মহাকাশে ৯ মাস টিকে ছিল মসের স্পোর

মাঝের বাদামি রঙের স্পোরভরা ক্যাপসুলগুলো পুরোপুরি মহাকাশের খোলা পরিবেশে রাখা হয়েছিলছবি: তোমোমিচি ফুজিতা

দ্য মার্শিয়ান মুভিতে দেখা গিয়েছিল, মঙ্গলে টিকে থাকার জন্য নায়ক ম্যাট ডেমন আলু চাষ করেছিলেন। গবেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে মসই একদিন অন্য গ্রহের ধুলা আর পাথরকে উর্বর মাটিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করতে পারে।

ফিজকোমিট্রেলা প্যাটেন্স আমাদের পরিচিত এক ধরনের মস। সাধারণত কাদা বা পরিত্যক্ত জমিতে এই মস জন্মায়। এবার গবেষকেরা দেখেছেন, এই মসের স্পোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরের অংশে আটকে থেকে কমপক্ষে নয় মাস বেঁচে থাকতে পারে। পৃথিবীতে ফিরে এসে নতুন করে জন্মাতেও পারে।

ম্যাট ডেমনের সেই আলুর মতো মস খাওয়ার উপযোগী না হলেও মহাকাশ অভিযানের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির গবেষক দলের প্রধান তোমোমিচি ফুজিটা বলেছেন, ‘মস খাদ্য তালিকায় না থাকলেও এর অসাধারণ সহনশীলতা মহাকাশে টেকসই সিস্টেম তৈরিতে নতুন পথ দেখিয়েছে। মস অক্সিজেন তৈরি, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ বা মাটি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

মহাকাশে মসের টিকে থাকা নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা নয়। বিজ্ঞানীরা শৈবালের বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে আগেও গবেষণা করছেন। মহাকাশেও নমুণা পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীতে এই উদ্ভিদ চরম পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মরুভূমির মস সিনট্রিসিয়া ক্যানিনার্ভিসের (Syntrichia caninervis) ওপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে মঙ্গল সদৃশ পরিবেশেও এরা টিকে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন
গবেষকেরা দেখেছেন, ফিজকোমিট্রেলা প্যাটেন্স মসের স্পোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরের অংশে আটকে থেকে কমপক্ষে নয় মাস বেঁচে থাকতে পারে।

আইসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ফুজিটা ও তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা শৈবালের তিনটি ভিন্ন ধরনকে মহাকাশসদৃশ পরিবেশে পরীক্ষা করে দেখেছেন। দেখা গেছে, স্পোর বহনকারী স্পোরাঞ্জিয়াম নামে আচ্ছাদিত গঠনটি সবচেয়ে বেশি সহনশীল। এটি অনেক বেশি (প্রায় ১ লাখ জুল/মিটার²) ইউভিসি রেডিয়েশনের পরেও অঙ্কুরোদ্গম করতে পেরেছে। আরও পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই স্পোরাঞ্জিয়ামের ভেতরের স্পোরগুলো ভ্যাকুয়াম, তীব্র ঠান্ডা, উচ্চ তাপমাত্রা ও রেডিয়েশন সহ্য করতে পারে।

পরের ধাপে গবেষকেরা এই আচ্ছাদিত স্পোরগুলোকে সিগনাস এনজি-১৭ মহাকাশযানে করে মহাকাশ স্টেশন আইএসএস-এ পাঠান। এগুলোকে আইএসএসের বাইরের অংশে আটকে রাখা হয় ৯ মাস ধরে।

মহাকাশ যাত্রা শেষে স্পোরগুলোর বেশিরভাগই পৃথিবীতে অঙ্কুরোদ্গম করতে পেরেছে
ছবি: চ্যাং-হিউন ম্যাং এবং মাইকা কোবায়াশি

পৃথিবীতে ফেরার পর দেখা যায়, সব নমুনাই উচ্চ হারে অঙ্কুরোদ্গম করেছে। যেগুলো পুরোপুরি মহাকাশের ইউভি রেডিয়েশনের সামনে ছিল, সেগুলোর অঙ্কুরোদ্গম হার ৮৬ শতাংশ। পৃথিবীতে থাকা স্পোরের হার ছিল ৯৭ শতাংশ। তবে মহাকাশে থাকা নমুনায় ক্লোরোফিল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানী ফুজিটা বলেছেন, ‘যদি এমন স্পোর আন্তঃগ্রহ ভ্রমণের সময় দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে এবং পরে পানি ও তাপ পেলে আবার জেগে উঠতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এগুলো পৃথিবীর বাইরে নতুন ইকোসিস্টেম গঠনে সাহায্য করবে।’

আরও পড়ুন
স্পোর বহনকারী স্পোরাঞ্জিয়াম নামে আচ্ছাদিত গঠনটি সবচেয়ে বেশি সহনশীল। এটি অনেক বেশি ইউভিসি রেডিয়েশনের পরেও অঙ্কুরোদ্গম করতে পেরেছে।

তবে তিনি সতর্ক করেছেন, গবেষণাটি শুধু মহাকাশের পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে। বিভিন্ন মহাজাগতিক পরিবেশে, যেমন ভিন্ন মাধ্যাকর্ষণ, বায়ুমণ্ডল বা রেডিয়েশনের মাত্রায় মস আসলে জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারবে কিনা, তা এখনো জানা যায়নি।’

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেটি ইনস্টিটিউটের গবেষক আগাতা জুপানস্কা এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, স্পোর বা বীজের মতো শুকনা সুপ্ত জীবের গঠন সাধারণত নানা চরম পরিবেশ বেশি সহ্য করতে পারে। এটি আগেই জানা ছিল। মহাকাশে বীজ নিয়ে এর বাইরে এমন পরীক্ষা আগেও হয়েছে।

আগাতা জুপানস্কা সতর্ক করেছেন, ‘আইএসএসের বাইরের পরিবেশ কঠিন হলেও তা চাঁদ বা মঙ্গলের মতো মহাকাশের জটিলতা পুরোপুরি তুলে ধরে না। মহাকাশে উদ্ভিদের আসল মূল্য তখনই পাওয়া যাবে, যখন এরা সক্রিয়ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। স্পোরের টিকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি অন্য গ্রহে উদ্ভিদ জন্মানোর প্রাথমিক ধাপ।’

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, কিশোর আলো

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন