মহাকাশ
পৃথিবী কি গোল
পৃথিবী গোলাকার, এ কথা সবার জানা। একসময় মানুষ বিশ্বাস করত পৃথিবী চ্যাপ্টা বা সমতল। কিন্তু সে ধারণা এখন বদলে গেছে। প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর বাইরে যাওয়ার আগে কীভাবে মানুষ বুঝতে পারল পৃথিবী গোল? পৃথিবীর আকারই-বা জানল কীভাবে? ছোটদের জন্য এসব নিয়ে আনাতোলি তমিলিন লিখেছেন দারুণ একটি বই। এই বইয়ের বাংলা অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। নাম দিয়েছেন পৃথিবী কি গোল। বইয়ের ছবি এঁকেছেন ইউরি সমোলনিকভ। রাদুগা প্রকাশনের এই বই বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
পৃথিবীর আকার কেমন? প্রশ্নটা অদ্ভুত বলে মনে হয়, তাই না? পৃথিবীকে ভূগোলক বলা হয়। গোলক মানে গোল। পৃথিবী গোল ছাড়া আর কেমন হবে?
পৃথিবী যে গোলাকার, বিংশ শতাব্দীর মানুষ, মানে তোমার-আমার কাছে এটাই স্বাভাবিক। যেমন স্বাভাবিক আকাশের নীল রং, গাছপালার সবুজ। তার কারণ এই যে, ছেলেবেলা থেকেই আমাদের শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে যে পৃথিবীটা গোল। কিন্তু ব্যাপারটা কি এত স্পষ্ট যে প্রমাণের কোনো দরকার হয় না?
চলে এসো কোনো মাঠে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এসো অনেক অনেক দূরে, মাঠের মাঝে, যাতে দূর-দিগন্তের দিকে তাকালে রঙচঙে পাপড়ির ফুল আর ঘাস ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। তোমার চারপাশে তাকিয়ে দেখ। কী দেখতে পাচ্ছ? পৃথিবীর ওপরটা কি বাঁকা, ফোলা?.. না তো। সেরকম কিছুই চোখে পড়ছে না। এই তো চোখের সামনে দিব্যি দেখা যাচ্ছে দিগন্ত পর্যন্ত ছড়ানো পৃথিবী। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার ওপরকার প্রতিটি ঢিবি, প্রতিটি ঝোপঝাড়। তাহলে কে বলল পৃথিবীটা গোল?
কৃত্তিম উপগ্রহ মারফত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কম্পিউটার যন্ত্রে যখন ভূপৃষ্ঠের পরিধি মাপা হলো, তখন দেখা গেল আমাদের গ্রহের আকার আসলে জটিল—অনেকটা নাশপাতির মতো। সুমেরুর কাছাকাছি উত্তর গোলার্ধ খানিকটা ওপর দিকে উঠে গেছে, আবার দক্ষিণ গোলার্ধ সামান্য দাবানো। পৃথিবীর গায়ে যেমন টোল আছে, তেমনি আবার ফোলা ফোলা জায়গাও আছে। শুধু কি তাই? পৃথিবীকে যদি বিষুবরেখা বরাবর সমান দুই টুকরো করে কাটা যায়, তাহলেও দেখা যাবে ছেদের জায়গায় পুরোপুরি বৃত্ত না হয়ে কিছুটা যেন উঠে গেছে। সত্যিকারের নাশপাতি যাকে বলে, তাও আবার বেশ বাঁকাচোরা। কী নাম দেওয়া যায় এ ধরনের আকারকে?
বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে অনেক মাথা ঘামান। নানা রকম নাম বাছাবাছি করার পর শেষকালে তাঁরা যে নামটি রাখলেন, তা হল ‘Geoid’। শব্দটা যৌগিক। গ্রিক ভাষায় ‘Geo’ মানে ভূ। অর্থাৎ পৃথিবী আর গ্রিক ভাষারই শব্দ ‘eidos’, অর্থ আকার—এই দুয়ের মিলনে এর উৎপত্তি। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে দাঁড়াচ্ছে ভূসদৃশ। তাহলে ঘটনাটা এই যে, আমাদের পৃথিবীটা গোলক হলেও পুরোপুরি তা নয়। মানুষ কীভাবে পৃথিবীর আকার জানতে পারল সে ইতিহাস দীর্ঘ, অসাধারণ কৌতূহলোদ্দীপকও বটে। তা নিয়েই এই বই।