সুপারমুন কী, কেন দেখা যায়: আজ দেখা যাবে বছরের শেষ ‘কোল্ড সুপারমুন’
আজকের সন্ধ্যাটা কিন্তু অন্য সব সাধারণ সন্ধ্যার মতো নয়। আজ আকাশের দিকে তাকালে হয়তো আপনার মনে হতে পারে, চাঁদটা কি একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে? নাকি আকারটা হঠাৎ বেড়ে গেল? না, এটা আপনার চোখের ভুল নয়। আজ ৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার আকাশে দেখা যাবে বছরের শেষ এবং অন্যতম উজ্জ্বল সুপারমুন।
ডিসেম্বর মাসের এই হাড়কাঁপানো শীতে দেখা দেওয়া এই সুপারমুনকে বলা হচ্ছে ‘কোল্ড সুপারমুন’। আপনি যদি মহাকাশপ্রেমী হন, তবে আজকের রাতটা আপনার জন্য স্পেশাল। কারণ, ২০২৫ সালের আর কোনো রাতে এমন বিশাল ও উজ্জ্বল চাঁদ দেখার সুযোগ হবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সুপারমুন আসলে কী? কেনই বা একে কোল্ড মুন বলা হচ্ছে? বাংলাদেশ থেকে কখন এই দৃশ্য সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে?
সুপারমুন আসলে কী
সহজ কথায়, সুপারমুন এমন একটি পূর্ণিমা, যখন চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে আসে। এবার আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক। আমরা জানি, চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে। কিন্তু এই ঘোরার পথটা বা কক্ষপথ পুরোপুরি গোল নয়, বরং অনেকটা ডিমের মতো বা উপবৃত্তাকার। ফলে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ কখনো পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে, আবার কখনো অনেক দূরে চলে যায়।
চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে, সেই অবস্থানকে বলা হয় ‘পেরিজি’ বা অনুসূর। আর যখন সবচেয়ে দূরে থাকে, তখন তাকে বলে ‘অ্যাপোজি’ বা অপসূর। চাঁদ যখন ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে চলে আসে এবং একই সময়ে আকাশে পূর্ণিমা থাকে, তখনই সুপারমুন দেখা যায়। এই সময় চাঁদকে সাধারণ পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
চাঁদকে কেন ‘কোল্ড মুন’ বলা হয়
আজকের সুপারমুনকে জ্যোতির্বিদরা ডাকছেন ‘কোল্ড মুন’ নামে। নামটা শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এর সঙ্গে শীতের একটা সম্পর্ক আছে। এই নামগুলো সাধারণত এসেছে প্রাচীন নেটিভ আমেরিকান উপজাতিদের কাছ থেকে। তাদের ক্যালেন্ডার বা সময় গণনার পদ্ধতি ছিল ঋতুকেন্দ্রিক। ডিসেম্বর মাসে উত্তর গোলার্ধে প্রচণ্ড শীত পড়ে, রাতগুলো হয়ে যায় দীর্ঘ এবং অন্ধকার। হাড়কাঁপানো ঠান্ডার এই সময়ে যে পূর্ণিমা দেখা যায়, তাকেই তারা নাম দিয়েছিল ‘কোল্ড মুন’।
কিছু কিছু উপজাতি একে ‘লং নাইট মুন’ বা দীর্ঘ রাতের চাঁদও বলে। কারণ, শীতকালে রাত বড় হয় এবং চাঁদ দীর্ঘ সময় আকাশে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে কখন দেখা যাবে
এটাই হয়তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সুখবর হলো, আজকের সুপারমুন দেখার জন্য আপনাকে দূরবিন বা টেলিস্কোপ নিয়ে বসে থাকতে হবে না। খালি চোখেই এই সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর চাঁদ তার পূর্ণিমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই আকাশে এই বিশাল চাঁদ দেখা যাবে। তবে চাঁদের পরিপূর্ণ রূপ বা শতভাগ পূর্ণিমা উপভোগ করা যাবে সন্ধ্যা ৫টার কিছু পর থেকেই।
সবচেয়ে ভালো ভিউ কখন পাবেন
যদিও সারা রাতই চাঁদ দেখা যাবে, তবে সুপারমুন দেখার সেরা সময় হলো চাঁদ ওঠার ঠিক পরপর। অর্থাৎ, আজ সূর্য ডোবার পর যখন পূর্ব আকাশে চাঁদ উঁকি দেবে, ঠিক তখনই এটি দেখতে সবচেয়ে বড় লাগবে।
এর পেছনে কারণ আছে। একে বলা হয় ‘মুন ইলিউশন’ বা চাঁদের বিভ্রম। চাঁদ যখন দিগন্তরেখার কাছাকাছি থাকে—মানে গাছপালা বা দালানকোঠার পেছনে—তখন আমাদের মস্তিষ্ক চাঁদকে তুলনামূলক অনেক বড় করে দেখায়। তাই সেরা অভিজ্ঞতার জন্য সন্ধ্যার পরপরই ছাদ বা খোলা মাঠে চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই চাঁদ কেন স্পেশাল
২০২৫ সালে আমরা মোট চারটি সুপারমুন দেখার সুযোগ পেয়েছি। আজকেরটি হলো এই তালিকার চতুর্থ এবং শেষ সুপারমুন। অর্থাৎ, আজকের পর এমন বড় চাঁদ দেখতে আপনাকে আবার আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তা ছাড়া, এবারের সুপারমুনটি অন্যান্যবারের চেয়ে একটু আলাদা। কারণ, চাঁদ আজ পৃথিবীর খুব কাছে—প্রায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করবে। সঙ্গে শীতে আকাশ পরিষ্কার থাকায় চাঁদের ঔজ্জ্বল্য হবে দেখার মতো।
আমাদের ব্যস্ত জীবনে আকাশের দিকে তাকানোর সময় পাই না। কিন্তু প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন কিছু আয়োজন করে, যাতে আকাশের দিকে তাকাতে বাধ্য হই। তাই আজ সন্ধ্যায় একটু সময় বের করুন। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা খোলা কোনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান। উপভোগ করুন বছরের শেষ ‘কোল্ড সুপারমুন’।