বিমানবন্দরের এক্সরে স্ক্যানার কীভাবে ব্যাগের জিনিসপত্র পরীক্ষা করে

বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যাগ একটি স্ক্যানারের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়গেটি ইমেজ

বিমানবন্দরে ঢোকার পর যাত্রীদের ব্যাগ একটি বিশেষ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যায়। সব বিমানবন্দরেই দেখা যায় এই দৃশ্য। এই যন্ত্রটির নাম স্ক্যানার। এ যন্ত্রের সাহায্যে নিরাপত্তা কর্মীরা ব্যাগের ভেতরের জিনিসপত্র দেখতে পান। কোনো কিছুতে সন্দেহ হলে বা নিষিদ্ধ কিছু দেখলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। এতে বিমানযাত্রা হয় নিরাপদ। কিন্তু এই যন্ত্র কীভাবে ব্যাগের ভেতরের প্রতিটি জিনিস এত পরিষ্কারভাবে দেখায়?

বিমানবন্দরের এই স্ক্যানার যন্ত্রগুলোকে বলে টিএসএ (TSA) এক্সরে ব্যাগেজ স্ক্যানার। ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা টিএসএ অফিসাররা এই যন্ত্রে থাকা এক্সরে ও সিটি স্ক্যানারের সাহায্যে যাত্রীদের হ্যান্ড ব্যাগ ও লাগেজ পরীক্ষা করেন। স্ক্যানারগুলো এক্সরের সাহায্যে ব্যাগের ভেতরের জিনিসপত্রের ছবি তৈরি করে। সেগুলো নিরাপত্তা কর্মীদের সম্ভাব্য বিপজ্জনক জিনিসপত্র শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নতুন সিটি স্ক্যানারগুলো ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ছবিও দেখায়। ফলে ব্যাগ না খুলেও ভেতরের জিনিসপত্র দেখা যায়।

বিমানবন্দরের এই স্ক্যানার একটু বড়, আয়তাকার। কিন্তু দেখতে অনেকটা ছোট সুড়ঙ্গের মতো। যন্ত্রটির সামনের দিকে একটি চলমান কনভেয়র বেল্ট থাকে। সেখানে যাত্রীরা নিজেদের ব্যাগ রাখেন। এই বেল্ট ব্যাগটিকে ধীরে ধীরে ভেতরের সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। আর সেখানেই সম্পন্ন হয় স্ক্যানিংয়ের কাজ। যন্ত্রটির একপাশে একটি ডেস্ক থাকে, যেখানে একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা একটি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসেন। ওই স্ক্রিনে ব্যাগের ভেতরের সবকিছু রঙিন এক্সরে ছবি হিসেবে দেখা যায়।

আরও পড়ুন
বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যাগ একটি স্ক্যানারের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

২০০২ সালে ৯/১১ বিমান হামলার ঘটনার পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে টিএসএ। তখন থেকে তারা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT) সিস্টেম ব্যবহার করতে শুরু করে। প্রতিটি সিটি এক্সরে স্ক্যানার ব্যাগের ভেতর দিয়ে কম মাত্রার এক্সরে পাঠায়। এই রশ্মি বিভিন্ন জিনিসের ভেতর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে যায়। ফলে স্ক্যানারটি খুব সহজেই বুঝতে পারে ব্যাগে ধাতু, তরল বা জৈব পদার্থ আছে কি না। ত্রিমাত্রিক ছবির কারণে এখন আর ভুল জিনিস দেখে তেমন অ্যালার্ম বাজে না। মূলত সিটি প্রযুক্তি ব্যাগের চারপাশ থেকে শত শত ছবি তুলে একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে। এই ছবি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো যায়, যাতে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ব্যাগ না খুলেই ভেতরের জিনিসপত্র আরও ভালোভাবে দেখতে পান। যদি ভেতরে বিপজ্জনক কিছু থাকার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ব্যাগ খুলে কর্মীরা পরীক্ষা করেন।

বর্তমানে এই স্ক্যানিং প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির কারণে এখন যাত্রীদের জুতা না কেটে বা না খুলেও স্ক্যান করা সম্ভব। নতুন সিটি স্ক্যানারগুলো এত আধুনিক যে ল্যাপটপও ব্যাগ থেকে বের করতে হয় না। কিছু উন্নত মডেলের স্ক্যানার তো ব্যাগের তরল পদার্থে বিস্ফোরক আছে কি না, তাও শনাক্ত করতে পারে। যদিও সব বিমানবন্দরে এখনো এই ব্যবস্থা চালু হয়নি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন