চ্যাটজিপিটির কল্যাণেই বড় পরিসরে মুক্তবাজারে যাত্রা শুরু এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। এরপর থেকেই নানা ক্ষেত্রে চলছে এআইয়ের জয়যাত্রা। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গুগল বাজারে এনেছে জেমিনি, মাইক্রোসফট এনেছে কো-পাইলট। কিন্তু জিপিটির জয়যাত্রা যেন থামছে না। এবারে স্বয়ং গুগল ও মাইক্রোসফটকে রীতিমতো বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে প্রস্তুত হয়ে গেছে চ্যাটজিপিটি।
গুগলের অন্যতম বড় দুটি সেবার একটি সার্চ ইঞ্জিন, আরেকটি এর ক্রোম ব্রাউজার। প্রতিদিন ১৪ বিলিয়নের বেশি সার্চ করা হয় গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চ্যাটজিপিটিতে এখন ৩৭ মিলিয়নের বেশি সার্চ করা হয়। পার্থক্যটা বিশাল, কিন্তু চ্যাটজিপিটির যাত্রা কেবল তো শুরু হলো! এই ধারায় বড় ধাক্কা হতে পারে ওপেনএআইয়ের নতুন উদ্যোগ।
গুগলের ক্রোম ব্রাউজারের প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে নতুন ওয়েব ব্রাউজার চালু করতে যাচ্ছে ওপেনএআই। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রাউজারটি বাজারে আনতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যাচ্ছে, এই ব্রাউজারে ‘অপারেটর’ নামের একটি এআই এজেন্ট যুক্ত থাকতে পারে। এই এজেন্ট ব্যবহারকারীর হয়ে রেস্তোরাঁয় টেবিল বুক করা, অনলাইন ফরম পূরণ করাসহ বিভিন্ন কাজ করতে পারবে। ব্রাউজারে থাকবে সরাসরি চ্যাটজিপিটির ইন্টারফেস, ফলে ব্যবহারকারীদের আলাদা করে ওপেনএআইয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে জিপিটি ব্যবহার করতে হবে না। বলে রাখি, এখনো চ্যাটজিপিটি সার্চ আছে, তবে এটি অতটা ইউজারফ্রেন্ডলি নয়, অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের জন্য অত সুবিধাজনক নয়। সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে নতুন এ ব্রাউজারে।
মজার ব্যাপার হলো, ওপেনএআই এই ব্রাউজার তৈরির জন্য গুগলেরই ওপেন সোর্স প্রকল্প ক্রোমিয়াম ব্যবহার করছে। এর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হচ্ছে ব্রাউজারটি। বলা বাহুল্য, গুগলের এই ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ওপর ভিত্তি করেই চলছে ক্রোম। এ যেন মাছের তেলে মাছ ভাজা! বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ব্রাউজার গুগলের জন্য হতে পারে বড় হুমকি।
ওপেনএআই চ্যাটজিপিটিতে ‘ওপেনসোর্স’ স্প্রেডশিট ও স্লাইড তৈরির সুবিধা যুক্ত করার জন্য ‘এআই এজেন্ট’ বানানোর কাজ শুরু করেছে।
ওদিকে গুগলের চলছে শনির দশা। সার্চ ইঞ্জিন বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্যের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে গুগলকে আংশিক বিভক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ক্রোম বিক্রি করতে বাধ্য হতে পারে গুগল। ওদিকে ওপেনএআইয়ের ব্রাউজার এলে, ওতেই যদি সরাসরি সার্চ করে মানুষ, তাহলে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে গুগল। দ্য ভার্জ-এর সূত্র বলছে, এতে করে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাসে।
এই তো গেল গুগল, এবারে মাইক্রোসফটের কথা বলি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওপেনএআই চ্যাটজিপিটিতে ‘ওপেনসোর্স’ স্প্রেডশিট ও স্লাইড তৈরির সুবিধা যুক্ত করার জন্য ‘এআই এজেন্ট’ বানানোর কাজ শুরু করেছে। ‘ওপেনসোর্স’ মানে, সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত—এতে কমতে পারে ব্যবহারকারীদের মাইক্রোসফট নির্ভরতা। মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এর ‘ইউআই’ বা ‘ইউজার ইন্টারফেস’ ইউজারফ্রেন্ডলি। সাধারণত ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলো অত সুবিধাজনক নয়। কিন্তু সব কাজ যদি চ্যাটজিপিটিকে কমান্ড বা নির্দেশ দিলেই হয়ে যায়, তাহলে আর ইউজার ইন্টারফেস নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না ব্যবহারকারীদের। ‘এআই এজেন্ট’ সাধারণত বিশেষ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বানানো হয়। ওপেনএআই যে এই কাজে দক্ষ, তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।
ফলে এই সুবিধা চালু হলে চ্যাটজিপিটির ইন্টারফেসেই ব্যবহারকারীরা চার্ট, টেবিল বা স্লাইড তৈরির জন্য সহজ নির্দেশনা ও বাটন দেখতে পাবেন। এভাবেই সহজেই করা যাবে স্প্রেডশিড ও স্লাইডের বিভিন্ন কাজ। তখন মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর মতো ব্যয়বহুল সেবা আলাদা করে ব্যবহার করতে হবে না। তবে বড় পরিসরে এসব সেবা ব্যবহারের জন্য চ্যাটজিপিটিকে যে কিছুটা ‘ফি’ দিতে হবে, তা বলা বাহুল্য। সেটা ‘প্লাস’ নাকি ‘প্রো’ ব্যবহারকারী, ব্যক্তিগত নাকি প্রতিষ্ঠানের জন্য—এসবের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে।
ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তথা সিইও স্যাম অল্টম্যান অবশ্য স্প্রেডশিড ও স্লাইডের এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। স্বাভাবিক। চ্যাটজিপিটির বড় বিনিয়োগকারীদের একটি মাইক্রোসফট। বিনিময়ে মাইক্রোসফটকে দীর্ঘদিন বেশ কিছু ‘এক্সক্লুসিভ’ এআই সুবিধা দিয়েছে ওপেনএআই। ওদিকে এখনো ছবি তৈরির জন্য মাইক্রোসফটের ‘ডাল-ই’ ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠান দুটির সম্পর্কের ধরন বদলাচ্ছে, মাইক্রোসফট চাইছে এআইতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে। কাজেই চ্যাটজিপিটিও যে সেই চেষ্টা করবে, তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
আসলেই কী হয়, তা জানতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।