বছর।
লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: স্পেস ডট কম