ব্যাটারি সম্পর্কে এই ৪টি ধারণা ভুল, সত্যিটা জানুন

আমরা সবাই কমবেশি ব্যাটারির ওপর নির্ভরশীল। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে টর্চলাইট—প্রতিদিন কাজে আমরা এই ছোট শক্তি সঞ্চয়কারী যন্ত্রগুলোর ওপর নির্ভর করি। কিন্তু ব্যাটারি কীভাবে কাজ করে, তা খুব কম মানুষই জানি। তাছাড়া ব্যাটারির প্রযুক্তি ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। ফলে আমাদের মধ্যে ব্যাটারি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সেরকম ৪টি ভুল ধারণা নিয়েই আজকের আলোচনা। দেখুন তো, এর মধ্যে কয়টি সম্পর্কে আপনি জানতেন। 

১. রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমানো উচিত নয়

আপনি হয়তো শুনেছেন, ফোনে সবসময় ১০০ ভাগ চার্জ দেওয়া ঠিক না। এতে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমালে ফোন শতভাগ চার্জ হয়ে থাকে। তাই রাতে ফোন বা ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে না ঘুমানোই ভালো। এই ধারণাটা একসময় সত্য ছিল। কিন্তু এখন প্রযুক্তি বদলে গেছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের ব্যাটারিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাতে সারা রাত ফোন চার্জে দিলেও সমস্যা নেই। কারণ, আপনার হয়ে কাজটা করে দেবে সফটওয়্যার।

বিষয়টা একটু বিস্তারিত বলি। সারা রাত ফোন চার্জে দিলেও সমস্যা নেই, এই কথাটা ঠিক। তবে এ কথার মানে এটা নয় যে, শত ভাগ চার্জ হলেও সমস্যা নেই। বর্তমানে ফোন ও ল্যাপটপে এমন সফটওয়্যার থাকে যে ব্যাটারি ৮০ ভাগের বেশি চার্জ নেয় না। অর্থাৎ আপনি ফোন চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও ফোন সর্বোচ্চ ৮০ ভাগ পর্যন্ত চার্জ নিয়ে আর নেবে না। আইফোনে এই ফিচারকে বলা হয় অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বলা হয় অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি। এই ফিচার চালু থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমাতে পারবেন। 

তবে এ কথা সত্য যে ফোনে ৪০-৮০ শতাংশের মধ্যে চার্জ রাখা ভালো। চার্জ একেবারে শূন্যতে নিয়ে গেলে বা ১০০ ভাগ চার্জ দিলে ব্যাটারিতে সমস্যা হয়। 

আরও পড়ুন

২. অ্যাপ বন্ধ করে রাখলে ব্যাটারি বাঁচে

ফোনের ব্যাটারি কমে গেলে অনেকেই যতগুলো সম্ভব অ্যাপ্লিকেশন ম্যানুয়ালি বন্ধ করে দেন। ভাবেন, এই অ্যাপগুলো রিসোর্স ব্যবহার করছে এবং সেগুলো বন্ধ করলে ব্যাটারি বেশি সময় চলবে। কিন্তু ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এভাবে কাজ করে না। প্রযুক্তিবিষয়ক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ডিভাইসে এমন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যাতে বর্তমানে অব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ব্যাটারি বাঁচানোর কিছু সিস্টেমও আছে। বেশিরভাগ ব্যাটারির ক্ষয় হয় স্ক্রিনে। তাই স্ক্রিনের ব্রাইটনেস বা উজ্জ্বলতা কমালে ব্যাটারি বাঁচানো সম্ভব। আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বর্তমানে ব্যাটারি সেভার মোড থাকে। এটি চালু করে রাখলে অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে আপডেট হওয়া বন্ধ থাকে। ফলে ব্যাটারি চলে বেশি সময়।

৩. চার্জ করার আগে ব্যাটারি পুরোপুরি শেষ করতে হয়

অনেকে মনে করেন, চার্জে দেওয়ার আগে ব্যাটারি পুরোপুরি ডিসচার্জ করা ভালো। মানে ব্যাটারির চার্জ পুরোপুরি শেষ হলে আবার চার্জে দেওয়া উত্তম। এ ধারণার ইতিহাস অনেক পুরানো। বিংশ শতাব্দীতে নিকেল-ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি প্রচলিত ছিল। তাদের জীবদ্দশার কোনো এক সময় ‘মেমরি ইফেক্ট’ এর গল্প চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ধারণা ছিল, ব্যাটারি পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে চার্জ দিলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা কমে যাবে। তবে এটা একেবারে সত্য ছিল না।

জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড ইলেক্ট্রোকেমিস্ট্রির একটি নিবন্ধ অনুযায়ী, এই ধারণার উৎপত্তি হয়েছিল বিমান ও মহাকাশ শিল্পের মাধ্যমে, যেখানে ব্যাটারিগুলো নিয়মিত ঠিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসচার্জ করে পুরোপুরি চার্জ করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার আপডেটের কারণে এখন আর ব্যাটারি পুরোপুরি ডিসচার্জ করতে হয় না। তাছাড়া বর্তমানে আধুনিক রিচার্জেবল ব্যাটারিতে আর নিকেল-ক্যাডমিয়াম ব্যবহার করা হয় না। পরিবর্তে এখন ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। এতে কোনো মেমরি ইফেক্ট নেই। তাই এখন আর ব্যাটারি পুরোপুরি ডিসচার্জ করে চার্জ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। 

আরও পড়ুন

৪. ব্যাটারি ফ্রিজে রাখতে হয়

কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাটারি ফ্রিজে রাখলে সেগুলো বেশি দিন টিকবে। এই ধারণার পেছনে যুক্তি হলো, ব্যাটারি ঠান্ডা করলে এর ভেতরের রাসায়নিক প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে ব্যাটারি ব্যবহার না করেও চার্জ হারায় কম। কিন্তু এই দাবির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা পাওয়া যায়নি। বরং সব বড় ব্যাটারি কোম্পানি পরামর্শ দেয়, ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্যাটারি রাখতে। ব্যাটারি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ডুরাসেল তাদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ব্যাটারি ফ্রিজে রাখলে এর স্টোরেজ লাইফ বাড়ে না।

মূলত ব্যাটারি ফ্রিজে রাখার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। বিশেষ করে ঘনীভবনের কারণে। ফ্রিজ থেকে বের করলে ব্যাটারির ওপর জমা হতে পারে ঘনীভূত পানি। এতে ব্যাটারির গায়ে থাকা লেবেল বা সিল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি ব্যাটারির সংযোগ পয়েন্টে ধরতে পারে মরিচা।

তবে এটা ঠিক, ব্যাটারি রাখার জন্য তাপমাত্রার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। খুব গরম জায়গায় যেমন চুলার আশপাশে নিয়মিত ব্যাটারি রাখলে সেগুলো দ্রুত নষ্ট হয়। ব্যাটারি শুকনা জায়গায় সবচেয়ে ভালো থাকে। ৬৮-৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ব্যাটারি রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।

সূত্র: পপুলার মেকানিকস 

আরও পড়ুন