বলা হয়, শিল্প বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি ছিল বাষ্পইঞ্জিন। সপ্তদশ শতক থেকে বাষ্পইঞ্জিন নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। ১৭৬২ সালে ব্রিটিশ উদ্ভাবক টমাস নিউকোমেন বায়ুচাপ কাজে লাগানোর একটা ব্যবস্থা তৈরি করেন। বায়ুচাপ কাজে লাগিয়ে তিনি এ যন্ত্র বানান। একে প্রথম ও সফল বাণিজ্যিক বাষ্পইঞ্জিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে বাষ্পের চাপ ব্যবহার করে কাজ করার উপায় জানা যায় আরও অনেক আগে। গ্রিক-মিসরীয় গণিতবিদ ও আলেকজান্দ্রিয়ার প্রকৌশলী হেরন প্রথম শতাব্দীতে একটি যন্ত্রের বর্ণনা লিখে যান। যন্ত্রটির মূলনীতি মিলে যায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সঙ্গে। এর নাম আওলিপিলা। এটি মূলত একটি সাধারণ বাষ্প-টার্বাইন। টার্বাইনের ভেতরে রাখা হতো পানি। সেই পানি উত্তপ্ত করলে টার্বাইনের চারপাশের একাধিক বাঁকা নল দিয়ে উচ্চ চাপে বাষ্প বের হতো। যন্ত্রটি এমনভাবে একটি স্ট্যান্ডের ওপর রাখা হতো, যেন অল্প ধাক্কাতে ঘুরতে পারে। অর্থাৎ তাপ দেওয়ার ফলে হেরনের এই ইঞ্জিনে তৈরি হতো ঘূর্ণন শক্তি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরনের বর্ণনায় এ যন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ফলে পরবর্তীতে এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। ধারণা করা হয়, তৎকালীন গ্রিকদের মজা দেওয়ার জন্য বা বিস্মিত করার জন্য যন্ত্রটি ব্যবহৃত হতো। ষোড়শ শতকে বাষ্পইঞ্জিন তৈরির আগে হেরনের এ আবিষ্কার বেশ জনপ্রিয় হয়। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি শিশুদের বিজ্ঞান শেখাতে আবার তৈরি করেন।
যন্ত্রটি এত সরল যে হাতে-কলমে সহজে তৈরি করা যায়। এমনকি বাষ্প ছাড়া শুধু পানির প্রবাহ ব্যবহার করেও তৈরি করা সম্ভব। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা শিশুদের বিজ্ঞান প্রজেক্ট হিসেবে এমন একটি নির্দেশিকাও দিয়েছে। আগ্রহীরা চাইলে তৈরি করে দেখতে পারেন।
এ জন্য লাগবে একটি কোমল পানীয়ের ক্যান, ছিদ্র করার জন্য আলপিন ও সুতো। প্রথমে কোমল পানীয়ের বোতল খালি করতে হবে। তারপর খুব সাবধানে ক্যানের ওপরের ছবির মতো করে আড়াআড়িভাবে ছিদ্র করতে হবে।
এরপর সুতা দিয়ে মুক্তভাবে ক্যানটিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে কোনোকিছুর সঙ্গে। ছিদ্রগুলো চেপে পানি ভরতে হবে ক্যানে। পানি ভরার পর ছিদ্র ছেড়ে দিলেই দেখা যাবে, বোতলটি ঘোরা শুরু করেছে। পানির প্রবাহ চাপের কারণে এ ঘূর্ণন হবে। হেরনের মূল যন্ত্রের চেয়ে এটা একটু ভিন্ন হলেও মূলনীতি একই।