পৃথিবী ও আকাশ
চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। খোঁজার চেষ্টা করেছে আকাশ ও পৃথিবীর নানা রহস্যের সমাধান। পৃথিবী ও আকাশ নামে এই বইয়ে সেই সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোটদের জন্য, সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ থেকে। আলেকজান্ডার ভলকভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন সমর সেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
অনাদি কাল থেকে আকাশের সব ঘটনার মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভীত করেছে সূর্য এবং চন্দ্রগ্রহণ। আকাশে ঝলমল করছে চাঁদ, আশপাশে কোথাও এক টুকরো মেঘ পর্যন্ত নেই। হঠাৎ চাঁদের মুখে অগ্রসর হলো কালো ছায়া, কোথা থেকে তার আগমন, কেউ জানে না...। ক্রমশ বড় হতে লাগল ছায়াটি...অদৃশ্য হয়ে গেল চাঁদের বেশিরভাগ, তারপর একেবারে নিশ্চিহ্ন চাঁদ। অবশ্য চাঁদ তখনো আছে, দেখতে ঘোর লাল চক্রফলকের মতো, কিন্তু দীপ্তি নেই।
পৃথিবীর ছায়া পড়ে বলে চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর ছায়া চাঁদের সমস্তটা আবৃত করলে বলা হয় পূর্ণগ্রাস, আর কিছু অংশ ঢাকলে খন্ডগ্রাস। খন্ডগ্রাস লোকের মনে পূর্ণগ্রাসের মতো দাগ কাটে না। চাঁদ তো সরু কাস্তের মতো প্রায়ই দর্শন দেয়, তাই খণ্ডগ্রাসে অস্বাভাবিক কিছু নেই।
আগেকার রাশিয়ায় চন্দ্রগ্রহণকে ভাবা হতো দারুণ একটা দুর্লক্ষণ বলে। ১২৪৮ সালে একটি ইতিবৃত্তলেখক লেখেন: ‘চাঁদে একটি দুর্লক্ষণ দৃশ্যমান হয়।
আগেকার দিনে লোকে ভাবত ভয়ঙ্কর একটা রাক্ষস, একটা ড্রাগন, গ্রহণের সময়ে চাঁদকে গিলে ফেলে। ড্রাগন নিয়ে কয়েকটি জাতির বিশ্বাস এত প্রবল ছিল যে ঢাক পিটিয়ে, খটখটি বাজিয়ে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করত তারা। আকাশে চাঁদ আবার দেখা দিলে কী তাদের উল্লাস—ভাবত শব্দের তাড়নায় চাঁদকে ছেড়ে ড্র্যাগন পিটটান দিয়েছে।
আগেকার রাশিয়ায় চন্দ্রগ্রহণকে ভাবা হতো দারুণ একটা দুর্লক্ষণ বলে। ১২৪৮ সালে একটি ইতিবৃত্তলেখক লেখেন: ‘চাঁদে একটি দুর্লক্ষণ দৃশ্যমান হয়। ঘোর লাল হইয়া সেটা মুছিয়া যায়...আর সে বারের গ্রীষ্মকালেই খাঁ বাতি তাঁহার সৈন্যবাহিনী সমেত উপস্থিত হইলেন…’। ১৩ শতকের রুশরা তাহলে ভাবত, তাতার খাঁ বাতির আক্রমণের পূর্বাভাস মেলে চন্দ্রগ্রহণ থেকে।
১৪৭১ সালের ইতিবৃত্ত বলে: ‘মধ্যরাত্রি বিষণ্ণ গম্ভীর, চাঁদের বক্ষে যেন রক্তের ছোপ, বহুক্ষণ ধরিয়া অন্ধকার বর্তমান থাকে, তাহার পর ধীরে ধীরে আলোকের সঞ্চার…’। সরকারী ইতিহাসে প্রত্যেকটি চন্দ্রগ্রহণ জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে নথিবদ্ধ হয়। চন্দ্রগ্রহণের জন্য সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদকে একটি সমরেখায় থাকতে হবে। পৃথিবীর অবস্থান হবে সূর্য ও চাঁদের মধ্যে। জ্যোতিষ্কগুলোর এই বিন্যাস পালাক্রমে ঘটে নিয়মিতভাবে।
এমন কি পুরাকালেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, চন্দ্রগ্রহণ পালাক্রমে ঘটে ১৮ বছর ১১ দিন ৮ ঘণ্টা অন্তর। গ্রহণগুলো তারিখ মনে রাখলে ভবিষ্যৎ গ্রহণের কথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যেত।
আজ অত্যন্ত নির্ভুলভাবে গ্রহণের দিনক্ষণ আগে থেকে বলা যায়, আগামী অনেক বছরের জন্য চন্দ্রগ্রহণের একটি সময়সূচী তৈরি থাকে।