পৃথিবীর থেকে চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার কিলোমিটার। সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার। এই দুই বস্তুকে শুধু আমরা দেখতেই পাই না, সূর্য থেকে আসা আলোতেই পৃথিবীর বেশিরভাগ জিনিস দেখি। দেখি চাঁদকেও। সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের যে বস্তুটি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, সেটা শনি গ্রহ।
অন্ধকার আকাশে মানুষের চোখে প্রায় সাড়ে ছয় মাত্রা বা তার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখতে পায়। যার অর্থ, খোলা আকাশে প্রায় ৯ হাজার নক্ষত্র আমরা দেখতে পারি। এদের সবার দূরত্ব কিন্তু এক নয়।
আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটির নাম সাইরিয়াস বা লুদ্ধক। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় ৮.৬ আলোকবর্ষ। অন্যদিকে দেনেব নামের সবচেয়ে দূরের যে তারাটি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, সেটা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ তারাটি থেকে যে আলো এসে আপনার চোখে পড়ছে, তা রওনা হয়েছিল প্রায় ১৫০০ বছর আগে। কিলোমিটারের হিসেবে তারাটির পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৪১×১০১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এছাড়া নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণের কারণে দূরের নক্ষত্র বেশ স্পষ্টভাবেই দেখা সম্ভব। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল ১০০৬ সালে। চীন, জাপান এবং মধ্য প্রাচ্যে থেকে দেখা গিয়েছিল সুপারনোভাটি। এর অবস্থান ছিল পৃথিবী থেকে প্রায় ৭,২০০ আলোকবর্ষ দূরে।
নক্ষত্র ছাড়াও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে ১ লাখ ৬০ হাজার লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড এবং প্রায় ২ লাখ আলোকবর্ষ দূরের স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউড দেখতে পাই আমরা খালি চোখেই। এই দুইটি মহাজাগতিক কাঠামো পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে দেখার সুযোগ নেই। শুধু দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে এগুলো দেখা যায়।
খালি চোখে আমরা সবচেয়ে দূরের যে জিনিসটি দেখতে পাই, সেটা হল ২৬ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। গাঢ় অন্ধকার আকাশে এটা অস্পষ্ট মেঘের মতো দেখা যায়।
এই যে নক্ষত্র বা মহাজাগতিক কাঠামো আমরা যে খালি চোখে দেখছি, এসবের কোনটাই কিছু আমরা স্পষ্ট দেখছি না। দেখছি আলোর বিন্দু হিসেবে। স্পষ্টভাবে দেখার জন্য প্রয়োজন যন্ত্রের।
এই প্রয়োজন থেকেই মানুষ আবিষ্কার করেছে বাইনোকুলার। শক্তিশালী সব টেলিস্কোপ। লাখের ঘর ছাড়ি মানুষ উঁকি দিচ্ছে সাড়ে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের মহাকাশে। দেখছে অজানা অদেখা সব জিনিসকে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: ইউনিভার্স টুডে