জেমিনির পঁচিশ বছর উপলক্ষে বাটারফ্লাই নেবুলার নতুন ছবি প্রকাশ
মহাকাশের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যে মনে হয়, কোনো শিল্পী বুঝি পরম মমতায় তুলি দিয়ে এঁকে রেখেছেন তাঁর শিল্পকর্ম। বাটারফ্লাই নেবুলা দেখলেও তেমনি মনে হবে। বিজ্ঞানীদের কাছে এর নাম NGC 6302। অনেকে একে বাগ নেবুলাও বলে। নাম যা-ই হোক, এর রূপ দেখে মানুষ মুগ্ধ না হয়ে পারে না।
চিলির আন্দিজ পর্বতের চূড়ায় বসে মহাকাশের দিকে চেয়ে আছে জেমিনি সাউথ অবজারভেটরি। বিশাল ৮.১ মিটারের এই টেলিস্কোপটি সম্প্রতি তার ২৫তম জন্মদিন পালন করেছে। আর এই উৎসবের অংশ হিসেবেই তারা প্রকাশ করেছে এক মহাজাগতিক প্রজাপতির নতুন ও অত্যাশ্চর্য ছবি।
২৫ বছর পূর্তিতে জেমিনি কর্তৃপক্ষ চিলির স্কুলছাত্রদের কাজে জিজ্ঞেস করেছিল, জন্মদিনে টেলিস্কোপটি কার ছবি তুলবে। গ্যালাক্সি, সুপারনোভা নাকি নেবুলা? শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছিল এই বাটারফ্লাই নেবুলাকে। শিক্ষার্থীদের কথা মতো, বাটারফ্লাই নেবুলা এখন আমাদের চোখের সামনে!
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে, স্করপিয়াস বা বৃশ্চিক নক্ষত্রমণ্ডলে এর বাস। দেখতে প্রজাপতির মতো হলেও, এটি আসলে একটি প্ল্যানেটারি নেবুলা। মজার ব্যাপার হলো, নামের সঙ্গে প্ল্যানেট বা গ্রহ থাকলেও, এর সঙ্গে গ্রহের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রাচীন জ্যোতির্বিদেরা টেলিস্কোপে এদের গোল দেখতেন বলে এমন নাম দিয়েছিলেন।
বাস্তবে এটি একটি মৃতপ্রায় নক্ষত্রের অবশিষ্ট। এর কেন্দ্রে আছে একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা শ্বেত বামন নক্ষত্র। ছবিতে একে যতটা শান্ত আর সুন্দর দেখাচ্ছে, বাস্তবে পরিস্থিতি ঠিক ততটাই ভয়ংকর। এর কেন্দ্রে থাকা ওই ছোট্ট নক্ষত্রটি মহাবিশ্বের অন্যতম উষ্ণ নক্ষত্র। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস!
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে, স্করপিয়াস বা বৃশ্চিক নক্ষত্রমণ্ডলে এর বাস। দেখতে প্রজাপতির মতো হলেও, এটি আসলে একটি প্ল্যানেটারি নেবুলা।
একসময় এ নক্ষত্র ছিল আমাদের সূর্যের চেয়েও বিশাল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি ফুলেফেঁপে রেড জায়ান্ট বা লাল দানবে পরিণত হয়। মৃত্যুর আগে এটি গ্যাস ছুড়ে দেয় মহাকাশে। এই গ্যাসই দুই পাশে ছড়িয়ে পড়ে প্রজাপতির ডানার আকার নিয়েছে। এই ডানার বিস্তার বা গ্যাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ লাখ কিলোমিটার!
জেমিনির তোলা এই ছবিতে যে লাল রং দেখছেন, তা হলো আয়নিত হাইড্রোজেন গ্যাস। আর নীল রং বোঝাচ্ছে অক্সিজেনকে। হাবল টেলিস্কোপের আগের ছবিতে হয়তো রংগুলো অন্যরকম ছিল, কারণ একেক টেলিস্কোপ একেক ফিল্টারে ছবি তোলে।
তবে এই ছবির পেছনের দর্শনটা আরও গভীর। এই নেবুলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্বে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। নক্ষত্র জন্মায়, জ্বলে এবং নিভে যায়। আমাদের সূর্যও একদিন এমন এক রেড জায়ান্টে পরিণত হবে, হয়তো পৃথিবীও তখন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তবে সে সময় আসতে আরও প্রায় ৫০০ কোটি বছর বাকি। তাই ভয় পাবেন না।
কিন্তু এই ধ্বংসই শেষ কথা নয়। মৃত নক্ষত্রের ছড়িয়ে দেওয়া এই হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন আর লোহা থেকেই জন্ম নেবে নতুন কোনো নক্ষত্র, নতুন কোনো গ্রহ, হয়তো নতুন কোনো প্রাণ। একেই বলে মহাজাগতিক রিসাইক্লিং বা পুনর্জন্ম।
আমরা ভাগ্যবান যে জেমিনি বা হাবলের মতো টেলিস্কোপের সাহায্যে আমরা এসব তথ্য জানতে পারছি।