আকাশ পর্যবেক্ষকের খেরোখাতা - ৫

মহাবিশ্ব নিয়ে মানুষের বিস্ময়-আগ্রহ পুরকালের। পৌরাণিক যুগ থেকেই প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞানভান্ডার। আধুনিক যুগে এসে আমূলে বদলে গেছে মহাকাশবিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস। মানুষ এখন অনন্ত মহাবিশ্বের গভীর থেকে গভীরে ডুব দিতে চায়। কতটুকু সফল সে চেষ্টায়? ইতিহাস আর বিজ্ঞানের খেরোখাতায় চোখ রাখা যাক।

প্রথম পর্ব: আকাশ পর্যবেক্ষকের খেরোখাতা - ১

দ্বিতীয় পর্ব: আকাশ পর্যবেক্ষকের খেরোখাতা - ২

তৃতীয় পর্ব: আকাশ পর্যবেক্ষকের খেরোখাতা - ৩

চতুর্থ পর্ব: আকাশ পর্যবেক্ষকের খেরোখাতা - ৪

কৌণিক দূরত্ব

আকাশের তারা ও নক্ষত্রমণ্ডলীর অবস্থান জানতে যদি কৌণিক দূরত্ব ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাদের চেনা অনেক সহজ হয়। প্রথমেই বলি একটা পুরো গোল চক্র ঘুরে এলে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরা হয়। যেহেতু আকাশকে আমরা একটা গোলক ভাবতে পারি, সেহেতু দিগন্ত থেকে মাথার ওপর সুবিন্দু পর্যন্ত একটা বক্ররেখা একটা বৃত্তের এক-চতুর্থাংশ বা ৯০ ডিগ্রি ভ্রমণ করবে। দিগন্তের একটা বিন্দু থেকে সুবিন্দু হয়ে ঠিক উল্টো দিকের একটা বিন্দুতে গেলে ১৮০ ডিগ্রি পূর্ণ হবে। আর ৬০ কৌণিক সেকেন্ডে (৬০" ) হয় ১ কৌণিক মিনিট (১') আর ৬০ কৌণিক মিনিটে (৬০") হয় ১ কৌণিক ডিগ্রি (১০)। আকাশের মানচিত্রে বিভিন্ন তারার মধ্যে দূরত্ব কোণের হিসাবে দেওয়া হয়। তাই আমাদের হাতকে কীভাবে কোণ মাপার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, সেটা জেনে রাখা ভালো।

এক বাহু দূরত্বে হাতের আঙুল ব্যবহার করে আকাশের কৌণিক দূরত্ব সহজেই মাপা যায়
ফাইল ছবি

হাত দিয়ে আকাশের ডিগ্রি খুব সহজেই মাপা যায়। আঙুল ও মুঠি ব্যবহার করে কোণ মাপা সম্ভব। ১ নং ছবিতে এ রকম কয়েকটা আঙুল ও মুঠির অবস্থান দেখানো হয়েছে কোণ মাপার জন্য। এই কোণগুলো মাপতে হাতের আঙুলগুলোকে এক বাহু দূরত্বে রাখতে হবে। এই দূরত্বে আমাদের যেকোনো আঙুলের প্রস্থ অন্তত এক কৌণিক ডিগ্রি প্রক্ষেপণ করবে আমাদের চোখে।

এভাবে ১, ৫, ১০, ১৫, ২৫ ডিগ্রি ইত্যাদি কোণ গড়পড়তাভাবে নিরূপণ করা যায়। যদি ১৫ ডিগ্রির ওপর কোনো কোণ মাপতে হয়, তবে ১ ফুট লম্বা একটা স্কেল বা সেই রকম লম্বা একটা কঞ্চি বা গাছের ডাল এক বাহু দূরত্বে রাখলে সেই স্কেল বা ডালটির দুটি প্রান্ত আমাদের চোখে ৩০ ডিগ্রি কোণ প্রক্ষেপ করবে।

চাঁদের কৌণিক ব্যাস আধা ডিগ্রির মতো, সূর্যেরও তা-ই। সেই জন্য চাঁদ সূর্যকে গ্রহণের সময় প্রায় কানায় কানায় ঢেকে ফেলতে পারে। সূর্যকে আধা ডিগ্রির চেয়ে বড় দেখায় তার উজ্জ্বলতার জন্য, অথচ চাঁদ বা সূর্য এই দুটি বস্তুকেই এক বাহু দূরত্বে আমাদের যেকোনো আঙুল দিয়ে ঢেকে ফেলা যাবে। আঙুল দিয়ে কোণ মাপার পদ্ধতি ব্যবহারিক কাজে লাগতে পারে। যেমন যদি দেখি সূর্য দিগন্ত থেকে ১৫ ডিগ্রি ওপরে আছে, তাহলে বলা যেতে পারে আনুমানিকভাবে সূর্যের দিগন্ত ছুঁতে অন্তত ৪ মিনিট/ডিগ্রি –১৫ ডিগ্রি = ৬০ মিনিট বা এক ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে এ হিসাবটা অক্ষাংশ অনুযায়ী ভিন্ন হবে।

তারার উজ্জ্বলতার মান

আকাশের সব তারার উজ্জ্বলতার মান এক নয়। কোনো কোনো তারা খুবই উজ্জ্বল, কোনোটা আবার অনুজ্জ্বল। সব মিলিয়ে অনুজ্জ্বল তারার সংখ্যাই বেশি, খালি চোখে সেগুলো দেখা যায় না। খালি চোখে দুই গোলার্ধের খুব অন্ধকার জায়গা থেকে হয়তো খুব বেশি হলে মোট ৯ হাজারের মতো তারা দেখা যেতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে জ্যোতির্বিদেরা তারাগুলোর উজ্জ্বলতার মান নির্ধারণ করতে একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বলা হয়ে থাকে, গ্রিক জ্যোতির্বিদ হিপার্কাস প্রায় দুই হাজার বছর আগে এই পদ্ধতি চালু করেন। আকাশের তারাগুলো চিনতে সেগুলোর মান কীভাবে নির্ধারিত হয়, সেটা জেনে রাখলে কিছু সুবিধা হবে।

মানুষের চোখের আলোর অনুভূতি রৈখিক নয়। অর্থাত্ একটি তারা আরেকটি তারা থেকে দ্বিগুণ উজ্জ্বল মনে হলেও আসলে সেগুলোর উজ্জ্বলতার পরিমাণের পার্থক্য ২ দশমিক ৫ গুণ। গভীর অন্ধকার আকাশে সবচেয়ে কম উজ্জ্বল যে তারা খালি চোখে দেখা যায়, তার মান ধরা হয় +৬.৫। এর থেকে কম উজ্জ্বল তারার মান বেশি হবে, আর বেশি উজ্জ্বল তারার মান কম হবে। যেমন +৬-এর থেকে ২ দশমিক ৫ গুণ উজ্জ্বল তারার মান হবে +৫, আর ২ দশমিক ৫ গুণ কম উজ্জ্বল তারার মান হবে +৭। দেখা যাচ্ছে, প্রতি ২ দশমিক ৫ গুণ উজ্জ্বলতার তফাতে এই স্কেলে মানের পার্থক্য হবে ১। +৪-এর তারা +৬ থেকে ২.৫×২.৫ = ৬.২৫ গুণ উজ্জ্বল। সে রকমভাবে +১ মানের তারা +৬ মানের তারা থেকে (২.৫)৬-১ বা (২.৫), অর্থাৎ ২.৫×২.৫×২.৫×২.৫×২.৫≈১০০ গুণ উজ্জ্বল হবে। পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য বলি, খালি চোখে +৬.৫ এর সীমাটা শুধু খুব অন্ধকার আকাশের জন্যই প্রযোজ্য, এখনকার সময়ে শহর থেকে +৪ পর্যন্ত দেখতে পারলে আমাদের সৌভাগ্য বলতে হবে। একটি ৫০ মিলিমিটার বাইনোকুলার দিয়ে অবশ্য অন্ধকার জায়গা থেকে +৯ ও একটি ৮-ইঞ্চি ব্যাসের দুরবিন দিয়ে +১৪.৫ মানের তারা দেখা যেতে পারে। হাবল দুরবিন প্রায় (অবিশ্বাস্য) +৩১ মানের খ-গোল বস্তু দেখতে পেয়েছে।

তবে ওপরের স্কেলটি ১৮ শতকে জ্যোতির্বিদ নরম্যান পগসন নির্মাণ করেছিলেন লগারিদমের ধারণা থেকে। কিন্তু পরে দেখা গেল, আমাদের দৃষ্টির সংবেদনশীলতা লগারিদম রেখা অনুসরণ করে না, বরং ঘাত বা সূচক-নীতি (Power law)অনুসরণ করে। এ ছাড়া তারার ঔজ্জ্বল্য আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে, সেই জন্য ফটো থেকে নির্ধারিত মান খালি চোখের মান থেকে ভিন্ন হয়।

খালি চোখে কি কোন তারা কোন মাত্রার সেটা জানা সম্ভব? দৃশ্যমান মাত্রা সম্পর্কে ধারণা করতে হলে কিছু কিছু তারা বা গ্রহের মান জানতে হবে। হিপার্কাসের সময় সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মান ০ ধরলেও বর্তমানের নতুন স্কেলে উজ্জ্বলতার মান ঋণাত্মকও হতে পারে। সূর্যের আপাত মান হচ্ছে ২৬.৭ আর পূর্ণচন্দ্রের মান হচ্ছে -১২.৯। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা লুব্ধক বা সিরিয়াসের মান হচ্ছে -১.৪৬। খ-গোলের চারটি বস্তুর মান এর থেকে বেশি : সূর্য, চাঁদ, শুক্র ও বৃহস্পতির। শুক্রর মাত্রা -৫ আর বৃহস্পতির মাত্রা -২.৯ পর্যন্ত যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, গ্রহগুলোর উজ্জ্বলতার মান সূর্যের ও পৃথিবীর তুলনায় তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। খালি চোখে ০.৫ মানের পার্থক্য ধরা যায়। আর কোনো কোনো অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক এক-পঞ্চমাংশ (১/৫ বা ০.২) মানের তফাত করতে পারেন। কিন্তু এই মানগুলো কোনো খ-গোল বস্তুর আসল বা অন্তর্নিহিত উজ্জ্বলতার মান নয়। উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক দূরে অবস্থান করলে তার আপাত মান কম হবে। দূরত্ব জানা থাকলে আপাত মান থেকে আসল মান নির্ধারণ করার একটা পদ্ধতি আছে। তবে সেই আলোচনা আমরা এখানে আর করব না।

সাধারণত দৃশ্যমান বেশির ভাগ উজ্জ্বল তারার মান খুব একটা বদলায় না। তবে অনেক তারাই বিষম তারার শ্রেণিভুক্ত—বিষম তারাগুলোর মান সময়ের সঙ্গে বাড়ে ও কমে। উজ্জ্বল তারাগুলোর মধ্যে একমাত্র আর্দ্রার মানই অল্পবিস্তর পরিবর্তনশীল। খালি চোখে যদিওবা কিছু উজ্জ্বল তারার বিষমতা আন্দাজ করা যায়। তবে +২ মানের ওপরের তারাগুলোর বিষমতা মাপতে হলে ফোটোমিটারের সাহায্য নিতে হবে।

তারা কী?

সূর্য একটা তারা, সূর্যের শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে জীবন সম্ভব নয়। সূর্যের মূল উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম এবং সূর্যের গভীর অভ্যন্তরে প্রোটন কণারা সম্মিলিত হয়ে সৃষ্টি করছে হিলিয়াম আর শক্তি। পরমাণুর গভীর থেকে নির্গত সেই শক্তি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে

রূপান্তরিত করেছে। এ রকম প্রায় ১০ হাজার কোটি (বা ১০০ বিলিয়ন) জ্বলন্ত তারার সমন্বয়ে তৈরি আমাদের গ্যালাক্সি ছায়াপথ। নিরিবিলি আকাশে, অন্ধকার রাতে, আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হালকা মেঘের এক চওড়া নদীর মতো মিল্কিওয়ে দেখা যায়। এই জন্য আমাদের ছায়াপথকে আকাশগঙ্গাও বলা হতো। এই আকাশগঙ্গাই আমাদের গ্যালাক্সির তল, আবার আমাদের গ্যালাক্সির পুরোটাকেই আমরা আকাশগঙ্গা বলি। আমাদের ছায়াপথের বাইরে সবচেয়ে নিকটবর্তী বড় গ্যালাক্সি হচ্ছে আন্ড্রোমিডা, যা কিনা আমাদের ছায়াপথের মতোই বড়। সেখান থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে প্রায় ২৫ লাখ (২.৫ মিলিয়ন) বছর লাগে।

একটি তারার সঙ্গে একটি গ্রহের পার্থক্য কী? গ্রহ বা তারা, দুটি থেকেই বিদ্যুত্চুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরিত হয়। কী তরঙ্গে এই বিকিরণটা হবে, সেটা নির্ভর করে গ্রহ বা তারাপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৮০০ কেলভিনের (~৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি, তাই সূর্যের মূল বিদ্যুচুম্বকীয় বিকিরণটা দৃশ্যমান আলোয় বের হয়। অন্যদিকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩০০ কেলভিনের (~১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি। সে জন্য পৃথিবীর বিকিরণটা হয় অবলোহিত তরঙ্গে। কিন্তু পৃথিবীর এই বিকিরণ শক্তির উত্স কী?

গ্রহগুলোর বিকিরণের উত্স মূলত দুটি। প্রথমত, তাদের অভ্যন্তরের মৌলিক পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা। এই মৌলিক পদার্থগুলো হচ্ছে ইউরেনিয়াম, রুবিডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। তাদের নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত আলফা ও বিটা (ইলেকট্রন) কণিকা এবং গামা রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়ায় গ্রহের অভ্যন্তরের পাথর উষ্ণ হয়ে ওঠে। সেই উষ্ণতাই অবলোহিত তরঙ্গে বিকিরিত হয়। দ্বিতীয় উত্সটি হচ্ছে অবরুদ্ধ-শক্তি। একদম প্রথমে, গ্রহের সৃষ্টির সময়, বস্তুকণাসমূহ যখন দানা বাঁধছে, তাদের স্থিতিশক্তি উষ্ণশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং গ্রহের মধ্যে আটকে পড়ে। সেই আদি উষ্ণশক্তি এখনো ধীরে ধীরে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হচ্ছে।

অন্যদিকে সূর্য ও অন্যান্য তারার শক্তির উত্স মূলত হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম সংশ্লেষণ বা ফিউশন। ফিউশন থেকে যে শক্তিটা বের হয়, সেটা সূর্যের ওপরের স্তরগুলোকে অভিকর্ষের কারণে কেন্দ্রের দিকে ভেঙে পড়া থেকে বাধা দেয়। এই সংশ্লেষণ-প্রক্রিয়ার জন্য বিশাল চাপ ও তাপমাত্রার প্রয়োজন। সূর্যের কেন্দ্রে যেখানে নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিক সংযোজন প্রক্রিয়া (ফিউশন) ঘটছে, সেখানে তাপমাত্রা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, চাপ ২.৭×১০১৬ প্যাসকেল। পৃথিবীপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের চাপ হলো প্রায় ১০৫ প্যাসকেল, অর্থাত্ সূর্যকেন্দ্রের তুলনায় প্রায় ১০১১ গুণ কম। তবে পৃথিবীর কেন্দ্রে চাপ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি, ৩.৬×১০১১ প্যাসকেল। সেখানে তাপমাত্রাও বেশ—প্রায় ৬০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান। বৃহস্পতি গ্রহের কেন্দ্রে চাপ হলো ৭×১০১২ প্যাসকেল। এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, বৃহস্পতিতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন থাকলেও ফিউশন-প্রক্রিয়ার জন্য যে ধরনের চাপ বা তাপমাত্রার দরকার, সেটা বৃহস্পতির নেই।

সূর্যের কেন্দ্রে ফিউশন বা সংশ্লেষণ মোটামুটিভাবে বলা যায়, চারটি প্রোটনকে এক করে একটি হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে। একে প্রোটন-প্রোটন ধারা বা পদ্ধতি বলা হয়। এই ধারার মধ্যে পজিট্রন, নিউট্রিনো ও গামা কণা (বা রশ্মি) সৃষ্টি হয়। পজিট্রন আবার অন্য ইলেকট্রনের সঙ্গে মিলে আরও গামা রশ্মি বানায়। পদার্থের সঙ্গে নিউট্রিনো তেমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে না। পৃথিবীতে সূর্য থেকে উত্পাদিত নিউট্রিনো প্রবাহের পরিমাণ প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে ও প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭×১০১০ টি। বলা যায়, এই লেখার একটি বাক্য পড়তে যদি আপনার ২০ সেকেন্ড সময় লাগে এবং আপনার শরীরের সমচ্ছেদ ক্ষেত্রফল যদি ১ বর্গমিটার ধরা হয়, তাহলে ওই সময়ে আপনার শরীরের মধ্যে দিয়ে প্রায় ১.৪×১০ বা ১৪০ মিলিয়ন (১৪ কোটি) নিউট্রিনো কণিকা পার হয়ে গেছে। নিউট্রিনো কণাদের অবলোকন করা প্রায় দুঃসাধ্য একটা কাজ। তবু বিজ্ঞানীরা সেটা করতে পেরেছেন। এ পর্যবেক্ষণ সূর্যের কেন্দ্রে যে প্রোটন-প্রোটন ধারায় হিলিয়াম সৃষ্টি হচ্ছে, তার একটি সরাসরি প্রমাণ দিয়েছে।

লেখক: জ্যোতিঃপদার্থবিদ ও অধ্যাপক, মোরেনো ভ্যালি কলেজ, ক্যালিফোর্নিয়া

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার মে সংখ্যায় প্রকাশিত