উইকিপিডিয়া মানে কী? সব ‘উইকি’ কি উইকিপিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত? উইকিপিডিয়া আর উইকিমিডিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? উইকিমিডিয়া আউটরিচ এক্সপার্টদের কাছে প্রায়ই আসে এ প্রশ্নগুলো। তখন তাঁরা গল্পের ঝুলি খুলে বসেন। শ্রোতারা বিস্মিত হন। বেশির ভাগ মানুষের কাছে উইকিপিডিয়া শুধু একটি ওয়েবসাইট মাত্র। কিন্তু এটা হঠাৎ চলে আসেনি। অনেক আগে থেকে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত জ্ঞানের যে ধারা তৈরি হয়েছে, উইকিপিডিয়া সেই ধারার সংযোজন মাত্র। উইকিপিডিয়ার সাদাকালো লেখার পেছনে অসম্ভব রঙিন একটা জগৎ আছে। সেখানে পৃথিবীর অন্যতম মেধাবী মানুষগুলো কাজ করেন। এখানে সেই রঙিন জগতের কথা ছোট্ট করে বলি।
অ্যাপলের প্রোগ্রামার বিল অ্যাটকিনসন নব্বইয়ের দশকে হাইপারকার্ড নামে একটা সফটওয়্যার তৈরি করেন। অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের সঙ্গে এই সফটওয়্যার দেওয়া হতো বিনামূল্যে। তখনকার দিনে এটা খুব আধুনিক সফটওয়্যার ছিল। হাইপারকার্ড অনেকটা বর্তমান ওয়ার্ড প্রসেসরে মতো। তবে এই ‘হাইপার’ শব্দের মানে, এক কার্ডের সঙ্গে আরেক কার্ড লিঙ্ক করে দেওয়া যাবে এবং একটি কার্ড থেকে চলে যাওয়া যাবে অন্য কার্ডে। সে সময় কম্পিউটারের সব কাজ চলত কমান্ড লাইনে।
উইন্ডোজের খানিকটা ভেতরে যাঁরা উঁকি দিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই কমান্ড লাইন চেনেন। উইন্ডোজ ও আর (R)—এই দুটো কি একসঙ্গে চাপলে যে ডায়ালগ বক্সটি আসে, সেখানে cmd লিখে এন্টার চাপলেই চলে আসে এই কমান্ড লাইন। এটা আসলে শর্টকাট। চাইলে বাঁ কোণার সার্চ অপশনে cmd লিখেও খুঁজে দেখতে পারেন, ‘কমান্ড প্রম্পট’ নামে একটা অ্যাপ চলে আসবে। যাহোক, সে কালে এই কালো স্ক্রিনে টাইপ করেই সব কাজ করা হতো। কম্পিউটার ব্যবহার করতে লাগত প্রোগ্রামিংয়ের জ্ঞান। হাইপারকার্ড ছিল এর ব্যতিক্রম। সাধারণ মানুষও প্রোগ্রামিং ছাড়াই সহজে এটি ব্যবহার করতে পারত।
ওয়ার্ড কানিংহাম নামে একজন ‘টেকট্রোনিক্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ম্যাকিন্টোশের হাইপারকার্ডের অনুরাগী হয়ে পড়েন। তিনি কোড করে এই কার্ডের সঙ্গে নতুন ফিচার যোগ করেন। ফলে হাইপারকার্ড আরও বেশি উন্নত হয়। পরে অবশ্য ম্যাকিন্টোশ থেকে হাইপারকার্ড সরিয়ে নেয় অ্যাপল।
টিম বার্নার্স লি হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (এইচটিটিপি) তৈরির প্রেরণা পান এই হাইপারকার্ড থেকেই—এমন একটা কথা প্রচলিত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির পেই ইয়েন ওয়েই ইউনিক্স কম্পিউটারে চালানোর উপযোগী হাইপারকার্ডের মতো একটা সফটওয়্যার তৈরি করেন। নাম দেন ভায়োলা। ভায়োলার বিশেষত্ব হলো, এটি হাইপারকার্ডের মতো শুধু একটি কম্পিউটারে হাইপারলিঙ্কে যুক্ত না হয়ে টিম বার্নার্স লির ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে হাইপারকার্ডের বিরাট এক জগৎ হিসেবে হাজির হয়। এই ঘটনা উইকির ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ। উইকি হলো সাধারণ মানুষের ছড়িয়ে থাকা জ্ঞানের ভাণ্ডার। আর ভায়োলাই প্রথম ইন্টারনেটে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করে দেন। অবশ্য উইকি এসেছে আরও কিছুদিন পরে।
১৯৯৪ সালের দিকে কানিংহাম পার্ল প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। সেখানে যেকোনো ভিজিটর বা ব্যবহারকারী চাইলেই ওয়েবসাইটের কনটেন্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারতেন। এই ওয়েবসাইটের ধারণাটি আসে হ্যাকার কমিউনিটির ‘যে কেউ চাইলেই বিদ্যমান জ্ঞান ব্যবহার ও তার সঙ্গে নতুন জ্ঞান যুক্ত করতে পারবে’—এই দর্শন থেকে। সাধারণভাবে মনে হতে পারে, সবাই যদি ওয়েবসাইটের কনটেন্ট পাল্টে ফেলতে পারে, তাহলে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হবে। এখানেই সাধারণ মানুষের ভাবনার সঙ্গে হ্যাকার কমিউনিটি ও উইকি কমিউনিটিগুলোর পার্থক্য। এই কমিউনিটিগুলো প্রথমেই ধরে নেয়—মানুষ সাধারণত ভালো! আর এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই উইকিপিডিয়া ৩২০টিরও বেশি ভাষায় প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে।
ফিরে আসি কানিংহামের ওয়েবসাইটে। তিনি তাঁর টেকট্রোনিক্সে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, প্রোগ্রামার, বিশেষত হ্যাকার কমিউনিটির মানুষেরা একজন আরেকজনের কাজের ধরন অনুকরণ করতে পছন্দ করেন। কেউ যদি একটি সমস্যার কার্যকর সমাধান বের করতে পারেন, বাকি সবাই সেই পদ্ধতিতেই নিজেদের একইরকম সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেন। এভাবেই হ্যাকার কমিউনিটিতে সামষ্টিক জ্ঞানের পরিবেশ তৈরি হয়। হ্যাকার কমিউনিটির জ্ঞান একজায়গায় জমা রাখার জন্য আগে কার্যকর কোনো উপায় ছিল না। কানিংহামের নতুন ‘সবাই লিখতে পারে’ ধরনের ওয়েবসাইট সেই সমস্যার সমাধান হয়ে ওঠে। এখনো তাঁর ‘সিটু ডটকম’ ডোমেইনে সেই ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে এখন আর তা কেউ সম্পাদনা করতে পারে না।
এবার নাম দেওয়ার পালা। হ্যাকার কমিউনিটির ঐতিহ্য মনে রাখার মতো একটা নাম দিতে হবে। কানিংহাম সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে নিজের ওয়েবসাইটের নাম খুঁজছিলেন।
উইকিউইকিওয়েব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে প্রচুর উইকি জন্ম নেয়। এরমধ্যে ‘ইউজমড উইকি’ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৮২ সালে কানিংহাম স্ত্রীকে নিয়ে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে হানিমুনে গিয়েছিলেন। সেখানে হনুলুলু বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলোর ভেতরে যাওয়া-আসার জন্য ‘উইকি উইকি শাটল’ নামে শাটল বাস পরিষেবা ছিল। এখনো সেখানে এই বাস আছে। বিমানবন্দরে এই বাসের নাম দেখে কানিংহামের ভালো লেগে যায়। ‘উইকি’ হাওয়াইয়ান ভাষার শব্দ। এর মানে দ্রুত। ‘দ্রুত যাত্রী পরিবহন’ বোঝাতেই বাসের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উইকি উইকি শাটল’। দ্রুত শব্দটিকে বেশি জোর দিতে উইকি শব্দটি দুবার ব্যবহার করা হয়েছে। কানিংহাম নিজের ওয়েবসাইটের জন্য এই ‘উইকি’ শব্দটিই বেছে নিলেন। নাম দিলেন ‘উইকিউইকিওয়েব’। এটাই পৃথিবীর প্রথম সার্থক উইকি। এরপর এমন অনেক ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে, যেখানে সবাই লিখতে পারে, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারে। এসব ওয়েবসাইটের সাধারণ নাম হলো ‘উইকি’। এরপর ‘উইকি’ মানে দাঁড়ালো একধরনের ওয়েবসাইট, যেখানে সাধারণভাবে সবাই সম্পাদনা করতে পারেন।
উইকিপিডিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য উইকিগুলো এখনো উইকিউইকিওয়েবের নিয়মগুলো অনুসরণ করে এবং নিজেদের প্রয়োজনের সঙ্গে সেগুলো সমন্বয় করে ব্যবহার করে। শুধু আদর্শিক দিক থেকেই নয়, উইকিউইকিওয়েবের কারিগরি অনেক দিক এখনো সরাসরি অন্যান্য উইকিতে ব্যবহার করা হয়। এই জ্ঞানগুলো সংকলন করেই ২০০১ সালে ‘দ্য উইকি ওয়ে’ নামে একটি বই লেখেন কানিংহাম। উইকির ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহীদের জন্য এক মূল্যবান বই এটি।
‘কানিংহামস ল’ নামে একটা নীতি আছে। এই নীতি অনুসারে, ইন্টারনেটে কোনো প্রশ্নের জবাব পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় প্রশ্ন করা নয়, বরং অন্য কারো প্রশ্নের ভুল জবাব দেওয়া। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মানুষ প্রশ্নের জবাব দিতে এমনিতে হয়তো দেরি করবে; তবে অন্য কারো ভুল ধরতে সে দেরী করবে না। এই ভুল ধরতে গিয়েই সে হয়তো দ্রুত আপনার মূল প্রশ্নের জবাবও দিয়ে দেবে। একটু খেয়াল করলে হয়তো আশপাশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নীতির কিছু উদাহরণও পেয়ে যাবেন।
উইকিউইকিওয়েব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে প্রচুর উইকি জন্ম নেয়। এরমধ্যে ‘ইউজমড উইকি’ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর ‘মিটবলউইকি’ নামে আরেকটি উইকি তৈরি হয় শুধু অন্যান্য উইকিগুলো এবং সবচেয়ে বড় ‘উইকি কালচার’ নিয়ে আলোচনা ও ডকুমেন্টেশনের জন্য।
১৯৯০ সালের পর ইন্টারনেট যখন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হতে থাকে, তখন ইন্টারনেট কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া স্টার্ট আপগুলোর দাম যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে শুরু করেন নতুন ব্যবসায়ীরা। এই পুরো ঘটনাকে ‘ডটকম বাবল’ বা ‘ডটকম বুম’ বলা হয়। এই ডটকম বুমে তৈরি হওয়া নতুন কোম্পানিগুলোর একটা হলো ‘বমিস’। জিমি ওয়েলস, টিম শেল এবং মাইকেল ডেভিস এই কোম্পানি তৈরি করেন। বমিস নামের একটা মজার পূর্ণরূপ আছে, ‘বিটার ওল্ড মেন ইন স্যুটস’। এই নামের তাৎপর্য অবশ্য জিমি ওয়েলসই ভালো বলতে পারবেন।
নুপিডিয়ায় লিখতে হলে লেখককে নির্দিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি থাকতে হতো। পাশাপাশি সাত ধাপের কঠোর প্রক্রিয়ায় অন্তত দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে প্রকাশিত হতো প্রতিটি নিবন্ধ।
যাহোক, ওয়েবসাইট তো হলো। এখন এই কোম্পানির কাজ কী? কাজ নিয়ে তিন উদ্যোক্তা পড়লেন বিপাকে। প্রথমে একটা অনলাইন ডিরেক্টরি তৈরি করলেন, যেখানে ব্যবহৃত গাড়ির তথ্য পাওয়া যাবে এবং পুরোনো গাড়ি সেখান থেকেই কেনা যাবে। এতে তেমন সাড়া পাওয়া গেল না। এরপর অনলাইনে শুরু করতে চাইলেন খাবার অর্ডারের ব্যবসা। খাবারের বিজ্ঞাপনের খরচ তুলতেই হিমশিম অবস্থা। তাই সেটা বাদ দিয়ে শুরু করলেন ‘ইন্টারনেট ডিরেক্টরি’। এতে ভালোই লাভ হলো। এরপর ধীরে ধীরে তাঁরা বিশেষায়িত এলাকায় কাজ করা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে শুরু করলেন প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের পরিষেবা। ‘বমিস প্রিমিয়াম’ সাবস্ক্রিপশন করলে প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির সংগ্রহ উপভোগ করা যেত।
পরে বমিস নিয়ে আরও নতুন কাজ করার দিকে ঝুঁকলেন জিমি। অনেক আগে থেকেই ওপেন সোর্স, হ্যাকার কালচার, হাইপারকার্ড, উইকিউইকিওয়েব—সবগুলোই তিনি ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া উন্মুক্ত জ্ঞানের প্রতি তাঁর আলাদা দুর্বলতা ছিল। একটা অনলাইন বিশ্বকোষ বানানোর স্বপ্ন ছিল জিমির। বমিস কোম্পানির অধীনে তিনি শুরু করলেন ‘নুপিডিয়া’ নামে একটি অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষ। সেখানে সব কনটেন্ট ওপেন সোর্স লাইসেন্সের আওতায় থাকবে এবং সাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করা হবে। নুপিডিয়ার জন্য জিমি ল্যারি স্যাঙ্গার নামে এক ব্যক্তিকে ‘এডিটর ইন চিফ’ হিসেবে নিয়োগ দেন।
ল্যারি ছিলেন দর্শনে পিএইচডি। নুপিডিয়ায় লিখতে হলে লেখককে নির্দিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি থাকতে হতো। পাশাপাশি সাত ধাপের কঠোর প্রক্রিয়ায় অন্তত দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে প্রকাশিত হতো প্রতিটি নিবন্ধ। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধ লেখা শুরু করতে হলে সে বিষয়ে ন্যূনতম তিনজন লেখক থাকতে হতো। লেখকেরা সবাই ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী। এই কঠোর প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার কারণে প্রথম বছরে নুপিডিয়ায় মাত্র ২১টি নিবন্ধ যুক্ত হয়। সবাই বুঝতে পারছিলেন, নুপিডিয়া একটি ব্যর্থ প্রকল্প হতে যাচ্ছে।
নুপিডিয়াকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য জিমি এবং ল্যারি মিলে একটি ‘উইকি’ ওয়েবসাইট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে সবাই নিবন্ধ লিখতে পারবে। এই উইকি ওয়েবসাইটের নিবন্ধই পরে নুপিডিয়ায় যাচাই-বাছাই ও সংশোধন করে প্রকাশ করা হতো। সেখান থেকে জন্ম নেয় ‘উইকিপিডিয়া’।
‘উইকি’ আর ‘পিডিয়া’ শব্দের মিলিত রূপ উইকিপিডিয়া। (বলা বাহুল্য, এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে এই ‘পিডিয়া’ শব্দটি এসেছে।) একে ইংরেজিতে বলে পোর্টম্যান্টো। এরপর থেকে বিশ্বের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা উইকিপিডিয়ায় যুক্ত হতে থাকেন। প্রথম মাসেই ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় যুক্ত হয় ২০০-এর বেশি নিবন্ধ। আর প্রথম বছরে সেটি ১৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। উইকিপিডিয়া এত বেশি সাফল্য পায় যে এক পর্যায়ে নুপিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় বমিসও। উইকিপিডিয়া এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটের সবচেয়ে দামি ওয়েবসাইটগুলোর একটি হিসেবে রয়ে গেছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রতি মিনিটে।
উইকিপিডিয়ার সাহায্যে শুরু হলো একটি বিপ্লব। লিখিত জ্ঞানের পাশাপাশি ছবি, অডিও বা ভিডিও থেকেও জ্ঞান অর্জন করা যায়। সেই ধারণা থেকে জন্ম নেয় উইকিমিডিয়া কমন্স, উইকিডেটা, উইকিসোর্স, উইকিভয়েজ, উইকিস্পেশিজের মতো উইকিপিডিয়ার অনেকগুলো সহ-প্রকল্প। এই জগৎ বড় হতে হতে একটি বিশাল আন্দোলনের রূপ নেয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে উন্মুক্ত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার আন্দোলন। নাম উইকিমিডিয়া আন্দোলন। উইকিমিডিয়া বলতে বিশাল এই আন্দোলনকেই বোঝায়। উইকিমিডিয়া আন্দোলনের একটি প্রকল্প উইকিপিডিয়া।
কৃতজ্ঞতা: এই লেখা লিখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে অ্যান্ড্রু লির লেখা দি উইকিপিডিয়া রেভুল্যুশন: হাউ আ বাঞ্চ অব নোবডিজ ক্রিয়েটেড দ্যা ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট এনসাইক্লোপিডিয়া। অ্যান্ড্রু উইকিমিডিয়া আন্দোলনের সবচেয়ে পরিচিত মুখদের একজন, জিমি ওয়েলসের কাছের বন্ধু এবং আমার প্রিয় উইকিমিডিয়া ঐতিহাসিকদের একজন। ভদ্রলোকের সঙ্গে ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উইকিমিডিয়া সম্মেলন উইকিম্যানিয়ায় আমার দেখা হয়েছিল। এই বইটি সঙ্গে ছিল মূলত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখার জন্য। আর এর বাইরে উইকিমিডিয়া আন্দোলনে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা, অজস্র বই, ব্লগ, মেইলিং লিস্টের আলাপচারিতা, পুরো দুনিয়ার উইকিমিডিয়ানদের সঙ্গে আলোচনা এবং অজস্র উইকিমিডিয়া আউটরিচ ওয়ার্কশপের অভিজ্ঞতা প্রচুর সাহায্য করেছে।