পৃথিবী ও আকাশ
পৃথিবীতে দিন রাত কেন হয়
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। খোঁজার চেষ্টা করেছে আকাশ ও পৃথিবীর সম্পর্ক। পৃথিবী ও আকাশ নামের এই বইয়ে সেই সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোটদের জন্য, সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ থেকে। আলেকজান্ডার ভলকভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন সমর সেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
স্টেশন থেকে মন্থর গতিতে বেরোনো ট্রেনে বসে মনে হয় অন্য লাইনের নিশ্চল ট্রেনটা পেছনের দিকে যাচ্ছে। আসলে কিন্তু তোমার ট্রেনটাই আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে। গতি বাড়লেই ভ্রান্তি কেটে যায় ঝাঁকুনি, দোলানি আর খট খট শব্দে।
জাহাজ যখন বন্দর ছাড়ে তখন একই ভুল হয় আমাদের। ক্ষণিকের জন্য মনে হয় বন্দরটা জাহাজ থেকে সরে যাচ্ছে।
অতিকায় একটা লাটিমের মতো আমাদের পৃথিবী শূন্যে ঘুরছে।
একটা লাটিম ঘুরিয়ে তার ওপরে কাগজের ছোট টুকরো বসিয়ে দাও। সঙ্গে সঙ্গে টুকরোটা পড়ে যাবে। যে শক্তিতে ওটা পড়ে তার নাম কেন্দ্রাতিগ শক্তি। অর্থাৎ যে শক্তি কেন্দ্র থেকে অন্যদিকে টানে। কোনো কিছু ঘুরতে থাকলেই দেখা দেয় এ শক্তি।
পার্কের চর্কিপাক-যন্ত্র জোরে, ক্রমশ জোরে ঘুরতে থাকলে ওপরকার লোকজন ছিটকে পড়ে।
ছুঁচসুদ্ধ সেই আপেলটা তো রয়েছে। ছুঁচটা হলো অক্ষ বা মেরুদণ্ড। পৃথিবীর মেরুদণ্ড ইস্পাতের ছুঁচ নয়, কল্পিত একটা লাইন যাকে ঘিরে পৃথিবীর চক্রগতি। লাইনটা দৈর্ঘ্য ১২ হাজার কিলোমিটারের বেশি। পৃথিবীর বিষুবরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার।
কিন্তু পৃথিবী তো ঘূর্ণমান, তবু ওপরের লোকজন, পশু-পাখি, পাথর বালি কেন পড়ে যায় না? কেন উপছে পড়ে না নদী আর সাগরের পানি?
কারণটা সহজ: পৃথিবী যথেষ্ট জোরে ঘোরে না।
চর্কিপাক-যন্ত্র চলতে শুরু করলেই লোকে পড়ে যায় না, পড়ে তখনি যখন সেটা বেশ জোরে ঘোরে।
পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবীর ঘুরপাক, একটা পুরো পাক খেতে লাগে চব্বিশ ঘণ্টা। পৃথিবীর তুলনায় মানুষ এত ক্ষুদ্র যে গতিটা বোঝে না, বিশেষ করে গতিটা অত্যন্ত মসৃণ বলে, কোনো বিরতি বা ঝাঁকুনি নেই। তাই আমাদের ভ্রান্তি হয় যে, পৃথিবী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অথচ আকাশ আর আকাশের সব জ্যোতিষ্ক—চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র চব্বিশ ঘণ্টায় পৃথিবীকে একবার আবর্তন করছে। মনে হয় আকাশ পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিপরীত মুখে চলেছে।
ছুঁচসুদ্ধ সেই আপেলটা তো রয়েছে। ছুঁচটা হলো অক্ষ বা মেরুদণ্ড। পৃথিবীর মেরুদণ্ড ইস্পাতের ছুঁচ নয়, কল্পিত একটা লাইন যাকে ঘিরে পৃথিবীর চক্রগতি। লাইনটা দৈর্ঘ্য ১২ হাজার কিলোমিটারের বেশি। পৃথিবীর বিষুবরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার।
সূর্যের দিকে শুধু একটা দিক করে পৃথিবী বরাবর ঘুরলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াত। সে দিকটায় তাহলে হতো প্রচণ্ড তাপ, আর অন্য আলোহীন দিকটায় ভীষণ কনকনে ঠাণ্ডা আর অন্ধকার।
তাহলে পৃথিবীতে প্রাণ থাকা অসম্ভব হতো। কিন্তু রাত আছে, দিন আছে, পৃথিবীর এই চক্র এমন ভাবে চলে যে কোনো একটা দিকে অতি গরম বা অতি ঠান্ডা হয় না।
(চলবে…)