মঙ্গল গ্রহে মিলল রহস্যময় পাথর
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মঙ্গল গ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পারসিভারেন্স রোভার। নিঃসঙ্গ এই রোভার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার মতো নতুন পাথর দেখে থমকে দাড়িয়েছিল। এতদিনে গ্রহটির কোথাও এমন পাথর দেখেনি যন্ত্রটি। তাই ওটার পাশে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখেছে। আর তা দেখে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো ধন্দায় পড়ে গেছেন। পাথরটা দেখে মনে হচ্ছে, ওটা আসলে মঙ্গলের পাথর নয়! তাহলে? কোথা থেকে এল এই পাথর?
পাথরটির নাম দেওয়া হয়েছে ফিপসাকসলা। নামের সঙ্গে কোনো যুক্তাক্ষর না থাকলেও উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়। মঙ্গলের জেজেরো কার্টারের এক কোণায় পাথরটির খোঁজ মিলেছে। প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার চওড়া এই পাথরটি তার আশপাশের সব পাথরের চেয়ে একদম আলাদা। পাথরটি অবিশ্বাস্য রকমের অক্ষত ছিল। এর ওপর মঙ্গলের প্রবল বাতাসের কোনো প্রভাব পড়েনি।
প্রথম দেখাতেই বিজ্ঞানীরা বুঝেছিলেন, এখানে কিছু একটা গরমিল আছে। পাথরটি দেখতে অদ্ভুত রকমের ভাস্কর্যের মতো এবং আশপাশের পাথরের চেয়ে একটু উঁচুতে রয়েছে। কৌতুহলী রোভার তার মাস্টক্যাম-জেড ক্যামেরা দিয়ে চটপট পাথরটির ছবি তুলে ফেলে।
কিন্তু এই পাথরটিকে কেন মঙ্গল গ্রহের মনে হচ্ছে না? কারণ, পারসিভারেন্স লেজার গানের সাহায্যে পাথরটির রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করে দেখেছে, এটি লোহা ও নিকেলে ঠাসা! মঙ্গল গ্রহে সাধারণ পাথরে এমন উপাদান সচরাচর দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত, এটি একটি উল্কাপিণ্ড। অর্থাৎ, এই পাথর মঙ্গলের মাটিতে জন্মায়নি।
পাথরটির নাম দেওয়া হয়েছে ফিপসাকসলা। মঙ্গলের জেজেরো কার্টারের এক কোণায় পাথরটির খোঁজ মিলেছে। প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার চওড়া এই পাথরটি তার আশপাশের সব পাথরের চেয়ে একদম আলাদা।
মহাকাশের কোনো বিশাল গ্রহাণুর কেন্দ্র থেকে ভেঙে আসা টুকরো এটি। সাধারণত বড় এবং মহাবিশ্বের শুরুর দিকের উল্কায় লোহা ও নিকেল থাকে। হয়তো কোটি কোটি বছর আগে এটি মঙ্গলের বুকে আছড়ে পড়েছিল। তবে পাথরটি অক্ষত থাকায় বোঝা যায়, মঙ্গলে এখন আর আর্দ্র আবহাওয়া নেই।
মঙ্গলের বুকে লোহার উল্কাপিণ্ড পাওয়া অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। আগের রোভারগুলোও এমন পাথর পেয়েছে। কিন্তু পারসিভারেন্সের জন্য এটাই প্রথম। এতদিন সে মঙ্গলের মাটির পাথর ঘেঁটেছে, এবার সে পেল মহাকাশ থেকে আসা এক অতিথিকে। পারসিভারেন্স এই উল্কাপিণ্ডটির ওপর অর্থোপাইরক্সিন নামে একটি খনিজের সন্ধান পেয়েছে।
নাসার এই রোভারটি ২০২১ সাল থেকে মঙ্গলে চষে বেড়াচ্ছে। প্রাচীন হ্রদের চিহ্ন খুঁজেছে, প্রাণের অস্তিত্বের সংকেত খুঁজেছে, আর এবার খুঁজে পেল মহাকাশের এক টুকরো ইতিহাস। পারসিভারেন্সের এই পথচলা এখনই থামছে না। কে জানে, লাল গ্রহের ধুলোর আড়ালে হয়তো আরও বড় কোনো চমক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে!