পাখিরা কেনো দল বেঁধে ‘V’ আকারে ওড়ে

ছবি: উইকিপিডিয়া

ব্যস্ত নাগরিক জীবন থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে তাকানোর অবসর। উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের ফাঁক-ফোঁকড় গলে আকাশের দেখা মেলা ভার! এরপরও যদি কোনো এক অলস বিকেলে এক কাপ চা হাতে ছাদের দিকে তাকিয়ে পাখিদের দল বেঁধে উঠে যাওয়া দেখেন, তাহলে শিরোনামের প্রশ্নটি আপনার মনে উঁকি দিতে পারে। পাখিরা কেনো ‘V’ আকারে ওড়ে?

পাখিরা ইংরেজি বড় হাতের ‘V’ অক্ষরে আকারে ওড়ে। গবেষকরা বলেন, এর প্রধান কারণ হলো শক্তি সংরক্ষণ। এক কথায়, দীর্ঘ দূরত্ব ওড়ার সুবিধার জন্য পাখিরা দল বেঁধে এভাবে ওড়ে।

‘V’ আকারে উড়লে প্রথম পাখিটির পরে আসা প্রতিটি পাখি তার সামনের পাখির ডানার সৃষ্ট বায়ুপ্রবাহের শক্তি ব্যবহার করতে পারে। ফলে ওরা বাতাসের প্রতিরোধ কমিয়ে শক্তি সাশ্রয় করে। সামনের পাখির ডানা ঝাপটানোর ঠিক পেছনে একটি উত্তোলক ঘূর্ণি তৈরি হয়। পেছনের পাখিটি এই ঘূর্ণির ওপরে ওড়ে। ফলে পেছনের পাখি কম শক্তি খরচ করেও উড়তে পারে।

‘V’ আকারে ফিবোনাচ্চি ধারায় উড়তে থাকা প্রতিটি পাখি সামনের পাখির থেকে কিছুটা ওপরে থাকে। ফিবোনাচ্চি ধারা মানে পরের সংখ্যা আগের দুটো সংখ্যার যোগফল। যেমন ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮,…। এভাবে উড়লে বাতাসের বাধা কমে। শরীর আরও মসৃণভাবে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। সামনের পাখির তুলনায় পরের দুটো পাখির শক্তি খরচ কম হয়। এতে পরের সারির পাখিগুলোর শক্তি খরচ হয় আগের সারির পাখির তুলনায় কম। পাখিদের ডানার স্পন্দন একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ফলে পাখিরা দলবদ্ধভাবে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

আরও পড়ুন
পাখিরা ইংরেজি বড় হাতের ‘V’ অক্ষরে আকারে ওড়ে। গবেষকরা বলেন, এর প্রধান কারণ হলো শক্তি সংরক্ষণ। এক কথায়, দীর্ঘ দূরত্ব ওড়ার সুবিধার জন্য পাখিরা দল বেঁধে এভাবে ওড়ে।
ঝাঁক বেঁধে পাখি নীড়ে ফিরছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু গ্রামের একটি বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

‘V’ আকারের কেন্দ্রে যে পাখিটা থাকে, সেটিই মূলত ড্রাইভার বা নেতা। ওই পাখিটির পরিশ্রম হয় সবচেয়ে বেশি। তাই একটি নির্দিষ্ট পাখির যাতে বেশি কষ্ট না হয়, সেজন্য পাখিরা নির্দিষ্ট সময় পরপর নেতৃত্ব বদল করে। এভাবে উড়লে উড়ন্ত অবস্থায় নিজেদের জায়গা বদল করতেও সুবিধা হয়। প্রতিটা পাখিই নির্দিষ্ট সময় পর পর অবস্থান বদল করে। এতে প্রতিটা পাখির সমান পরিশ্রম হয়। এভাবে সবার শেষের পাখিটাও নির্দিষ্ট সময় পর পর মাঝে থাকে বা দলনেতার দায়িত্ব পালন করে। রাতের আকাশে যে পাখিটা নেতৃত্ব দেয়, সেটি নক্ষত্র দেখে ঠিক করে পথ চলে। সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব অন্তত ৪ হাজার কিলোমিটার। পুরোটা পথ ওরা এভাবেই দলগতভাবে ডানা ঝাপটিয়ে চলে।

এভাবে দলগতভাবে না উড়লে একা একটা পাখির পক্ষে বাতাসের চাপ সামলে এত লম্বা পথ অতিক্রম করা সম্ভব নয়।

 সূত্র: সায়েন্স ফোকাস ডটকম

আরও পড়ুন