এক বেলা বেশি খেলে কি ওজন বাড়ে

বিয়েবাড়িতে এক বেলা পেটপুরে খাওয়ার পরই ওজন মেপে দেখলেন ২ কেজি বেড়ে গেছে! ভাবছেন, এক রাতেই এত চর্বি জমল কীভাবে? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো কারসাজি? এক বেলার খাবারে আসলেই কি মোটা হওয়া সম্ভব?

একবেলা ভারী খাবার খেলেই মানুষ মোটা হয়ে যায় নাছবি: ডিপোসিট ফটোস

শুরুতে কল্পনায় একটু খাওয়া-দাওয়া করা যাক! ধরুন, গতকাল রাতে বন্ধুর বিয়ে বা পারিবারিক কোনো উৎসবে গিয়েছেন। বিরিয়ানি, রোস্ট, কাবাব কিছুই বাদ দেননি। ডায়েট চার্টকে এক রাতের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে পেট ভরে খেয়েছেন। পরদিন সকালে ভয়ে ভয়ে ওজন মাপার মেশিনে দাঁড়ালেন। ও মা! এক রাতেই ওজন বেড়ে গেছে দুই-তিন কেজি। মাথায় হাত! মনে মনে ভাবছেন, মাত্র এক বেলার খাবারে এত ওজন বাড়ল কীভাবে?

আরও পড়ুন

একটু শান্ত হোন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার কাইনসিওলজি বিভাগের প্রধান জেমি এ. কুপারের মতে, আপনি মেশিনে যে বাড়তি ওজন দেখছেন, তার পুরোটাই আসলে মেদ নয়। কুপার বলছেন, ‘ভুরিভোজের পরদিন সকালে নিজের ওজন দেখে যে ধাক্কাটা আমরা খাই, তার পেছনে মূল কারিগর পানি এবং লবণ। 

উৎসবের বা রেস্তোরাঁর খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। অতিরিক্ত লবণ শরীরকে পানি ধরে রাখতে বাধ্য করে। পোলাও, বিরিয়ানি বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট। এগুলো শরীরে গিয়ে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা হয়। মজার ব্যাপার হলো, গ্লাইকোজেন পানির অণুর সঙ্গে মিশে থাকতে পছন্দ করে। ফলে শরীরে সাময়িকভাবে পানির ওজন বেড়ে যায়। এ ছাড়া আপনি যে বিপুল পরিমাণ খাবার খেয়েছেন, তার নিজস্ব একটা ওজন আছে। যতক্ষণ না সেটা হজম হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ মেশিনে ওজন বেশি দেখাবেই।

আরও পড়ুন
যদি টানা চার দিনের ছুটিতে কেউ প্রতিদিন অতিরিক্ত ৯০০ ক্যালরি করে খায়, তবে সপ্তাহ শেষে তার শরীরে প্রায় আধা কেজি চর্বি জমতে পারে।

তাহলে সত্যি সত্যি মোটা হতে কতটা খেতে হয়? বিজ্ঞান বলছে, শরীরে প্রায় আধা কেজি চর্বি জমাতে হলে আপনাকে আপনার প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ ক্যালরি খেতে হবে। সাধারণত এক বেলার দাওয়াতে, তা যতই এলাহি হোক না কেন, ৩ হাজার ৫০০ অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া খুব কঠিন। তাই এক বেলার ভুরিভোজে আপনি মোটা হয়ে যাবেন না। 

সমস্যাটা এক বেলার খাবারে নয়, সমস্যা হলো উৎসবের রেশ ধরে টানা কয়েক দিন খেয়ে যাওয়া। ফ্রিজে রয়ে যাওয়া বিরিয়ানি, মিষ্টি বা কেক যখন আপনি পরের দুই-তিন দিন ধরে খেতে থাকেন, তখনই ক্যালরির গ্রাফ ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, যদি টানা চার দিনের ছুটিতে কেউ প্রতিদিন অতিরিক্ত ৯০০ ক্যালরি করে খায়, তবে সপ্তাহ শেষে তার শরীরে প্রায় আধা কেজি চর্বি জমতে পারে। আর ডেজার্ট বা কোমল পানীয়র যুগে অতিরিক্ত ৯০০ ক্যালরি খাওয়া মোটেও কঠিন কিছু নয়। 

দুঃখের বিষয় হলো, গবেষণায় দেখা গেছে উৎসবের সময় মানুষ যে ওজনটা বাড়ায়, তার সবটা পরে কমে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছুটির দিনে বাড়ানো ওজনের প্রায় ৫৭ শতাংশ পরের বসন্তকাল পর্যন্ত মানুষের শরীরে থেকে যায়। অর্থাৎ ওই বাড়তি ক্যালরিগুলো শরীরে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে।

তাহলে উপায়? ভয় পেয়ে খাওয়া বন্ধ করার দরকার নেই। ড. কুপারের পরামর্শ হলো, উপভোগ করুন, কিন্তু অপরাধবোধে ভুগবেন না। এক বেলা ভারী খাবার খেলে পরের বেলা হালকা খান। সব আইটেম না খেয়ে যেগুলো আপনার খুব প্রিয়, সেগুলো অল্প করে খান। কোমল পানীয়র বদলে পানি বেছে নিন। এক দিনের অনিয়মকে এক মাসের অভ্যাসে পরিণত করবেন না। উৎসব শেষ মানেই আবার আগের রুটিনে ফিরে আসুন।

মনে রাখবেন, জীবনটা মাঝে মাঝে উপভোগ করতে হয়। মাঝেমধ্যে এক বেলা ভুরিভোজের কারণে ওজন একটু বাড়তেই পারে। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওটা কেবল পানি আর লবণের সাময়িক কারসাজি!

লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভলপার, সফটভেঞ্চ

সূত্র: পপুলার সায়েন্স