সৌরজগতের শেষ প্রান্তে লুকিয়ে থাকতে পারে ‘প্ল্যানেট ওয়াই’
সৌরজগতের শেষ প্রান্তে নতুন একটি গ্রহ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জ্যোতির্বিদরা। অজানা অচেনা সেই গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্ল্যানেট ওয়াই’। এর আগে ‘প্ল্যানেট এক্স’ বা ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর কথা শুনেছি। প্ল্যানেট এক্সের ধারণাটি ইতিমধ্যে প্রায় বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু প্ল্যানেট নাইনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা এখনো ভালোভাবেই টিকে আছে। এরমধ্যে আবার জোরালো হয়েছে প্ল্যানেট ওয়াইয়ের সম্ভাবনা। আর নতুন এই সম্ভাবনার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির সিরাজ।
ওই জায়গা সম্পর্কে এখনো আমরা বিস্তারিত জানি না। তাই সেখানে অনেক অনেক রহস্য লুকিয়ে থাকা অসম্ভব নয়। কিন্তু এই গ্রহের অস্তিত্বের পেছনে যুক্তিটা কী? মূলত আমির সিরাজ ও তাঁর দল কুইপার বেল্টের কিছু বরফশীতল বস্তুর কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করে এক অদ্ভুত জিনিস দেখেছেন। কুইপার বেল্টের বেশ কিছু বস্তু যেন একসঙ্গে এমন একটি সমতলে ঘুরছে, যা সৌরজগতের মূল সমতল থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি কাত হয়ে আছে। মানে সেখানকার বস্তুগুলো ঘুরছে অদ্ভুতভাবে কাত হয়ে। আমির সিরাজের মতে, ‘ওখানে একটি গ্রহ থাকার কারণেই বস্তুগুলো কাত হয়ে গেছে।’
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্টি হর্নারের মতে, এই ধারণাটি বেশ বিশ্বাসযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে জানিই না যে নেপচুনের ওপারে কী আছে।
শুধু গ্রহ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেই থেমে থাকেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, প্ল্যানেট ওয়াই গ্রহটির অস্তিত্ব থাকলে সেটির ভর হবে বুধ এবং পৃথিবীর মাঝামাঝি। আর পৃথিবী থেকে সূর্যের যে দূরত্ব, ওই গ্রহটির দূরত্ব হবে তার থেকে প্রায় ১০০-২০০ গুণ দূরে। আমির সিরাজ মতে, সৌরজগতের শেষ প্রান্তে গ্রহ থাকার ব্যাপারটি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২-৪ শতাংশ। প্ল্যানেট নাইনের প্রাথমিক সম্ভাবনাও এমনই ছিল। যদিও প্ল্যানেট নাইন এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে মজার ব্যাপার হলো, প্ল্যানেট ওয়াইয়ের সংকেত প্ল্যানেট নাইন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্ল্যানেট নাইন মহাকর্ষ বলের সাহায্যে আশপাশের বস্তুগুলোকে নিজের দিকে টেনে আনছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্ল্যানেট ওয়াই কক্ষপথকে ঢেউয়ের মতো বাঁকিয়ে দিচ্ছে। এর মানে হলো, দুটো গ্রহই মহাকাশে থাকতে পারে। সৌরজগতের শেষ প্রান্তে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন আরও অনেক গ্রহ।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্টি হর্নারের মতে, এই ধারণাটি বেশ বিশ্বাসযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে জানিই না যে নেপচুনের ওপারে কী আছে। মাত্র গত কয়েক দশকেই আমরা সেই অঞ্চল নিয়ে গবেষণা শুরু করেছি। সম্ভবত এ ধরনের গ্রহগুলো সৌরজগতের শুরুর দিকে তৈরি হয়েছিল এবং পরে কোনো মহাকর্ষীয় ধাক্কায় ছিটকে বাইরে চলে যায়। কারণ, এত দূরে নতুন গ্রহ তৈরির মতো উপাদান খুব কমই থাকে।
শুধু গ্রহ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেই থেমে থাকেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, প্ল্যানেট ওয়াই গ্রহটির অস্তিত্ব থাকলে সেটির ভর হবে বুধ এবং পৃথিবীর মাঝামাঝি।
তবে এই রহস্যের সমাধান হয়তো অল্পদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। চিলিতে অবস্থিত ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি মহাকাশের এক বিশাল জরিপ চালাবে। যদি প্ল্যানেট ওয়াই বা প্ল্যানেট নাইনের মতো কোনো গ্রহ সত্যিই থেকে থাকে, তবে রুবিন টেলিস্কোপ হয়তো সরাসরি সেগুলোর ছবি তুলতে পারবে। আমির সিরাজের বিশ্বাস, এই জরিপের প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো সৌরজগতের শেষ প্রান্তের এই নতুন সদস্যের দেখা পাওয়া যাবে। আর যদি সেখানে কোনো গ্রহ নাও থাকে, তবু অন্তত কক্ষপথের এই অদ্ভুত ঢেউয়ের জোরালো প্রমাণ মিলবে।