ফোনের ব্যাটারি চার্জিংয়ে খরচ কত

ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ধারণক্ষমতা mAh-এ দিয়ে প্রকাশ করা হয়ছবি: মিডজার্নির সাহায্যে

আমরা রাতে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে গেলেও ফোন চার্জ করতে ভুলি না। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার ফোনের ব্যাটারি একবার পুরো চার্জ হতে কী পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন? জানতে ইচ্ছা হয়েছে, সে জন্য কত টাকা খরচ হয়? পুরো চার্জ হওয়া একটি ব্যাটারি আপনার ফোনকে কতক্ষণ সচল রাখতে পারে, সেটি কখনো হিসাব করে দেখেছেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে ফোনের ব্যাটারির গায়ে লেখা ‘mAh’ দিয়ে কী বোঝানো হয়।

নিশ্চয়ই দেখেছেন, যেকোনো ফোনের ফিচার লিস্টে ব্যাটারি প্রসঙ্গে যে বিষয় সবার প্রথমে লেখা থাকে, তা সেই ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ধারণক্ষমতা। এটি mAh-এ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। mAh মানে Miliampere-Hour বা মিলিঅ্যাম্পিয়ার-ঘণ্টা।

ধরা যাক, আপনার ফোনের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৪০০০ mAh। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যাটারিটি ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার বা ৪ অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ সরবরাহ করতে পারে ১ ঘণ্টায়। অথবা ২০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ সরবরাহ করতে পারে ২ ঘণ্টা বা ১০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ সরবরাহ করতে পারে ৪ ঘণ্টা ধরে। তাহলে আপনার ব্যাটারিটি ফুল চার্জ অবস্থায় ফোনটি কত ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে?

সমীকরণটি খুবই সহজ। ধরুন, আপনার ৪০০০ mAh-এর ফোন সচল অবস্থায় প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যবহার করে। এর মানে, ব্যাটারিটি প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার করে ব্যবহারের মাধ্যমে ৪ ঘণ্টায় মোট ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যবহার করে ফেলবে।

আরও পড়ুন
যেকোনো ফোনের ফিচার লিস্টে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি বা ধারণক্ষমতা mAh-এ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। mAh মানে Miliampere-Hour বা মিলিঅ্যাম্পিয়ার-ঘণ্টা।

কিন্তু এই একই ধারণক্ষমতার ব্যাটারি যদি এমন কোনো ফোনে ব্যবহৃত হয়, যেটার প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার প্রয়োজন, তাহলে সেই একই ব্যাটারি ফোনকে সচল রাখতে পারবে ৪০০০/৫০০ = ৮ ঘণ্টা। বাস্তবে এই ব্যাপ্তিকাল কিছুটা ভিন্ন হয় দুটি কারণে। এক. একটি ফোন পুরো সময় একই হারে ব্যাটারি থেকে তড়িৎ প্রবাহ ব্যবহার করে না। দুই. ফোনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার হার্ডওয়্যারের সঙ্গে কতটা অপ্টিমাইজড, তার ওপর নির্ভর করে ফোনটির কতটুকু চার্জ প্রয়োজন প্রতি ঘণ্টায়। অপ্টিমাইজড মানে, হার্ডওয়্যারের ওপর কত কম চাপ ফেলে, কত কম তড়িৎ প্রবাহ ব্যবহার করে একটি সফটওয়্যার চলতে পারছে, সেটি। যে কারণে অল্প mAh-এর ব্যাটারি নিয়েও গুগলের পিক্সেল বা আইফোন দীর্ঘ সময় চলতে পারে। অর্থাৎ ফোনের নেটওয়ার্ক, ওয়াই–ফাই, ব্লুটুথ, সার্কিট ডিজাইন, ভোল্টেজ, ব্যাটারির চার্জ খরচের হার, কনফিগারেশন, কর্মদক্ষতা, এমনকি ইউজার ডিফাইন্ড কিছু সেটিংস ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে ব্যাটারির এই ব্যাপ্তিকাল।

কিন্তু এই ব্যাটারি শূন্য থেকে ফুল চার্জ হতে কত কুলম্ব চার্জের প্রয়োজন হবে? mAh-এর সঙ্গে চার্জের একক কুলম্বের একটি সরল সম্পর্ক আছে। ১ mAh = ৩.৬ কুলম্ব। আপনার ব্যাটারিটি যত mAh-এর, তার ৩.৬ গুণসংখ্যক কুলম্ব চার্জ প্রয়োজন এটিকে পুরো চার্জ করতে। অর্থাৎ ৪০০০ mAh-এর একটি ব্যাটারি ফুল চার্জ করতে ৪০০০^৩.৬ = ১৪ হাজার ৪০০ কুলম্ব চার্জ প্রয়োজন হবে।

এবার আসি পরের প্রশ্নে। এই ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ করতে কত টাকা খরচ হবে?

আরও পড়ুন
mAh-এর সঙ্গে চার্জের একক কুলম্বের একটি সরল সম্পর্ক আছে। ১ mAh = ৩.৬ কুলম্ব। আপনার ব্যাটারিটি যত mAh-এর, তার ৩.৬ গুণসংখ্যক কুলম্ব চার্জ প্রয়োজন এটিকে পুরো চার্জ করতে।
ব্যাটারিটি চার্জ করতে ০.০২ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বা ০.০২ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে।
ছবি: মিডজার্নির সাহায্যে

এই হিসাব করতে ব্যাটারির চার্জিংকে প্রথমে ওয়াট-ঘণ্টায় (Wh) প্রকাশ করতে হবে। সে জন্য ফোন চার্জারের তড়িৎ প্রবাহের হার ও ভোল্টেজ জানতে হবে।

ধরুন, ৪০০০ mAh বা ৪ Ah-এর ব্যাটারি চার্জ করতে আপনি ৫ ভোল্ট ও ২ অ্যাম্পিয়ারের একটি চার্জার ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ এই চার্জার ৫^২ = ১০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন।

এর মানে ১০ ওয়াটের এই চার্জার প্রতি ঘণ্টায় ৫ ভোল্টে ২ অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ দিতে পারবে ব্যাটারিতে। এতে প্রতি ঘণ্টায় প্রয়োজন হবে ১০ ওয়াটের, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় চার্জ করতে ব্যয় হচ্ছে ১০ ওয়াট-ঘণ্টা। যেহেতু ব্যাটারিটি ফুল চার্জ করতে ৪ Ah/২ অ্যাম্পিয়ার = ২ ঘণ্টা প্রয়োজন হবে, তাই ১০ ওয়াটের চার্জারটি দিয়ে পুরো চার্জ করতে ২^১০ ওয়াট-ঘণ্টা = ২০ ওয়াট-ঘণ্টা বা ০.০২ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ব্যয় হবে।

বিদ্যুৎ ব্যবহারের একক ১ ইউনিট সমান ১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা। তার মানে ব্যাটারিটি চার্জ করতে ০.০২ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বা ০.০২ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। আপনার বৈদ্যুতিক সংযোগে যদি ১ ইউনিটের মূল্য ১০ টাকা হয়, তাহলে ৪০০০ mAh-এর ব্যাটারিটি একবার ফুল চার্জ করতে খরচ হবে ০.০২ ইউনিট ^ ১০ টাকা = ০.২ টাকা বা ২০ পয়সা।

এভাবে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ও চার্জারের ওয়াটেজ দিয়ে সহজে হিসাব করে ফেলতে পারবেন আপনার ফোন চার্জ করতে মাসে কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।

এই যে এত অল্প পয়সায়, এত অল্প চার্জে একটি ফোন এত দিন ব্যবহার করতে পারেন, এর পেছনে আছে লাখো বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীর প্রচুর শ্রম।

এই ছোট্ট লেখায় আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। ফাস্ট চার্জিং কীভাবে কাজ করে। এ নিয়ে পরের কোনো লেখায় আলোচনা করব।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন