মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে সাহারার বুকে দানবীয় চোখ
সাহারা মরুভূমির ধুধু বালির সাগরের ঠিক মাঝখানে ওটা কী? মহাকাশ থেকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন বিশাল এক বুলস আই বা নিশানার গোল্লা এঁকে রেখেছে! মৌরিতানিয়ার এই অদ্ভুত জ্যামিতিক গঠনটিকে বিজ্ঞানীরা বলেন রিচাট স্ট্রাকচার। তবে বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয় নাম সাহারার চোখ।
ইউরোপের ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইসার কোপার্নিকাস সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইট সম্প্রতি এর একটি চমৎকার ছবি তুলেছে। সেই ছবিতে এই ‘চোখ’ যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের সামনে।
এই চোখের আকার কত বিশাল জানেন? এর ব্যাস প্রায় ৩১ মাইল বা ৫০ কিলোমিটার! আপনি যদি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে ধুলোর ঝড় আর বালির পাহাড়ের কারণে এর আসল রূপ বুঝতেই পারবেন না। কিন্তু মহাকাশ থেকে তাকালে মনে হয় পাথরের তৈরি এক বিশাল চক্র বা স্পাইরাল।
এর আকার এতই বিশাল যে, নভোচারীরা যখন পৃথিবীর ওপর দিয়ে উড়ে যান, তখন এই চোখ দেখেই তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করেন। এটি তাদের কাছে মরুভূমির মাঝে এক বিশাল ল্যান্ডমার্ক।
বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, নির্ঘাত কোনো বিশাল উল্কাপিন্ডের আঘাতেই এই গর্ত তৈরি হয়েছে। মরুভূমির মাঝখানে এমন নিখুঁত গোল্লা আর কীভাবেই বা হতে পারে?
সাহারার চোখের ব্যাস প্রায় ৩১ মাইল বা ৫০ কিলোমিটার! এর আকার এতই বিশাল যে, নভোচারীরা যখন পৃথিবীর ওপর দিয়ে উড়ে যান, তখন এই চোখ দেখেই তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করেন।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন মাঠে নেমে গবেষণা করলেন, তখন ভুল ভাঙল। উল্কাপাতের কোনো চিহ্ন সেখানে নেই। তাহলে?
রহস্যটা আসলে লুকিয়ে আছে মাটির অনেক গভীরে। কোটি কোটি বছর আগে মাটির নিচ থেকে গলিত লাভা বা ম্যাগমা ওপরের দিকে ঠেলে উঠেছিল। অনেকটা মাটির নিচে বিশাল এক বুদবুদ তৈরি হওয়ার মতো। ফলে ওপরের মাটি গম্বুজের মতো ফুলে ওঠে।
এরপর লাখ লাখ বছর ধরে সাহারার রুক্ষ বাতাস আর পানির ঘর্ষণে নরম পাথরগুলো ক্ষয়ে উপত্যকার মতো হয়ে গেছে। আর শক্ত পাথরগুলো ক্ষয়ে না গিয়ে উঁচু দেয়ালের মতো চক্রাকারে দাঁড়িয়ে আছে। ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই কাঠামোর কিছু অংশের বয়স অন্তত ১০ কোটি বছর!
স্যাটেলাইটের তোলা ছবিটি কিন্তু সাধারণ ছবি নয়, এটি একটি ফলস-কালার কম্পোজিট ছবি। অর্থাৎ, বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে মিলিয়ে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে যাতে মাটির উপাদানগুলো বোঝা যায়। ছবিতে যে লালচে বা গোলাপি আভা দেখছেন, সেগুলো হলো সেই শক্ত কোয়ার্টজাইট পাথর, যা ক্ষয়ে যায়নি। গাঢ় রঙের অংশগুলো হলো নরম পাথর, যা ক্ষয়ে গেছে। আর ছবির নিচের দিকে যে ছোট ছোট বেগুনি ছোপ দেখা যাচ্ছে, সেগুলো গাছপালা! মরুভূমির ওই শুষ্ক নদীর খাত ধরেই এই গাছগুলো বেঁচে আছে।