কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন মুভিতে আমরা প্রায়ই মানুষের মতো আকৃতির রোবট দেখি। কোনটা মানুষ আর কোনটা রোবট, তাই বোঝা মুশকিল হয়ে ওঠে। সেসব রোবট যেমন মানুষের মতো হাঁটতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে উড়তে পারে আকাশেও। তবে এমন রোবট এখন আর কাল্পনিক নয়, বাস্তব। ইতালির গবেষকরা তৈরি করেছেন পৃথিবীর প্রথম উড়ন্ত মানবাকৃতির রোবট।
এই রোবটের নাম আয়রনকাব এমকে৩। কেতাবি নাম আইকাব। দেখতে একটি শিশুর মতো। কিন্তু ওটার পিঠে আছে জেটপ্যাক। এর সাহায্যে রোবটটি মাটি থেকে প্রায় পঞ্চাশ সেন্টিমিটার উঁচুতে উড়ে যেতে পারে। এই প্রথম কোনো মানবাকৃতির রোবট নিজ শক্তিতে মাটি ছেড়ে ওপরে উঠতে পারল।
নতুন এই রোবটটি দেখতে তিন ফুট লম্বা একটি শিশুর মতো। এর ওজন ২২ কেজি। মুখটি চকচকে আর মসৃণ, অনেকটা বাচ্চাদের খেলনার মতো। ২০০৯ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে রোবটটি।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ? এখন পর্যন্ত তো অনেক রোবটই বানানো হয়েছে। সেগুলো মানুষের মতো কথাও বলতে পারে। এমনকি দিতে পারে প্রশ্নের সঠিক জবাব।
ওড়ার জন্য এই রোবটে যুক্ত করা হয়েছে চারটি থ্রাস্টার। দুটি লাগানো হাতে, আর দুটি পিঠের জেটপ্যাকে। এই থ্রাস্টারগুলো থেকে গ্যাস বের হওয়ার জন্য রোবট ওপরে উঠতে পারে। অনেকটা রকেটের মতো। গ্যাসের তাপমাত্রা ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। কারণ, রোবটের শরীরে বিশেষ তাপ প্রতিরোধী আবরণ লাগানো আছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ? এখন পর্যন্ত তো অনেক রোবটই বানানো হয়েছে। সেগুলো মানুষের মতো কথাও বলতে পারে। এমনকি দিতে পারে প্রশ্নের সঠিক জবাব। তবে সেসব রোবট শুধু মাটিতে হাঁটতে পারে। হাতেগোনা কিছু রোবট উড়তেও পারে। কিন্তু সেগুলো আবার দেখতে ড্রোনের মতো। মানুষের মতো দেখতে এবং উড়তে পারে—এমন রোবট এটাই প্রথম। সাধারণ রোবটের চেয়ে বেশি কাজে লাগবে এ ধরনের রোবট।
ধরুন, কোনো ভূমিকম্পে বিল্ডিং ভেঙে পড়েছে। মানুষের পক্ষে সেখানে যাওয়া বিপজ্জনক। কিন্তু একটি উড়ন্ত রোবট সহজেই সেখানে পৌঁছে যেতে পারে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে খুঁজে বের করে আনতে পারে আহত মানুষদের। বন্যা বা অন্যান্য দুর্যোগের সময়ও এই রোবটকে কাজে লাগানো যাবে।
তবে আশার কথা হলো, সেসব জিনিস সমন্বয় করেই এই রোবট তৈরি হয়েছে। গবেষকদের প্রথম পরীক্ষায় রোবটটি সফলভাবে উড়তে পেরেছে। তবে এটি এখনো রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে।
শুধু উদ্ধার কাজেই নয়, এই রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে এমন জায়গায়, যেখানে মানুষের যাওয়া কঠিন। যেমন, উঁচু কোনো সেতুর নিচের দিকে মেরামত করার জন্য এই রোবট পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পারমাণবিক বিকিরণের এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করা বিপজ্জন। সেখানে পাঠিয়ে দিতে পারেন একটা আইকাব রোবট।
এবার রোবটের প্রযুক্তি নিয়ে একটু জানা যাক। কীভাবে ওড়ে এই রোবট? একটি রোবটকে ওড়ানো মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে যখন কোনো রোবটের মানুষের মতো হাত-পা থাকে। কারণ, এসব রোবটের প্রতিটি জয়েন্ট আলাদাভাবে নড়াচড়া করে। ওড়ার সময় এই সবকিছু ঠিকমতো সমন্বয় করতে না পারলে রোবট উল্টে যেতে পারে বা হারিয়ে ফেলতে পারে নিয়ন্ত্রণ।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষকরা একটি বিশেষ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এটি প্রতি মুহূর্তে হিসাব করে দেখতে পারে, রোবটের কোন জয়েন্ট কতটুকু নড়বে আর থ্রাস্টারগুলো কতটা জোরে চালু থাকবে। অনেকটা দক্ষ পাইলটের মতো আরকি।
আরও সহজ করে বলি। সাইকেল চালানোর সময় চাইলেও সাইকেল একদম সোজা চালাতে পারবেন না। ভারসাম্য রক্ষার জন্য অজান্তেই হাত একটু এদিক-সেদিক নড়াচড়া করবে। সাইকেলের ঘাড় লক করে দিলে ওটা চালাতেই পারবেন না, পড়ে যাবেন। সোজাও চালাতে পারবেন না। রোবটের ক্ষেত্রেও তেমনি পুরো শরীরের অসংখ্য অংশের সমন্বয় করতে হয়, নইলে মাটিতে পড়ে যাবে।
তবে আশার কথা হলো, সেসব জিনিস সমন্বয় করেই এই রোবট তৈরি হয়েছে। গবেষকদের প্রথম পরীক্ষায় রোবটটি সফলভাবে উড়তে পেরেছে। তবে এটি এখনো রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। রোবটটি শুধু সোজা ওপরে উঠতে পারে, এখনো আয়রনম্যানের মতো একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে পারে না। তাছাড়া বাতাস বা আবহাওয়ার প্রভাব এটি কীভাবে সামলাবে, তাও এখনো পরীক্ষা করা হয়নি।
ওড়ার জন্য এই রোবটে যুক্ত করা হয়েছে চারটি থ্রাস্টার। দুটি লাগানো হাতে, আর দুটি পিঠের জেটপ্যাকে। এই থ্রাস্টারগুলো থেকে গ্যাস বের হওয়ার জন্য রোবট ওপরে উঠতে পারে।
গবেষকরা এখন কাজ করছেন রোবটের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে। তাঁরা চান, রোবট যেন বাতাসের ধাক্কা সামলিয়েও স্থির থাকতে পারে। এছাড়া এই রোবটের হাত এখন খুলে রাখা হয়েছে থ্রাস্টার লাগানোর জন্য। পরের সংস্করণে আবার হাত যুক্ত করা হবে। তখন রোবটটি ওড়ার পাশাপাশি জিনিসপত্রও ধরতে পারবে।
এই প্রযুক্তি সফল হলে ভবিষ্যতে এসব রোবট মানুষের অনেক কাজই করে দিতে পারবে। শুধু তাই নয়, যেসব কাজ মানুষ করতে ভয় পায়, তাও করতে পারবে। প্রয়োজনে চলাচল করতে পারবে আকাশপথেও। এটি উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।