যেসব পাখি বাসা বাঁধে না

আমগাছের ডালে বসেছে স্ত্রী কোকিলছবি: সাদিক মৃধা

সব পাখি ডিম পাড়ে। কিন্তু সব পাখিই বাসা বাঁধে না৷ বাংলাদেশের গায়ক পাখি হিসেবে সুনাম আছে কোকিলের। এই কোকিল কিন্তু বাসা বাঁধে না। ‘কাকের বাসায় কোকিলের ছানা’ নামে একটা প্রবাদ আছে। সেই প্রবাদের জন্ম এখান থেকেই। কোকিল যাযাবর পাখি। তাই এরা কখনো বাসা বাঁধে না। সময় সুযোগ বুঝে স্ত্রী কোকিল কাকের বাসায় হানা দেয়। কাকের ডিমগুলো খেয়ে সেখানে নিজের ডিম পাড়ে।

বাংলাদেশে কোকিল গোষ্ঠীর আরও দুটি পাখি আছে। এরাও নিজেরা বাসা বানায় না। বউ কথা কউ এবং চোখ গ্যালো। এই পাখি দুটিও বাসা বাঁধে না। এরা সুযোগ বুঝে শালিক, ছাতারে বা শ্যামা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে।

বাসা দখল

পাখিদের মধ্যে বাসা দখলের একটা প্রবণতা আছে। যেমন, টিয়া পাখিরা প্রায়ই কাঠঠোকরাকে তাড়িয়ে ওদের কোটরে বাসা বাঁধে। জলপিপি পাখিরা নিজেরদের মধ্যে লড়াই করে বাসার জন্য৷ এক জলপিপি অন্য কোনো জলপিপির বাসা দেখলে তা দখল করতে যায়। তখন লেগে যায় ধুন্দুমার যুদ্ধ। আগুন্তক পাখিটা জিতে গেলে, সে বাসা দখল করে। বাসার ডিমগুলো খেয়ে নিজের ডিম পেড়ে দেয়। জলপিপির মতো এমন অনেক পাখিই আছে, যারা অন্যের তৈরি বাসা দখল করে ডিম পাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসা নিয়ে লড়াই হয় একই প্রজাতির মধ্যে৷ কারণ, অন্য প্রাজাতির বাসা হয়তো দখলবাজদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।

আরও পড়ুন

সবচেয়ে বড় বাসা

বাংলাদেশের পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাসা তৈরি করে মদনটাক, হাড়গিলা, শামুকখোল, শকুন, ও চিল। শকুন বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। মদনটাক ও হাড়গিলা পাখির বাসা দেখা যায় কালেভদ্রে। তবে শামুকখোল ও চিলদের বাসা দেখা যায় সহজেই। ভুবন চিলের বাসা ঢাকা শহরেই বিভিন্ন বাড়ির কার্নিসে দেখা মেলে। তবে এগুলোর চেয়ে বড় বাসা দেখা যায় শামুখখোলের। বগুড়ার বিহারহাটের বিশাল কয়েকটা বট ও অশ্বত্থগাছে শামুখখোলের বিশাল সব বাসা আছে। নাটোর শমসখলসি গ্রামেও আম ও অশ্বত্থ গাছে আছে শামুকখোলের বাসা। শামুকখোল পাখি আকারে বেশ বড়। এদের ছানারাও নাদুস-নদুস হয়। তাই বিশাল সব বাসা বানায় এই পাখি। এদের বাসা খড় আর শুকনো ডালপালা দিয়ে তৈরি। দেখতে অনেকটা মাচার মতো। একেকটা বাসার ব্যাস ৪-৬ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ মানব শিশুও আরামসে শুয়ে থাকতে পারবে শামুকখোলের বাসায়।

খাবারের আশায় বসে আছে শামুকখোলের ছানা। এক ফাঁকে পাখির ছানা খুনসুটিতে মেতেছে

কখনো আফ্রিকায় বা কেনিয়ার কালাহারি মরুভূমিতে গেলে বিশাল বিশাল সব খড়ের গাদা দেখে চমকে উঠবেন। প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হবে সেটা খড়ের গাদা, গাছ নাকি বিদ্যুতের খুঁটি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাসাটা বানায় সোসিয়েবল উইভার পাখি। এরা বাবুইয়ের আফ্রিকান জাত ভাই। মরুভুমিতে সাধারণত গাছপলা কম দেখা যায়। তবে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা গাছ থাকে। সেসব গাছে বাসা বানায় এই পাখিরা। এরা কিন্তু আকারে অতটা বড় নয়। বরং বাবুইয়ের মতো ছোট পাখি এরা। কয়েক শ পাখি একসঙ্গে বসবাস করে। সবাই মিলে খড় বা শুকনো পাতা জোগাড় করে পুরো গাছটা দখল করে নেয়। তখন গাছটা দেখলে মনে হয় গাছের কাণ্ডওয়ালা বিশাল এক খড়ের গাদা। আসলে এই খড়ের স্তূপের ভেতর অসংখ্য চেম্বার থাকে। প্রতিটা চেম্বারেই পাখিরা বাস বানায়। একটা বাসায় বাস করে বছরের পর বছর।

এই পাখিরা শুধু নিজেদের জন্য বাসা বাঁধে না। ভবিষ্যতে ওদের যেসব ছানাপোনা হবে, সেগুলোও যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য আগেভাগে ব্যবস্থা করে। প্রতিবছরই নতুন খড়কুটো কুড়িয়ে এনে বাসার আকার বাড়ায়। পুরোনো পাখিদের সঙ্গে হাত লাগায় সদ্য বড় হওয়া তরুণ পাখিরাও।

আরও পড়ুন
বাসায় বসে আছে একটি হামিংবার্ড। ছবিটি সোমবার কোস্টারিকার সান হোসে থেকে তোলা। ছবি: রয়টার্স

সবচেয়ে ছোট বাসা

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাসাটা কোন পাখি তৈরি করে বলতে পারেন? উত্তরটা কিন্তু সহজ। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পাখি হলো হামিং বার্ড। তাই সবচেয়ে ছোট বাসাটাও তৈরি করে হামিং বার্ডেরা। এদের বাসার আকার মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার। অর্থাৎ একটা ছোট মার্বেলের মতো। মাকড়সার জাল, ঘাস-লতাপাতা ও শৈবাল ব্যবহার করে এরা বাসা বানায়।

বাসার নিরাপত্তা

আগেই বলেছি, পাখিরা এমন সব ডালে বাস করে যেখানে বিড়াল, সাপ কিংবা শিকারি পাখিরা হানা দিতে পারে না। এ জন্য মাছরাঙা আর সুইচোরা পাখিরা খাড়া পাড়ে বাসা করে। এসব খাড়া পাড় বেয়ে সাপ উঠতে পারে না। বিড়াল এত গভীর বাসায় ঢুকতেই পারে না। বড় বড় শিকারি পাখিদের নজর এড়িয়ে যায়। এরা সরু বাসায় ঢুকতেও পারে না। বটের বা ভারুই পাখিরা মাটিতে বাসা করে। এমনভাবে খড়কুটোর মধ্যে বাসা করে যে আশপাশে হন্যে হয়ে খুঁজলেও চোখে পড়ে না।

আরও পড়ুন