সূর্য কেন সাগরে তলিয়ে যায় না

কমবেশি সব মানুষই রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। অনেকে মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে। মহাবিশ্বের কথা নামে এই বইয়ে সেই সেই রহস্যের কথা ছোটদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রাদুগা’ প্রকাশন থেকে, ১৯৮৩ সালে। ফেলিক্‌স ক্রিভিনের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। ছবি এঁকেছেন গালিনা সেমিওনভা। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…

সূর্য কীভাবে সাগরে গোসল করে, কখনো দেখেছ কি? আকাশ যেখানে সমুদ্রের সঙ্গে এসে মিশেছে, সূর্য সাবধানে সেদিকে এগোতে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে পানিতে নামতে থাকে। দেখে মনে হয় সে যেন ঠান্ডা পানির জন্য ভয় পাচ্ছে। এই সময় সে লাল হয়ে ওঠে, যেন এই ভেবে লজ্জা পাচ্ছে যে যারা পানিকে ভয় পায় না, তারা যেমন ঝপ করে পানিতে ডুব মারে, সেভাবে সে ডুব দিতে পারছে না।

শেষকালে সূর্য পানির ভেতরে নেমে গেল, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল হুলস্থূল কান্ড। আকাশ ছেয়ে গেল উদ্ধার অভিযানকারী তারাদলে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রধান উদ্ধারকর্তা চাঁদ। 

তারারা তাদের বাতি জ্বালিয়ে পানির তল থেকে সূর্যকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু সূর্যের দেখা নেই, সে বেশি গভীরে ডুবে গেছে। এদিকে বাতাস শনশন আওয়াজ তুলে জানাচ্ছে বিপদসঙ্কেত: 

‘সূর্য তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে!’

আরও পড়ুন

উদ্ধারকারী দল সারা রাত কাজ করে চলে। শেষে তারা তাদের বাতি নিভিয়ে ফেলতে থাকে, বুঝতে পারে, পানিতে ডোবা বেচারিকে সাহায্যের সব চেষ্টা এখন বৃথা। 

কিন্তু শেষ বাতিটা যখন নিভে গেল, তখন হঠাৎ সূর্য অক্ষতদেহে এসে হাজির। সে বহাল তবিয়তে আছে। তাও আবার উঠল সেখান থেকে নয়, যেখানে সে ডুবে গিয়েছিল—সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে। 

তাজ্জব ব্যাপার! ডুবল সন্ধ্যাবেলায়, এসে হাজির হলো সকালে—ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি, উদ্ধারের জন্য সারা রাত এত যে হৈচৈ, এসব যেন মোটেই তাকে নিয়ে নয়। 

আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে যে সে আদৌ ডোবেনি? সবার মনে হলো বটে যে সে পানির নীচে তলিয়ে গেল, কিন্তু আসলে সে তলিয়ে যায়নি; স্রেফ অস্তাচলে গিয়েছিল। গিয়েছিল এমন জায়গায়, যেখানে গেলে তাকে চোখে দেখা যায় না। 

আরও পড়ুন

আর যদি সত্যি কথা বলতে হয়, সূর্য আসলে কোথাও যায়-টায়নি। সোজা কথা হলো এই যে, পৃথিবী অবিরাম ঘুরছে বলে সূর্যের দিকে অন্য পাশ ফেরাল। আগে ছিল আমাদের পাশটা সূর্যের দিকে ফেরানো, আর এখন পৃথিবী ঘুরে গেল সূর্যের অন্য পাশে, তাই আমাদের পাশ থেকে আমরা সূর্যকে আর দেখতেই পেলাম না। 

আতঙ্কের বশবর্তী হওয়া কখনো উচিত নয়। আচ্ছা, আতঙ্কের বশবর্তী যাতে না হতে হয়, তার জন্য কী করা কর্তব্য? 

এর জন্য জানা দরকার যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, নিজের চারদিকেও ঘোরে এবং কেবল যে দিনের বদলে রাত আসে তা নয়, দিনও আসে রাতের বদলে। 

যত বেশি জানবে, তত কম আতঙ্কগ্রস্ত হবে। আর তখনই নিশ্চিন্ত মনে দেখতে থাকবে, কী ভাবে সূর্য আকাশ থেকে সমুদ্রে নামে—তা দেখে তুমি আর আতঙ্কিত হবে না, হুলস্থূল বাঁধিয়ে তুলবে না, সূর্যাস্ত তখন তোমাকে কেবল মুগ্ধ করবে।

(চলবে…) 

মূল: ফেলিক্‌স ক্রিভিন

অনুবাদ: অরুণ সোম

* পাঠকেরসুবিধার্থেবইয়েরমূলভাবঠিকরেখেবানানরীতিরকিছুপরিবর্তনকরাহয়েছে।