বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি নতুন লেজার অ্যামপ্লিফায়ার বানিয়েছেন। এটি বর্তমান প্রযুক্তির তুলনায় দশ গুণ দ্রুত তথ্য পাঠাতে পারে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে অভাবনীয়ভাবে।
লেজার অ্যামপ্লিফায়ার আলোক রশ্মির তীব্রতা বাড়ায়। এই বিশেষ অ্যামপ্লিফায়ার ‘ব্যান্ডউইথ’ বাড়িয়ে তথ্য আদানপ্রদানের গতি বাড়াতে পারে প্রায় দশ গুণ। ব্যান্ডউইথ মানে নির্দিষ্ট সময়ে একটি নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে ডেটা বা তথ্য স্থানান্তরের সর্বোচ্চ হার। সহজ ভাষায় এটাকে বলতে পারেন ‘ডিজিটাল পাইপলাইন’। এই পাইপের প্রস্থ বেশি হওয়ার অর্থ ব্যান্ডউইথ বেশি হওয়া। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে এক সেকেন্ডে তত বেশি ডেটা প্রবাহিত হতে পারে।
আমাদের তথ্য বা ডেটা তৈরি এবং সেগুলো পাঠানোর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্ট্রিমিং হচ্ছে, স্মার্ট যন্ত্র বানানো হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও ব্যবহৃত হচ্ছে প্রচুর। এসব কারণে নোকিয়া বেল ল্যাবস তাদের গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ট্রাফিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা ট্রাফিক, অর্থাৎ ডেটা আদানপ্রদানের পরিমাণ হবে দ্বিগুণ।
নতুন এই অ্যামপ্লিফায়ার সিলিকন নাইট্রাইড দিয়ে তৈরি। এটি একটি শক্ত সিরামিক পদার্থ, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। অ্যামপ্লিফায়ার সর্পিলাকার ওয়েভগাইড ব্যবহার করে লেজার স্পন্দন পরিচালিত করে।
এখনকার অপটিক্যাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমগুলো ফাইবার অপটিক কেব্লের মধ্য দিয়ে লেজার আলোর স্পন্দন পাঠিয়ে তথ্য আদানপ্রদান করে। এই কেব্ল কাচের পাতলা সুতার মতো। এর মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ তথ্য পাঠানো যাবে, তা নির্ভর করে অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথের ওপর। তাই ডেটা ট্রাফিক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডউইথ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আধুনিক টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহৃত বেশির ভাগ লেজারের জন্য অ্যামপ্লিফায়ার দরকার হয়। এটি লেজারকে আরও অ্যামপ্লিফাই করে, অর্থাৎ সিগন্যালটাকে শক্তিশালী করে। স্টিমুলেটেড এমিশন প্রক্রিয়ায় কাজ করে এগুলো। মানে একটি ফোটন এসে আরেকটি ফোটনকে উত্তেজিত করে এবং সেই শক্তি একই দিকে নিঃসরণ করে।
বিজ্ঞানীরা এখন নতুন ধরনের লেজার প্রযুক্তি ডিজাইন করেছেন। এটি আগের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল অ্যামপ্লিফিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য পাঠাতে পারে। গবেষকদের এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে।
সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ফোটোনিকসের অধ্যাপক পিটার আন্দ্রেকসন বলেন, ‘অপটিক্যাল কমিউনিকেশন সিস্টেমে এখন যে অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহৃত হয়, তার ব্যান্ডউইথ প্রায় ৩০ ন্যানোমিটার। আমাদের অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথ ৩০০ ন্যানোমিটার। এটি বিদ্যমান সিস্টেমের চেয়ে প্রতি সেকেন্ডে দশ গুণ বেশি ডেটা পাঠাতে পারে।’
আলোর গতি যেহেতু ধ্রুব, তাই লেজারের আলো প্রচলিত লেজারের চেয়ে দ্রুত চলতে পারে না। কিন্তু বড় ব্যান্ডউইথের কারণে নতুন এই অ্যামপ্লিফায়ার প্রচলিত লেজারের চেয়ে দশ গুণ বেশি ডেটা পাঠাতে পারে।
নতুন এই অ্যামপ্লিফায়ার সিলিকন নাইট্রাইড দিয়ে তৈরি। এটি একটি শক্ত সিরামিক পদার্থ, উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। অ্যামপ্লিফায়ার সর্পিলাকার ওয়েভগাইড ব্যবহার করে লেজার স্পন্দন পরিচালিত করে। এতে সিগন্যালের ত্রুটিগুলো দূর হয়। পাশাপাশি এটির আকারও অনেকটা ছোট করা হয়েছে, যাতে একটি ছোট চিপে অনেকগুলো অ্যামপ্লিফায়ার বসানো যায়।
গবেষকেরা অন্য ধরনের ওয়েভগাইডের বদলে সর্পিলাকার বা স্পাইরাল ওয়েভগাইড বেছে নিয়েছেন। কারণ, এতে ছোট জায়গায় লম্বা অপটিক্যাল পথ তৈরি করা যায়।
আলোর গতি যেহেতু ধ্রুব, তাই লেজারের আলো প্রচলিত লেজারের চেয়ে দ্রুত চলতে পারে না। কিন্তু বড় ব্যান্ডউইথের কারণে নতুন এই অ্যামপ্লিফায়ার প্রচলিত লেজারের চেয়ে দশ গুণ বেশি ডেটা পাঠাতে পারে। এটি ১৪০০-১৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোতে কাজ করে। এই আলোর মান শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন, এটি রয়েছে স্বল্প তরঙ্গের ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোর সীমানার মধ্যে। গবেষণার পরের ধাপে দেখা হবে, এটি অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কেমন কাজ করে। যেমন দৃশ্যমান আলো (৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার) আর অবলোহিত আলোর বিস্তৃত পরিসরে (২০০০-৪০০০ ন্যানোমিটার) এর কাজের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা হবে।
নতুন এই অ্যামপ্লিফায়ারের অনেক সম্ভাব্য ব্যবহার আছে। মেডিক্যাল ইমেজিং, হলোগ্রাফি, স্পেকট্রোস্কোপি আর অণুবীক্ষণে এটি কাজে লাগবে। আর এটি ছোট হওয়ায় লেজার আরও ছোট ও সাশ্রয়ী হবে।
